তফসিলের পর এমপিদের ক্ষমতা নিয়ে বিভক্ত ইসি

রাজনৈতিক ডেস্ক : বিএনপির পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই দাবি করা হচ্ছে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ক্ষমতাসীন দল সে দাবি মানতে নারাজ। তারা সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করার পক্ষে। আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা। এ রকম একটি পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একাংশ তফসিল ঘোষণার পর ভোটের মাঠে এমপিদের ক্ষমতা খর্বের প্রস্তাব নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনার দাবি তুলেছে। তবে এই প্রস্তাব নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনার পক্ষে নন সব কমিশনার। তাদের বক্তব্য হলো, এটা সংবিধান-সংশ্লিষ্ট বিষয়। এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে পড়ে না।

সম্প্রতি দেখা গেছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি একের পর এক নতুন বিতর্কে জড়াচ্ছে। নীতি-নির্ধারণী বিষয় ও সংসদ সচিবালয়ের রুটিন ওয়ার্কসহ প্রায় বিষয়েই নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ বাড়ছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর সাংসদদের ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব নিয়ে গত ৪ অক্টোবর রাতে সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দু-একজন সদস্যের অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছুটা আলাপ-আলোচনা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমানে এমপিরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে যেসব প্রটোকল ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, তা সংবিধান বা নির্বাচনী আইনে উল্লেখ নেই। তাই তফসিলের পর এমপিদের ক্ষমতা খর্বের জন্য নতুন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে নির্বাচনী আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, তফসিলের পর কোনো সাংসদ সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ছাড়া এলাকায় উন্নয়নমূলক কোনো প্রকল্পও নিতে পারবেন না। এ ছাড়া নানা বিধি-নিষেধ রয়েছে। তবে অতীতের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও ইসি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।

ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এমপিদের বর্তমান প্রাপ্য সুবিধা কী রয়েছে, তা মৌখিকভাবে তারা স্পিকারের কাছে জানতে চেয়েছেন। আইন-কানুন পর্যালোচনা শেষে আজকালের মধ্যে স্পিকারের দপ্তর থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মত দেওয়া হতে পারে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, এমপিরা আইনি সুযোগ-সুবিধার বাইরেও অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা বলেন, এমপিরা আইনবহির্ভূতভাবেই বেশির ভাগ সুবিধা ভোগ করেন। আইনে না থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় এগুলো এক প্রকার রীতি হয়ে গেছে।

এ দিকে কমিশনের একাংশ মনে করছে, ভোটের মাঠে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে এমপিদের ক্ষমতা খর্ব করতে হবে। অন্যথায় সংসদ বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বিষয়টি কমিশন সভার এজেন্ডাভুক্ত করে আলোচনা করতে হবে। এই দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে চিঠি দিয়েছে কমিশনের একাংশ। অন্য দিকে, কমিশনের অপর অংশ মনে করছে, সংবিধান ও আইনে যেরূপ বিধান থাকবে, সে অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনে বাধ্য ইসি। এর বাইরে কোনো পদক্ষেপ নিতে যাওয়া ইসির এখতিয়ারবহির্ভূত। সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়টি সাংবিধানিক বিষয়। এটা ইসির এখতিয়ারে পড়ে না। তফসিল ঘোষণার মাত্র এক মাস বাকি থাকতে এমন বিরোধ প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছেন না সিইসি। তাই কমিশন সভা ডাকতেও তিনি কিছুটা সময় নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।