ঢাকায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন ৫-৬ মে

ঢাকা : মুসলিম দেশগুলোর সর্ববৃহৎ জোট ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন আগামী ৫-৬ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ওআইসির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো সম্মেলনের আয়োজন করতে চলেছে। এই সম্মেলন সামনে রেখে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ দিকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন সামনে রেখে এই পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
১৯৮৩ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় আসন্ন এ সম্মেলন থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারে দেশের মাটিতে বড় ধরনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওআইসি সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রটোকল সেবা এবং থাকার জন্য অভিজাত বেশ কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রেখেছে মন্ত্রণালয়। সম্মেলন আয়োজনে এখনও এক মাস সময় হাতে রয়েছে। সম্মেলনের জন্য কমপক্ষে ২২০ গাড়ি লাগবে। এর মধ্যে ১০ কোস্টার, পাঁচটি বাস ও পর্যাপ্ত মাইক্রোবাসের প্রয়োজন হবে। তবে উন্নতমানের ৪০টি দামি গাড়ি এবং ১০ কোস্টার প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ থেকে অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করা হবে।
গত বছর মে মাসে আইভরি কোস্টের আবিদজানে ৪৪তম সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশে ৪৫তম সম্মেলন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ওআইসি ট্রয়কার অংশ এবং আগামী তিন বছরের ওআইসির ৮ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হয়।
এবারের ওআইসির সম্মেলন ঢাকায় হওয়ায় এর গভীর তাৎপর্য রয়েছে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকার্তারা। তারা বলেছেন, সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে ওআইসি। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় যেভাবে সোচ্চার রয়েছে, ঠিক এমন সময়ে এই ধরনের বড় আয়োজন বাংলাদেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। সম্মেলন থেকে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান আরও দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করবেন এবং সেখান থেকেও একটি রেজ্যুলেশন পাস হবে। এতে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আরও সহজতর হবে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ঘনীভূত হবে।
সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ইসলামিক কমন মার্কেটের গন্তব্যে পৌঁছার লক্ষ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ও এফটিএ বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সম্মেলনে উন্নয়ন ও ইসলামি সংহতির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া, বৃহত্তর আন্তঃওআইসি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম প্র্যাকটিস বিনিময়, দারিদ্র্যবিমোচন, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা দমন এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপরে গুরুত্বারোপ করবে বাংলাদেশ।