
ঠিকানা রিপোর্ট : আগামী ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার থ্যাঙ্কস গিভিং ডে বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন দিবস। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দিবসটি পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ৪র্থ বৃহস্পতিবার আমেরিকায় এবং অক্টোবরের দ্বিতীয় সোমবার কানাডায় সরকারিভাবে এ দিনটি উদযাপিত হয়। এ দিনটিকে অনেকে ‘দ্য টার্কি ডে’ বলে থাকেন। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একটা অনুষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তবে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দিন দিন গুরুত্ব এবং উদযাপন দুটোই বাড়ছে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র।
থ্যাংকস গিভিং ডে’র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবসহ সবাই এক হয়ে সবার জীবন এবং দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। খাবারের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। টার্কি দেখতে ময়ূরের মতো বড় সাইজের বনমোরগ-এর মতো।
দিবসটিতে ধনী-গরীব সবাই মেতে ওঠেন ঐতিহ্যবাহী টার্কি ভোজে। পারিবারিকভাবে প্রতিটি ঘরেই চলে টার্কি লাঞ্চ আর ডিনার। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবার টার্কি পার্টির আয়োজন করে থাকে। গত বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কোথাও কোথাও ঘরোয়াভাবে পার্টির আয়োজন করা হলেও প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। তবে এ বছর বিভিন্ন স্থানে টার্কি পার্টি হবে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলো টার্কির অর্ডার পাচ্ছে।
বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিকরা জানান, এ বছর বেশকিছু টার্কি পার্টির অর্ডার পাওয়া গেছে। আগাম অর্ডার ছাড়াও বৃহস্পতিবার রেস্টুরেন্টে টার্কির মাংস বিক্রি হবে। একটি পূর্ণ টার্কির দাম ১২০ থেকে ১২৫ ডলার হতে পারে। তবে করোনা মহামারীর পর টার্কির দাম প্রকার ভেদে কিছুটা বেড়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’তে প্রতি বছর নিউইয়র্কে প্যারেড বের করে সুপার স্টোর মেসিজ। প্রতি বছর নিউইয়র্কের সাড়ে ৩ মিলিয়নেরও বেশি লোক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ মিলিয়ন লোক এই প্যারেড দেখেন। তারা সকলেই দৈত্যাকার বেলুন, এক ধরণের ভাসমান, আশ্চর্যজনক পারফরম্যান্স এবং আরও অনেক কিছু দেখার জন্য টিভি খুলে বসেন। বৈশিষ্ট্যযুক্ত পারফর্মারদের সঙ্গে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেরা মার্চিং ব্যান্ড এবং পারফরম্যান্স গ্রুপ।
থ্যাংকস গিভিং ডে উৎসব হিসেবে পালিত হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিষাদময় ইতিহাস। ১৬২০ সালে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস একটি চার্চ নির্মাণ করেছিলেন। তিনি সবাইকে ওই চার্চে রাজার প্রথানুসরণ করতে বাধ্য করতে শুরু করেন। কিন্তু অনেক ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানই এর বিরোধিতা করেন। তারা রাজার চার্চে না গিয়ে সাধারণ চার্চেই ধর্মচর্চা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু এক সময় তাদের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিরা তখন বাড়িঘর বিক্রি করে হল্যান্ডে পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানেও তারা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন। এরপর তারা ‘মে ফ্লাওয়ার’ নামের একটি জাহাজে করে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ওই জাহাজে ১০২ জন যাত্রী ছিলেন বলে জানা যায়। তাদের বলা হতো ‘পিলগ্রিমস’। ওই দলটিতে ৭০ জন নারী ও পুরুষ ছিলেন। বাকিরা ছিল শিশু। দলটির সবাই উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন বলে জানা যায়। জাহাজে তাদের পানি ও খাবারের সংকটসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। ডিসেম্বরে তীব্র শীতের মধ্যে তারা ম্যাসাচুসেটসে (বর্তমান বস্টন) পৌঁছান। দলটিতে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক ও বিচারক থাকলেও কর্মী শ্রেণির মানুষ ছিল না। ফলে তারা ঠিকঠাকভাবে বাড়িঘর বানাতে পারেননি বলে জানান ইতিহাসবিদরা। শীতের তীব্রতায়, অসুস্থতায় অনেক পিলগ্রিমসই মারা যান। শেষ পর্যন্ত দলটির মাত্র ৫৪ জনই বেঁচে ছিলেন। তাদের বসতির কাছাকাছিই ছিল রেড ইন্ডিয়ানদের গ্রাম। তাদের কাছ থেকেই চাষবাস ও কাঠ কেটে বাড়ি বানাতে শিখে নেয় পিলগ্রিমসরা। এরপর গ্রীষ্মে তারা প্রচুর ফসল ফলাতে সক্ষম হয়। এরপরই মূলত তারা সবকিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে একটি উৎসবের আয়োজন করে। ওই উৎসবে তারা রেড ইন্ডিয়ানদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, উৎসবে রেড ইন্ডিয়ানদের ৯০জন অংশগ্রহণ করেছিলেন। টানা তিনদিন ধরে চলেছিল উৎসব।
