গ্রামবাংলা ডেস্ক : তিন জেলার মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে ৬৮ গডফাদার। আর এ মাদক বিক্রিতে জড়িত ৩০৬ কারবারি। ১২৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সহায়তা করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় কে কিভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক জেলা চট্টগ্রাম ও সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লা এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জেলার কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।
তাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য সহায়তা করছে। তাদের সহায়তা পেয়ে রাজনৈতিক নেতা নামধারী মাদক ব্যবসায়িরা ফেনসিডিল, মদ, বিয়ার, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের ব্যবসা করে অল্প সময়ের মধ্যে বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছে। এতে বলা হয়, গডফাদার, মাদক ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তার কারণে নতুন নতুন মাদকসেবী তৈরি হচ্ছে। অবৈধ মাদকসেবীরা তাদের অর্থের জোগান দিতে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম ও খুনসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। চট্টগ্রাম জেলা ও চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম জেলার ৭৪ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদকের ৩৬ জন গডফাদার এবং মাদক চোরাকারবারে ও সরবরাহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী হিসেবে ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একই প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকার জেলার ১৬ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদকের ৯ জন গডফাদার এবং মাদক চোরাকারবারে ও সরবরাহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী হিসেবে ২৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো অঞ্চলে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা পরিচিত কেউ নন। তবে গডফাদার হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন গডফাদারের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো অঞ্চলে মাদকের গডফাদারের তালিকায় আছেনÑ ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম বাবু, আনোয়ারার উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম, বোয়ালখালীর আহলা করলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামেদুল হক মান্নান, ভুজপুরের বাগান বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুস্তম, সীতাকু-ের সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক সুলেমান সেলিমসহ অনেকেই। মাদক কারবারিদের সহায়তাকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাব ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরিচয় প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় মাদক কারবারি ও গডফাদার : কুমিল্লা জেলার ৮৯ জন মাদক কারবারি অবৈধ মাদক ব্যবসায় জড়িত। এসব মাদক কারবারিদের ১৬ জন গডফাদার এবং মাদক চোরাকারবারে ও সরবরাহে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী হিসেবে ৪৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জড়িত রয়েছে। কুমিল্লা জেলায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা পরিচিত কেউ নন। তবে গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করা ১৬ জনের বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন গডফাদারের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো তালিকায় গডফাদার হিসেবে বুড়িচং উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন, ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মাদক কারবারিদের সহায়তাকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাব ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত আছে। এ ছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর কিছু সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরিচয় প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার মাদক কারবারি ও গডফাদার : ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার ১২৭ জন মাদক কারবারি অবৈধ মাদক ব্যবসায় জড়িত। এসব মাদক কারবারিদের সাতজন গডফাদার এবং মাদক চোরাকারবারে ও সরবরাহে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী হিসেবে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জড়িত রয়েছে। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা পরিচিত কেউ নন। তবে গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করা সাতজনের বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন গডফাদারের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো তালিকায় গডফাদার হিসেবে আখাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হান্নান ভূঁইয়া স্বপন এবং বায়েক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মাদক কারবারিদের সহায়তাকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাব ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত আছে। এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরিচয় প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সহসাই এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে।