
লিহান লিমা : ২৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ট্রেলিয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করা বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের নারী শ্রমিকরা ভুগছেন খাদ্যাভাবে। ঘণ্টায় মাত্র ৫১ সেন্ট বেতন পাওয়া এ কর্মীরা কখনোই স্বচ্ছলতার মুখ দেখেন না। সম্প্রতি অক্সফামের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কিগ ডব্লিউ, কে মার্ট, টার্গেট ও কটন অনের মতো সাপ্লাই ব্র্যান্ডগুলোতে কাজ করা ৪৭০জন পোশাক শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয় সংস্থাটি। অক্সফাম অস্ট্রেলিয়ার প্রধান হেলেন সেজোক বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে, অত্যন্ত নি¤œমানের এ বেতন পোশাক কর্মীদের জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে, যারা কিনা অস্ট্রেলিয়ানদের প্রিয় পোশাক তৈরি করেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। তারা অসুস্থ থাকাকালে চিকিৎসা করতে পারেন না, সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য রাখেন না, পোশাক কর্মীদের পরিবার টেবিলে পর্যাপ্ত খাবার রাখতে পারেন না, তারা জনাকীর্ণ রুমে গাদাগাদি করে ঘুমান, ঋণের দায়ে জর্জারিত হন।
অক্সফাম আরো জানায়, বড় বড় পোশাক কোম্পানিগুলো জীবনধারণের জন্য পর্যাপ্ত মজুরি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় এগুলোই পোশাক শ্রমিকদের জীবনের বাস্তব সত্যি।
সাক্ষাৎকার নেয়া ১০ জনের মধ্যে ৯ জন বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিক বলেছেন, তারা নিজেদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার খেতে পারেন না এবং কখনো না খেয়েই থাকেন। আবার কখনো তারা ঋণ নিতে বাধ্য হন। সাক্ষাৎকার দেয়া ৭২ শতাংশ পোশাক শ্রমিক চিকিৎসা করার সামর্থ্য রাখেন না। ভিয়েতনামে এই হার ৫৩ শতাংশ। বাংলাদেশে তিনজনের মধ্যে একজন পোশাক শ্রমিকের সন্তান তাদের কাছ থেকে দূরে থাকেন, কারণ তাদের পর্যাপ্ত থাকার জায়গা নেই।
অক্সফামের প্রতিবেদনে ২১ বছরের বাংলাদেশি সিঙ্গেল মাদার তানিয়ার গল্প তুলে ধরা হয়। কে মার্ট-এর সাপ্লাই ফ্যাক্টরিতে ১২ ঘণ্টা কাজ করে মাসে ১৬৯ ডলার (ঘণ্টায় ৫৫ সেন্ট) বেতন পান তানিয়া। নিজের বাচ্চাকে দেখাশোনার জন্য বাবা-মায়ের কাছে গ্রামে রেখেছেন তিনি। বছরে দুইবার তাকে দেখার সুযোগ মেলে তার।
বিগ ডব্লিউর সাপ্লাই ফ্যাক্টরিতে হেলপার হিসেবে কাজ করা চামেলি বেতন পান ঘণ্টায় ৫১ সেন্ট। তিন সন্তানের কাউকেই স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য নেই তার। তার বড় মেয়ের বয়স ১৪, যে কি না ইতোমধ্যেই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করেছে। ঢাকায় ৩ দশমিক ৬০ মিটার বাই ২ দশমিক ৪০ মিটারের ছোট্ট একটি রুমে থাকেন তারা। তার বড় দুই মেয়ে নিচে ফ্লোরে ঘুমায়।
ডিলোইট একসেস ইকোনমিকসের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় যে দামে পোশাক বিক্রি হয়, গড়ে তার মাত্র ৪ শতাংশ পান তৈরি পোশাক শ্রমিকরা।
অক্সফাম জানায়, যদি বড় ব্র্যান্ডগুলো শ্রমিকদের জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় মজুরিও দেয়, তাও তা হবে পোশাকের দামের মাত্র এক শতাংশেরও কম।
সেজোক বলেন, অক্সফাম এ ব্র্যান্ডগুলো বয়কটের জন্য কোন প্রচারণা করছে না। বরঞ্চ, পোশাক শ্রমিকদের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয়ভার বহনের পর্যাপ্ত মজুরি নিশ্চিতকরণে উদ্বুদ্ধ করছে।
তারা আরো জানায়, কটন অন, কে-মার্ট, টার্গেট ও সিটি চিক সম্প্রতি তাদের সাপ্লাই চেইনগুলোতে কাজ করা পোশাক শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান নিশ্চিৎ করার জন্য পর্যাপ্ত মজুরির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।