ইতিহাসবিদরা জানান, ১৬২১ সালের ২৬ নভেম্বর ছিল প্রথম থ্যাংকস গিভিং ডে। এরপর থেকে পলিমাউথ উপনিবেশবাদীরা এবং রেড ইন্ডিয়ানরা একে শরৎকালীন উৎসব হিসেবে পালন করতে থাকেন। তখন কোন নির্দিষ্ট দিনে উৎসবটি পালিত হতো না। নিজেদের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী তারা বছরের একটি দিনকে বেছে নিতেন। তবে ধীরে ধীরে নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবারেই উৎসবটি পালনের প্রথা শুরু হয়।
১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একটি জাতীয় ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা দিবস উদযাপন করার আহ্বান জানান। তিনি নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংস গিভিং ডে’ হিসাবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন।
‘থ্যাংকস গিভিং ডে’র পরের দিনকেই ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ বলা হয়ে থাকে। এ দিনের জন্যও মানুষের অপেক্ষার কমতি নেই। এক বছর ধরেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন আমেরিকার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষজন কম দামে ভালো একটা কিছু কেনার জন্য দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই টিভি ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় তাদের পণ্যের মূল্যহ্রাসের তালিকা। শতকরা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মুল্যহ্রাস করা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির। তবে এই দিনে অনেকের চাহিদা ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য। এর মধ্যে টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, আইফোন, আইপ্যাড ইত্যাদি দ্রব্যের প্রতি মানুষের বেশি চাহিদা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে দোকানের সামনে লাইন ধরে ভোর ৬টায় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন দোকানে প্রবেশের জন্য। কিন্তু প্রতিবছরই ঘটে ব্যতিক্রম ঘটনা। ওইদিন রাত ১২টার পরিবর্তে রাত ৮-৯টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান হাজার হাজার মানুষ।
এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটির হালাল চিকেন বিতরণ : এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে হালাল চিকেন বিতরণ করা হয়েছে। গত ১৮ নভেম্বর শুক্রবার এস্টোরিয়ার আল-আমিন মসজিদ প্রাঙ্গনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
থ্যাকংস গিভিং ডে উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রায় তিন শতাধিক মানুষের মাঝে এই হালাল চিকেন বিতরণ করা হয়। কাউন্সিলওমেন জুলি ওনের সৌজন্যে এই হালাল চিকেন বিতরণ করা হয়। এই সময় কাউন্সিলওমেন জুলি ওন ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুইন্স টুগেদারের সিইও জোনাথন ফারগাস, শাহাবুদ্দিন, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির উপদেষ্টা এমাদ চৌধুরী, দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী, সভাপতি সোহেল আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট কয়েস আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ এমদাদ রহমান তরফদার, অরগানাইজিং সেক্রেটারি মইনুল হক চৌধুরী, সোসাল ওয়ার্কার সেক্রেটারি সাব্বির আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুবেল আহমেদ, মাসুম পাটোয়ারী, সদস্য সামসুল ইসলাম, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
আটলান্টিক সিটিতে বিএএসজের খাদ্য সহায়তা : নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে যৌথভাবে পালিত হলো খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি। ২১ নভেম্বর সোমবার ‘খাদ্য সহায়তা’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন আটলান্টিক সিটির মেয়র মার্টি স্মল। আটলান্টিক সিটি হলের সামনের খোলা স্থানে দুপুর বারোটা থেকে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিওিতে এ খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের আয়োজন করে আটলান্টিক সিটি নগর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সি।
আটলান্টিক সিটির মেয়র মার্টি স্মল তাঁর বক্তব্যে কমিউনিটির সেবায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথজার্সির সক্রিয় ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই সময় নগর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাবৃন্দ, আটলান্টিক সিটি স্কুল বোর্ড সদস্য সুব্রত চৌধুরী, বিএএসজে নেতৃবৃন্দসহ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আটলান্টিক সিটির বিভিন্ন কমিউনিটির প্রায় তিন শতাধিক মানুষ এই খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করেন।