থাপ্পড়ের বাংলাদেশ কান ধরে ওঠবস?

মোস্তফা কামাল : প্রবীণ প্রকৌশলী ইনামুল হকের রাজনীতির শখ মিটেছে তো? শইলডা এখন ভালো? মনডা? ছাত্রজীবনে দূর্দান্ত মেধাবী ইনামুল হক কর্মজীবনেও ছিলেন উচ্চাসনে। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন। হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থায় মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতা-অভিজ্ঞতার সঙ্গে। সততার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ছিলেন সহকর্মীদের কাছে। শেষ বয়সে এসে কেন ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্য থাপ্পড় খেলেন? তাও মেহেরপুরের এক জংলী, গণ্ড-মুর্খ্যরে?
রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা কর্মজীবনে নানা দুর্নীতি-দুরাচার-অনাচারে বিরক্ত হতেন। ভাবনায় ছিল অবসর জীবনে এসে রাজনীতি করবেন। দেশ বদলাবেন। তবে, জেঁকে বসা কোনো প্রচলিত রাজনৈতিক দলে নয়। প্রগতিশীল এবং দেশ গঠনে আগুয়ান কোনো দলে। সেই ধরনের কাউকে না পেয়ে নিজেই তৈরি করলেন ‘সর্বজন বিপ্লবী’ নামে একটি সংগঠন। নিজেই পোস্টার-লিফলেট ছাপেন। নিজেই বিলি করেন। দিল্লির আম আদমীর কেজরিওয়াল হবেন?
গেল ২৪ ডিসেম্বর হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে। রাষ্ট্রের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ব্যক্তি এসে আচ্ছা মতো কষে দেন একটা থাপ্পড়! স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হঠাৎ এক ব্যক্তি তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। মারধরের পর ওই ব্যক্তি বলছিলেন, ‘দেশ ধ্বংস করছে মানে…। দেশ কই ধ্বংস হইছে? হ্যাঁ…?’
ইনামুল হককে থাপ্পড় মারা ব্যক্তি বড়-সড় কেউ নন। নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল ভক্তকে চড়-থাপ্পড় মেরে কান ধরে ওঠবস করানো কোনো মাননীয়ও নন। তিনি মেহেরপুরের গাংনি থেকে আসা কৃষক লীগের পাতি নেতা বনি আমিন। ঢাকা এসেছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে। ওখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন এক বুড়ো লোক কীসব বলছে? সরকারের সমালোচনা করছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ উদ্ধারের কথা পর্যন্ত বলছে। তা কি সহ্য হয় এই পাণ্ডার? তাই কানে-গালে কষে একটা চটকোনা। এদ্দূরই। কানে ধরে কি ওঠবস করিয়ে কোনো মুচলেকা নিয়েছে ইনামুল হকের কাছ থেকে?
না, সেই ধরনের কিছু করেনি। চাইলে তো করতেই পারতো। এছাড়া, কেউ তাকে বাধা দিয়েছে? কৃষক লীগের এই খুচরা পতঙ্গটাকে কেউ জিজ্ঞেস করেছে, এনামুল হকের মতো একজন সম্মানিতজনকে এভাবে মারলেন কেন? সেই প্রশ্ন করেনি কেউ। তাকে রক্ষায় এগিয়েও আসেনি। বরং আশপাশে যে দুয়েকজন ছিলেন, তারাও দূরে সরে গেছেন। ইহাই তো বাংলাদেশ? ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইলে কী হয়েছে? নারায়ণগঞ্জের ওই শিক্ষককে মারধর, কান ধরে ওঠবস করানোতেও কিছু হয়েছে? কেউ রাখে শ্যামল মাস্টারের খবর? তিনি বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন- কে জানে? কোনো ফলো আপ সংবাদও আছে গণমাধ্যমে?
ইনামুল হক জীবনে যে সব পদ-পদবীতে ছিলেন হাজার-হাজার কোটি টাকা লুটপাট করলে কিছু হতো? কাড়ি-কাড়ি টাকা বিদেশ পাচার করলেও কেউ থাপ্পড় কেন, একটি পশমও হিলাতে পারতো? বা সেই চেষ্টাও হতো? কেউ অসম্মান করতো, না স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতো এই প্রকৌশলীকে? কৌশল না জানলে এমনই হয়- আজীবন সততায় ঋদ্ধ একজন এনামুল হকের কি তা বুঝে এসেছে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।