বিশেষ প্রতিনিধি : এবারও ভারতের ছকেই এগোচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনী এক্সপ্রেস। এর বাইরে যাওয়ার সাধ্য নেই কোনো দলেরই। বরং এ ছকে ঢুকে সুবিধা নেওয়ার প্রতিযোগিতা বড়-ছোট দলগুলোর। এক নেতার একদল ধরনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও দিল্লির নেকনজরের চেষ্টায় কমতি দিচ্ছেন না। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে ভারত সফর করে এসেছেন। কেউ কেউ সফরের সুযোগ খুঁজছেন। বড় দুই দল ছাড়া অন্যরাও নিশ্চিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো প্রকাশ্যে না হলেও আগামী নির্বাচনও হবে ভারতের মর্জিমাফিকই। এর আলামত স্পষ্ট। শুধু নির্বাচন নয়, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা-যোগ্যতা বৃদ্ধির বিষয়ও তদারকি করছে ভারত। প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া, সফর বিনিময় আগের চেয়ে আরো বাড়ানো হয়েছে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্রের ৭৮ শতাংশ জোগানদারই ভারতের প্রতিপক্ষ চীন। আবার সামরিক বিশ্লেষকেরা বলে থাকেন, যেকোনো দেশের সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনায় প্রতিবেশী দেশকে যুক্ত করা ঝুঁকিপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিরোধের মধ্যেও শেখ হাসিনার সরকার এ ক্ষেত্রে বানরের পিঠা ভাগের মতো ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টায় কম-বেশি সফল।
চীন থেকে সাবমেরিন কেনায় ভারত কষ্ট পেলেও নানাভাবে তা পুষিয়ে দেওয়া হয়েছে। এশিয়ার অন্য বৃহৎ শক্তি চীন-জাপানের সঙ্গেও সম্পর্ক নষ্ট হয়নি। আবার রাশিয়ার সঙ্গেও সহযোগিতা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকেও নানা ইস্যুতে আয়ত্তে রাখা হচ্ছে। বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর এর বিরোধিতা করার বাস্তবতা নেই। ভারতীয় সার্বক্ষণিক তদারকির কূটচালে তাদের কাবু করে ফেলেছে সরকার। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্কের কিছু কিছু দিক তাদের তাজ্জবও করেছে। এর মধ্যেই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২২ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ভারত যাচ্ছে একটি প্রতিনিধিদল। তারা দেশে ফিরবে ২৪ এপ্রিল। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ফেরার পর যাবে বিএনপির প্রতিনিধিদল। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদলটি। বাস্তবতাদৃষ্টেই দিল্লির প্রতি সবার এমন আত্মসমর্পণ। শেষ পর্যন্ত দিল্লি থেকে দুই পক্ষকে সমঝোতার পয়গামও আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আশপাশে ভাগীদার হিসেবে জাতীয় পার্টিকে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন এরশাদও। ভারতীয় চালে লন্ডন থেকে তৎপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও।
এর অংশ হিসেবে তারেক রহমান সম্প্রতি এরশাদের ব্যাপারে নমনীয়। এ সুযোগটা নিতে চাচ্ছেন এরশাদও। সম্প্রতি তিনি সরকারের কাছে এরশাদ ৭০ আসন ও ১০ মন্ত্রিত্বের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি মূলত বিএনপির কাছে তার বার্তা। লন্ডনে তারেকের সঙ্গে দলীয় অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এরশাদের ছোট ভাই জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আবার সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরী, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম রবের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারেক রহমান। জানা গেছে, পুরো ছকটাই ভারতের বাতলে দেওয়া। এর মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলেরই একটা মুরব্বিয়ানা কব্জায় নিয়ে ফেলেছে। যার জেরে ভারতকে উপেক্ষা করে বা ভারতের বিপক্ষে গিয়ে কোনো দলেরই এগোনোর পথ থাকছে না। বরং দিল্লিকে সন্তুষ্ট রাখার প্রতিযোগিতাই আরো জমে উঠছে। এ টেক্কায় সবাইকে ছাড়িয়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মতো কূটচালেও সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে বাকিদের অবস্থা ¯্রফে অনুসারী বা প্রতিযোগীর মতো। শেখ হাসিনা নিশ্চিত ভারতের মোদি সরকারও শেষ পর্যন্ত ৫ জানুয়ারির মতো মনমোহন সরকারের ভূমিকাই নেবে।