দুদকের ভয়ে

রাজধানী ডেস্ক : বছরের পর বছর দুটি পাজেরো জিপ ব্যবহার করেছেন কর্মচারী সংসদের (সিবিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একটি গাড়ির পেছনে প্রতি মাসে লাখ টাকার জ্বালানি খরচ ব্যাংকের। আবার গাড়ি মেরামতের নামেও ব্যাংকের ব্যাপক খরচ। ২০১৮ সালে একটি গাড়ি মেরামতের খরচই হয়েছে ৮ লাখ টাকা। এভাবে বছরের পর বছর গাড়ি ব্যবহার করেছেন তারা, আর এর যাবতীয় খরচ জোগান দিয়ে গেছে ব্যাংক।

সভাপতি নজরুল ইসলাম এ ঘটনা রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাড়ি দু’টি ব্যবহার করছেন ব্যাংকটির সিবিএ সভাপতি খোন্দকার নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন। যদিও ব্যাংকের নিয়মে তারা নিয়মিত গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। আবার ব্যাংকের নথিপত্রে তাদের নামে কোনো গাড়ি বরাদ্দও নেই। ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। তবে সিবিএ নেতাদের গাড়ি ব্যবহার বন্ধে কেউই উদ্যোগ নেননি।

সিবিএ নেতাদের সরকারি গাড়ি ব্যবহার বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উদ্যোগ নেওয়ায় এবার ভয় পেয়েছেন সিবিএর এই দুই নেতা। এক সপ্তাহ আগে থেকে ব্যাংকের পরিবহন পুল থেকে তারা আর গাড়ি বের করেননি। আর এ সুযোগেই গাড়ি দুটি কুমিল্লা ও খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। শুধু গাড়ি ব্যবহার নয়, তাদের ব্যাংক হিসাবে লাখ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলনের তথ্যও পাওয়া গেছে।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত অবশ্য বলেন, “সব ব্যাংকেই সিবিএ নেতারা গাড়ি ব্যবহার করেন। এটা অনেক দিনের সমস্যা, বলা যায় ‘ওপেন সিক্রেট’। এসব থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন যে পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনা পর্ষদ দায়িত্বে থাকে, সিবিএ নেতারা তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই গাড়ি-সুবিধা ভোগ করে থাকেন।

সূত্র জানায়, অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম)) পর্যায়ের সব কর্মকর্তা অফিসে আসা-যাওয়ার জন্য নিয়মিত গাড়ি পান না। তাদের দৈনিক ভিত্তিতে গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ব্যাংকটির সিবিএ সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন ৫ বছরের বেশি সময় ধরে পাজেরো গাড়ি ব্যবহার করেছেন। সিবিএ সভাপতি ব্যাংকটির অ্যাটর্নি সহকারী ও সাধারণ সম্পাদক কেয়ারটেকার পদে রয়েছেন।

সানাউল্লাহ সাকিব ব্যাংকটির পরিবহন অফিসের তথ্যানুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের সিবিএ সভাপতি ব্যবহার করেন পাজেরো স্পোর্টস কার, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৭২৫৩। আর সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন ব্যবহার করেন পাজেরো জিপ, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৭২৫২। এসব গাড়ি তারা সার্বক্ষণিক ব্যবহার করেন, যার সব খরচ বহন করে ব্যাংক।

শুধু গাড়ি ব্যবহার নয়, গাড়ি মেরামতের নামেও তারা ব্যাংক থেকে বের করেন বড় অংকের টাকা। চলতি বছরে একটি গাড়ি মেরামতে ব্যাংকের খরচ হয় ৮ লাখ টাকা, যা ব্যাংকের যেকোনো গাড়ির মেরামত খরচের চেয়ে বেশি। আর গত জানুয়ারিতে একটি গাড়ির পেছনে ৮৬ হাজার টাকার তেল খরচ হয়। এত টাকার তেল ও মেরামত খরচ আদৌ হচ্ছে কি না, তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।