দেশের উন্নয়নে প্রবাসী প্রকৌশলীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা অফিস : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের ‘এ মাটির সন্তান’ আখ্যা দিয়ে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকা-ে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, অনাবাসিক প্রকৌশলীরা দেশের তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্পোৎপাদন, যোগাযোগ এবং সমুদ্র সম্পদ আহরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারেন।
তারা পলিসি লেভেল চ্যালেঞ্জ এবং ইনস্টিটিউশন লেভেল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে পারেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার, সকালে রাজধানী ঢাকায় অনাবাসী (এনআরবি) প্রকৌশলীদেও প্রথম কনভেনশনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন কেবল শহর কিংবা রাজধানীভিত্তিকই নয়, তার সরকার গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন করতে চায় উল্লেখ কওে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বিদেশে থাকলেও বাংলাদেশের কোনো না কোনো গ্রামেই আপনাদের বাড়িঘর, শিকড় রয়ে গেছে। সেই শিকড়ের সন্ধান করে আপনাদের যার যার অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ সময় প্রবাসী প্রকৌশলীদের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে বলে বিশ্বাস করি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), ব্রিজ টু বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে সরকারের নীতিগত পর্যায়ে এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনিবাসী প্রকৌশলীরা কীভাবে সহযোগিতার মাধমে অবদান রাখতে পারেন, সে জন্যই দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং ব্রিজ টু বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান আজাদুল হক বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা অংশ নেন।
বিনিয়োগের আহ্বান: বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদেরও সেসব সুযোগ নেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, আজকে আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। সেখানে আমরা আশা করছি বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে, আমাদের প্রবাসী যারা, তারাও বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রবাসীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও আমরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।
প্রবাসীদের সুবিধার জন্য তিনটি ব্যাংক করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি বিষয় চিন্তা করতে হবে, গার্মেন্টে আমরা দ্বিতীয়, এটা ঠিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করে কোনো দেশ চলতে পারে না।
আমাদের রপ্তানি পণ্যকে বহুমুখীকরণ করতে হবে। পাট, সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করা এবং আইসিটি পণ্য রপ্তানি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কথা সবসময় বলা হয় যে, ব্রেইন ড্রেইন। আমি কিন্তু কখনো এ কথাটা মনে করি না। অনেকে বিদেশে থেকে যান, অনাবাসী হয়ে যান। কিন্তু সেখানেও কিন্তু একটি সম্ভাবনা থাকে যে, অভিজ্ঞতা আপনারা সঞ্চয় করেন। আমরা যদি বিশ্বকে না দেখি, তাহলে আমরা জানবো কি করে যে, বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে, না হচ্ছে, কীভাবে উন্নয়ন হচ্ছে। সুতরাং সেটি জানা এবং জ্ঞান অর্জনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেই জ্ঞানার্জনের সে সুযোগটি আপনারা অর্জন করেছেন।
আজকে আপনারা বাংলাদেশের উন্নয়নে শরিক হতে চান, কাজে লাগাতে চান- আমি আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, এ উদ্যোগটি আপনারা নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ছেড়ে কেনো মানুষ যেতে চেয়েছে- তার কারণ ব্যাখ্যায় সরকার প্রধান বলেন, ‘১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনা যদি না ঘটতো, তাহলে হয়তো অনেকে দেশেই থেকে যেতে পারতেন এবং দেশের উন্নয়নে শরিক হতে পারতেন। কিন্তু যে পরিবর্তনটি হয়েছিলো, সেটিতো দেশের কল্যাণে হয়নি। হয়তো একটা গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কোনো কাজ তারা করেনি। যদি করতো, তাহলে বাংলাদেশ বহু আগেই উন্নত হতো। আর সেটি করেনি বলেই আমরা পিছিয়ে ছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে ছয় দফা ও মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করেন।
দেশের উন্নয়নে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ সুপরিকল্পিতভাবে নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বক্ষেত্রে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি বলে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতি এবং প্রবৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে। এ সময় সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমানো এবং সড়ক অবকাঠামোসহ বিভিন্ন বড় বড় ভৌত অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।