ঢাকা অফিস : আসামি না হয়েও দুর্নীতির মামলায় পাটকলকর্মী জাহালমের তিন বছর কারাভোগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে গা বাঁচানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে র্দ্নুীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই তাদের তদন্ত কর্মকর্তারা প্রথম অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের দেয়া তথ্য-উপাত্ত আমলে না নেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালমের জামিন আদেশের পর এ বিষয়ে সবিস্তার ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেয় আদালত। সে সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য চার সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন, যাতে সাড়া দিয়েছিল আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য হলফনামা আকারে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে দুদক। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত পাঁচটি ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করারও আবেদন করেছে দুদক।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে ‘আবু সালেক’ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদেও ভুলে (!) সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের ‘জাহালমকে’।
প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক আইনজীবী বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমেই তথ্য-উপাত্ত পেয়ে আমরা অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। ব্যাংকের অফিসিয়ালরাই তাকে (জাহালমকে) আইডেন্টিফাই করেছে। আমরা সে কথাগুলো এফিডেবিট ইন ফ্যাক্টসে (ঘটনার বর্ণনা বা ব্যাখ্যা হলফনামা আকারে) দাখিল করেছি।
এ ঘটনায় দুদর দায় এড়াতে চাইছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক না। আপনারা যেহেতু জিজ্ঞেস করছেন তাই বলছি, এ ঘটনায় দুদকের দায় কতটুকু কিংবা অমার দায় আদৌ আছে কি না- সেটা আদালতই নির্ণয় করবে। কারণ আমি পাবলিক ডকুমেন্টের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে কাজ করেছি। সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩১ ধারায় বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি যদি ‘সরল বিশ্বাসে’ কাজ করে থাকি তাহলে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এখানে আমার দায় কতটুকু সেটা নির্ণয় করবে আদালত। এ কারণে আদালতকে আমরা বলেছি, এই ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করে ব্যাংকসহ আমাদের কথা একইসাথে শোনেন।
তাহলে কি জাহালমের ঘটনায় দুদক দায়মুক্তির পথ খুঁজছে- এমন প্রশ্নে দুদক আইনজীবী বলেন, অবশ্যই না, অবশ্যই না। আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, সে আদেশটা আমরা পালন করছি। মনে রাখতে হবে, ব্যাংকের রিপোর্টের ভিত্তিতেই এফআইআর, অনুসন্ধান, চার্জশিট হয়েছে। দুদকের স্ব-উদ্যোগে যদি এটা হতো, তাহলে এই প্রশ্নটির যুক্তি ছিল। যেহেতু ব্যাংক আমাকে ডকুমেন্ট দিয়েছে এবং ব্যাংকের দেয়া ডকুমেন্টের উপর ভিত্তি করে আমি সব করেছি, এখন আদালত নির্ণয় করবে আমার দায় আছে কি না এবং থাকলেও কতোটুকু।
জাহালমকে জেল খাটানোর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত চিহ্নিত : টাঙ্গাইলের জাহালমকে ভুলভাবে (!) তিন বছর জেল খাটানোর ঘটনার মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোনালী ব্যাংকের কর্মচারি মাইনুল ওই কেলেঙ্কারির ঘটনা সাজান বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।