ঢাকা ও চট্টগ্রামে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকিতে ৩৮৪৯ ভবন

রাজধানী ডেস্ক : ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্তত তিন হাজার ৮৪৯টি ভবন অগ্নি-দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় খুব ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে এক হাজার ৬৬টি, চট্টগ্রামে এ সংখ্যা ৫০। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোয় রয়েছে হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আবাসিক হোটেল, বিপণিবিতান ও গণমাধ্যমের কার্যালয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সর্বশেষ এলাকাভিত্তিক পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ঝুঁকির তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিগগিরই অগ্নি-নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে প্রাণহানি ঘটতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক (ওয়্যারহাউস) ওহিদুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম চালায়। সেখানে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলাও মুশকিল। কারণ সরঞ্জামগুলো বেশ দামিও বটে। তবে পরিদর্শনে যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে, তাদের এ বিষয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ঢাকার এক হাজার ৩০৫টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে মাত্র পাঁচটির আগুন নেভানোর ব্যবস্থা সন্তোষজনক পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৬২২টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬৭৮টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত মার্কেটের মধ্যে কয়েকটি হলোÑ বনানীর ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্স, বনানী সুপার মার্কেট, মধ্যবাড্ডার হাকিম টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, উত্তর বাড্ডার রিজভ্যালি শপিং সেন্টার, গুলশান-২ নম্বরের ল্যান্ডমার্ক শপিং সেন্টার, স্বপ্ন সুপার মার্কেট এবং পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স।
একইভাবে এক হাজার ৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৩টির অবস্থা সন্তোষজনক বলে মনে করেছে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন দল। আর ২৯৫টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭৬৬টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেÑ তেজগাঁওয়ের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক্স, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, মগবাজারের বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল, মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজ, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বনানী মডেল স্কুল ও কারওয়ান বাজারের নর্দান ইউনিভার্সিটি।
বিভিন্ন এলাকার ৪২৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক পরিদর্শন করে ১০৫টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভাটারার ইউনিভার্সাল মেডিকেল হাসপাতাল, মধ্য বাড্ডার মেডিলিংক হাসপাতাল, মেরুল বাড্ডার এশিয়ান জেনারেল হাসপাতাল, বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল, গুলশান-২ নম্বরের শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মগবাজারের রাশমনো জেনারেল হাসপাতাল ও তেজগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোও সব নিরাপদ নয়। ৩৩৬টি হোটেলের মধ্যে ৩০৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ২১টি। এ তালিকায় রয়েছে কারওয়ান বাজারের লা ভিঞ্চি হোটেল, ফার্মগেটের গিভেন্সি হোটেল, বড় মগবাজারের হোটেল রমনা আবাসিক, হোটেল গ্রিন টাওয়ার, মহাখালীর নিউ সৌদিয়া আবাসিক হোটেল, আমতলীর মদিনা আবাসিক হোটেল ও তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণি আবাসিক হোটেল।
চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ২০০ : চট্টগ্রাম মহানগরে ১৫০টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ৫০টিকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। খুবই ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে ২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৭টি বিপণিবিতান ও চারটি হাসপাতাল-ক্লিনিক। ৩৪টি বিপণিবিতান, ৫৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৬টি ব্যাংক ও ২১টি হাসপাতাল-ক্লিনিককে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। মোট ২০৪টি ভবন পরিদর্শন করে এ প্রতিবেদন দেয় ফায়ার সার্ভিস।
যেভাবে চিহ্নিত হয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন : পরিদর্শন ও প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২৪টি পয়েন্ট ধরে তারা ভবনগুলো পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলোÑ কী ধরনের ভবন, আগুন নেভানোর নিজস্ব ব্যবস্থা কেমন, মূল সিঁড়ির পাশাপাশি জরুরি বিকল্প সিঁড়ি আছে কি না, থাকলে তা কতটা প্রশস্ত, ভবনের বেজমেন্ট কত তলা, সেমি বেজমেন্ট আছে কি না, ট্যাংকির পানি ধারণক্ষমতা কত, মূল পাম্প জকি, পাম্প অক্সিলারি, পাম্পের কী অবস্থা, লিফট-ফায়ার লিফট, জেনারেটর কক্ষ ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে কি না, থাকলে সেগুলোর মধ্যে দূরত্ব কতটুকু, আগুন নেভানোর বহনযোগ্য সরঞ্জাম ও ভবনের গ্যারেজ অংশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আছে কি না, দুর্ঘটনা-দুর্যোগের সময় সতর্ক করার জন্য অ্যালার্ম ও বধিরদের সতর্ক করতে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা আছে কি না, ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র, দুর্যোগের সতর্কবার্তা জানানোর উপযোগী প্যানেল বোর্ড, বিশেষ নিরাপত্তাবেষ্টিত কক্ষ, ঢালু সিঁড়ি এবং কর্মীদের আগুন নেভানোসহ দুর্যোগ মোকাবেলার প্রশিক্ষণ আছে কি না।
অবহেলার পরিণতি কী হতে পারে : অগ্নিনিরাপত্তা পরামর্শক ও ফায়ার সার্ভিসের সাবেক উপপরিচালক সেলিম নেওয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত ভবনগুলোয় অগ্নিনিরাপত্তায় যেসব ঘাটতি রয়েছে, তা অবিলম্বে পূরণ করা উচিত। তা ছাড়া প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। পরিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অনেক টাকা লাগে ঠিকই। কিন্তু কম খরচে কিছু সাধারণ সরঞ্জাম যোগ করেও ভবনকে নিরাপদ করা যায়।
তিনি আরও বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে একজন অগ্নিনিরাপত্তা পরামর্শক নিয়োগের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কেউই তা মানেন না। ফলে নির্মিত ভবনগুলোয় আগুনের মারাত্মক ঝুঁকি থেকে যায়।