দূতাবাস, স্থায়ী মিশন ও কন্স্যুলেটে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

ঠিকানা রিপোর্ট : ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ৫১তম বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত ২১ নভেম্বর সোমবার দূতাবাস, স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ দূতাবাস : ৫১তম বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীরবিক্রম এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর আন্ডার সেক্রেটারি গেব ক্যামারিও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সন্ধ্যায় দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল টি. প্লেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী তার বক্তব্যে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আত্মত্যাগ ও দীর্ঘ সংগ্রামের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন যিনি বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের লালিত স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী আরো বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা-কবলিত অঞ্চলে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছেন। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে তারা বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর আন্ডার সেক্রেটারি গেব ক্যামারিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে।

ওয়াশিংটন ডিসি : বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওয়াশিংটন দূতাবাসে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।


জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম সৈন্য প্রেরণকারী দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দেয়।
রাষ্ট্রদূত ইমরান বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যার নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান, প্রশিক্ষণ, সরঞ্জমাদি সংগ্রহ ও সফর বিনিময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ, ডিফেন্স অ্যাটাচে এবং পেন্টাগন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও অন্যান্য মার্কিন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মিনিস্টার (রাজনৈতিক-১) দেওয়ান আলী আশরাফ। আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন: আজ ৫১তম সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব অপারেশনাল সাপোর্টের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে, ডিপার্টমেন্ট অব সেইফটি এন্ড সিকিউরিটিজের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল গিলেস মিশউড, জাতিসংঘের মিলিটারি অ্যাডভাইজর জেনারেল বিরামে ডিওপসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত (স্থায়ী প্রতিনিধি), ও সামরিক উপদেষ্টাগণ (মিলিটারি অ্যাডভাইজর) অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাদেকুজ্জামান আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত। পরবর্তীতে স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত আগত অতিথিদের নিয়ে কেক কাটেন এবং সকলকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। এসময় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন। এসময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখেরও বেশী নির্যাতিত নারীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, তাঁদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কারণেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। এসময় তিনি ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হওয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে নবগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং সর্বোপরি দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও নানাবিধ উন্নয়ন কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণের উপর আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ যে অবদান রেখে যাচ্ছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এসময় তাঁরা সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানান।