ঠিকানা রিপোর্ট : আমাদের সবারপ্রিয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এক গভীর ক্রান্তিকাল চলছে। চলছে রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ, দূর্বৃত্তায়ন। ভালো মানুষরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় ধীরে ধীরে তা অসৎ মানুষদের কব্জায় চলে যাচ্ছে। ভিন্নমত বা মুক্ত চিন্তার নামে দেশে ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়িয়ে মহলবিশেষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে। তবে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শেষ পর্যন্ত শুভ শক্তির কাছে অশুভের পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়।
এমনই সব কঠিন ও বাস্তব উচ্চারণ করে উপস্থিত সবাইকে চমকে দেন বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্ক সফরে আসা খ্যাতিমান কলামিস্ট-সাংবাদিকরা।
গত ১৪ মে, সোমবার, সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার একটি মিলনায়তনে উন্মুক্ত আড্ডায় বসেছিলেন স্বদেশ ও প্রবাসের সাংবাদিক-কবি-লেখক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। আর এ জমজমাট আড্ডার আয়োজক-সঞ্চালক ছিলেন প্রবাসের আরেক খ্যাতিমান সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকতা, সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভক্তি আর দলকানা সাংবাদিক ছাড়াও সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি, ‘জাতির জনক’, মহান মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা নাকি, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বিষয়সহ প্রবাসীদের অবদান নিয়ে করণীয় ও ভূমিকা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট-১ উৎক্ষেপণ বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের গুম-খুন-হত্যার বিষয়ও আড্ডায় উঠে আসে।
প্রত্যেকের বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে গভীর দেশপ্রেম, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে কারো গভীর হতাশা। তারা খুঁজে বের করতে চেয়েছেন এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ। যেহেতু এটি কোনো ফর্মাল সভা ছিলো না, তাই দল-মতের উর্ধ্বে উঠে উপস্থিত সবাই বিনা দ্বিধায় ব্যক্ত করেন যার যার মত-দ্বিমত।
প্রাণবন্ত এই আলোচনায় প্রারম্ভিক বক্তব্যে পীর হাবিবুর রহমান ও নঈম নিজাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, লাল সবুজের পতাকা, গণতন্ত্র, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এসব প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। আপোষ হতে পারে নাÑএসব সেটেল্ড বিষয়। তারা বলেন, আমরা সত্যকে সত্য বলার চেষ্টা করছি। দলমতের উর্ধ্বে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব অক্ষুণœ রাখার চেষ্টা করছি। তারপরও দেশ ও জাতি আর মানুষের স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কখনও কখনও আপোষ করছি। তারা বলেন, ‘দল কানা সাংবাদিকতা’ পেশার পাশাপাশি দেশ ও জাতির ক্ষতি করছেন। সাংবাদিকরা বিভক্ত হচ্ছেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন বিভক্ত হচ্ছে-যা কারোরই কাম্য নয়।
দেশের খ্যাতিমান কলামিস্ট-সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান যে গোমড়া মুখের আড়ালে একজন ‘রসিক’ মানুষ, এদিন তা বুঝতে পেরে উপস্থিত সবাই বিমোহিত-হতবাক হয়েছেন। তার প্রমাণÑ পীর হাবিব হাসতে হাসতে বাংলাদেশের আরেক দিকপাল সাংবাদিক নঈম নিজামকে ছদ্ম-আক্রমণ করে বলেন, আমরা দু’জন বহুদিন থেকে বন্ধু। একসাথে একই হাউসে সাংবাদিকতা করেছি। বলতে দ্বিধা নেই, আমার থেকে তার স্ত্রীভাগ্য অনেক ভালো। কেননা, তিনি তার স্ত্রীর উপস্থিতিতেই বান্ধবীদের জড়িয়ে ধরতে পারেন, যা ইচ্ছে থাকলেও স্ত্রীর ভয়ে আমি সাহস করতে পারি না।
এরপর পীর হাবিব দেশের বর্তমান হাল-হকিকত সম্পর্কে মত প্রকাশ করে বলেন, আগে দেখতাম উন্নত ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করে আমেরিকায় আসতেন। আর এখন দেখা যাচ্ছে, যারা এদেশে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা দেশে ফিরে গিয়ে ব্যাংক-বিমা, টিভি-মিডিয়ার মালিক, রাজনৈতিক নেতা, দেশের হর্তাকর্তা বনে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, গত ৪৭ বছরে ধীরে ধীরে হলেও বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। তবে স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন দেশটি স্বৈরশাসকের কবলে থাকায় আশানুরূপ সমৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে আইনের শাসন খুবই জরুরি। দেশে সঠিকভাবে আইনের শাসন থাকলে দেশের উন্নয়ন আরো বেশি হতো। মনে রাখতে হবে, দেশে আইন কার্যকর থাকলে সঙ্কট সৃষ্টি হয় না। আইনের শাসন আর উন্নয়নকে একসাথে চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন বলেন, আমরা হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি। তাই বাংলাদেশ, স্বাধীনতা, পতাকার নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের নামে কোনো ধরণের অপপ্রচার মেনে নিতে পারি না। তারপরও বলবো, দেশে মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির ক্ষেত্রগুলো আরো বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের সবার প্রিয় বাংলাদেশ সহজেই অগ্রগতির পথে আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। এটি রাষ্ট্রের সম্পত্তি, কোন ব্যক্তির নয়। তিনি বলেন, না জানার কারণেই সরকারের প্রতিনিধি দলের সদস্য নিউইয়র্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মিডিয়ার স্বাধীনতায় বদ্ধপরিকর বলেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে সবাই সব সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারছেন। সংবাদপত্রেও গুম, খুন, হত্যার খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদকম-লীর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএম শাহীন বলেন, প্রবাসীরাও বাংলাদেশ সরকারের অংশ। ড. একে আব্দুল মোমেন, ড. শাজাহান মাহমুদ, আশরাফুল আলম খোকনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক প্রবাসীই এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদান রাখছেন। পাশাপাশি অনেক প্রবাসী সরকারের নানান সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেন, আবার অনেকে এ সুযোগের অপব্যবহার করছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি প্রবাস থেকে ৫০০ অভিজ্ঞ প্রবাসীকে দেশে নিয়ে সরকার পরিচালনায় কাজ করার সুযোগ দেয়ার দাবিও জানান।
মনোমুগ্ধকর এ আড্ডায় আরো যোগ দিয়েছিলেন- প্রবীণ সাংবাদিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমদ, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের, প্রবীণ ফটো সাংবাদিক লুৎফর রহমান বীনু,সাহিত্যিক-লেখক আহমাদ মাজহার, দৈনিক মানব জমিন-এর উপসম্পাদক মনির হায়দার, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, উপদেষ্টা সম্পাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু, সাপ্তাহিক বর্ণমালা’র প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাংবাদিক মাহমুদ খান তাসের, মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী রেখা আহমদ ও লুৎফুন্নাহার লতা, সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর, মানবজমিনের সাবেক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নওশাদ হোসেন, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট সুব্রত বিশ্বাস, সাবেক ছাত্রনেতা ও লেখক-কলামিস্ট কামাল হোসেন মিঠু, সাংবাদিক-কলামিস্ট শিতাংশু গুহ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ, নজরুল ইসলাম, ঠিকানা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক জাবেদ খসরু, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসার, ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী, জনতার কণ্ঠ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সোসাইটির নেতা আহসান হাবীব, বোস্টন বাংলার সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম খোকন, দৈনিক ইত্তেফাক-এর বিশেষ প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম, এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক কানু দত্ত, টাইম টেলিভিশনের শিবলী চৌধুরী কায়েস, বাংলা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ও বার্তা সংস্থা ইউএনএ’র সম্পাদক এবিএম সালাহউদ্দিন আহমেদ, রাজনীতিক নূরে আলম জিকো, চ্যানেল ৫২-এর প্রেসিডেন্ট এনাম চৌধুরী, সিইও ফারাহ হাসিন, আলোকচিত্রী সাংবাদিক এ হাই স্বপন, আজকাল-এর বাণিজ্যিক প্রধান আবুবরক সিদ্দিক, সাপ্তাহিক আওয়াজ সম্পাদক শাহ আহমেদ সাজ, ঢাকার বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার জিয়াউল হক সবুজ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট অসিত চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, গীতিকার ইশতিয়াক রূপু, সাংবাদিক মনিজা রহমান, কবি রওশন হাসান, টিবিএন ২৪-এর সাংবাদিক সুলতানা রহমান, প্রথম আলো নিউইয়র্কের বিশেষ প্রতিনিধি সাহেদ আলম, বাংলাদেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মো. আবুল কাশেম, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট জীবন শফী, রূপসী বাংলার সাংবাদিক শাহ জে চৌধুরী, সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটন, শরীফুল হক মঞ্জু, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ, সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন জয় প্রমুখ।