দুধ পেপটিক আলসারের ব্যথা কমায় না

সেদিন এখন যাই যাই করছে, যখন ডাক্তার পেপটিক আলসারের রোগীকে দুধ পান করতে বলতেন ব্যথা কমানোর জন্য। একসময় ধারণা করা হতো, দুধ পেপটিক আলসার থেকে সৃষ্ট ব্যথা ও অস্বস্তি লাঘব করে। এখন সেই ধারণা আর নেই, বরং পেপটিক আলসারের রোগীকে দুধ পান করানোর ব্যাপারে উল্টো ধারণা পোষণ করা হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ প্রকৃতপক্ষে পেপটিক আলসারের উপসর্গকে আরো তীব্র করে তোলে গ্যাস্ট্রিক এসিডের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে। পাকস্থলী থেকে এই গ্যাস্ট্রিক
এসিড নিঃসরিত হয়ে থাকে।
অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ পেপটিক আলসার নিরাময়কারী ওষুধের বিপরীতে কাজ করার কারণে আলসার সেরে ওঠার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। আবার অনেকের ধারণা, মশলাজাতীয় খাবারে আলসারের সমস্যা বাড়ে। এই ধারণাটিও সবার বেলায় প্রযোজ্য নয়। মশলা জাতীয় খাবার খেলে কারো যদি পেটে জ্বালাপোড়া করে সেটা তার নিজস্ব সমস্যা। সবার ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার কথা নয়। যাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হয় তারা তা এড়িয়ে চলতে পারেন। পেপটিক আলসারের জন্য শুধু খাবারকেই দায়ী মনে করেন অনেকে। শুধু খাবারকে পেপটিক আলসারের জন্য দায়ী করা যাবে না। পেপটিক আলসার হওয়ার পেছনে অনেক বিষয় জড়িয়ে থাকতে পারে। সাম্প্রতিককালে ‘হ্যালিকো ব্যাকটর পাইলরি’ নামক একটি জীবাণুকে দায়ী করা হচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে পেপটিক আলসারের কারণ এই জীবাণু হ্যালিকো ব্যাক্টর পাইলরি। হ্যালিকো ব্যাক্টর পাইলরির কারণে সৃষ্ট পেপটিক আলসারের চিকিৎসাও ভিন্ন।
পেপটিস আলসারের গবেষণা এখন অনেক দূর এগিয়েছে। পেপটিক আলসারের জন্য নতুন জীবাণুর সন্ধান মিলেছে। পেপটিক আলসারের রোগীর খাবার সম্পর্কে ধারণাও বদলেছে। এখন পেপটিক আলসারের রোগীকে যেকোনো খাবারই খেতে বলা হয়, যদি তাতে রোগীর কোনো অসুবিধা দেখা না দেয়।
একসময়ের দুধ খাওয়ার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যে দুধ একসময় আলসার উপশমের জন্য খাওয়া হতো, এখন সেই দুধ এড়িয়ে চলা হচ্ছে আলসার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। কাজেই এখনো যারা আলসার উপশমের জন্য দুধ খাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে আবারো বলতে হয়, দুধ আলসার উপশমের কোনো কাজে আসে না, বরং তা আলসারের উপসর্গকে তীব্র করতে পারে।
ডা. সজল আশফাক