ঠিকানা অনলাইন : কয়েক দিনের তাপদাহের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী তাণ্ডব চালিয়েছে। ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেলে বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতও হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত চার জেলায় ছয়জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এর মধ্যে চাপাঁইনবাবগঞ্জ ও যশোরে দুজন করে এবং সাতক্ষীরা ও রাজবাড়ীতে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুজন। উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের শরৎনগর গ্রামের একটি আম বাগানে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতরা বাগানে আমের প্যাকেটিংয়ের কাজ করছিলেন।
নিহত দুজন হলেন শ্যামপুর গোপালনগর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে শাহিন আলী (১২) ও শ্যামপুর শরৎনগর গ্রামের হারুন আলীর ছেলে আসিম (১৩)। আহত দুজন হলেন লছমানপুর গ্রামের রোজবুল ইসলামের ছেলে নয়ন আলী (১৩) ও শ্যামপুর গোপালনগর গ্রামের কাশেদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ সারোয়ার (১৪)। আহতদের শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, দুপুর ২টার দিকে শ্যামপুর ইউনিয়নের শরৎনগর গ্রামের একটি আম বাগানে আমের প্যাকেটিংয়ের কাজ করার সময় বজ্রপাত হলে দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহতদের পরিবারকে নিয়ম অনুযায়ী সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।
যশোর : ধান বাঁচাতে গিয়ে যশোরের শার্শা ও চৌগাছায় বজ্রপাতে প্রাণ গেছে দুই কৃষকের। বৃহস্পতিবার বিকেলে শার্শা উপজেলার কায়বা গ্রামের মাঠে আজিজুল ইসলাম (৩৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে বুধবার রাতে চৌগাছা পৌর এলাকার তারিনিবাস গ্রামের দুয়ালের মাঠে ক্ষেতে ধান জালি দেওয়ার সময় বজ্রাঘাতে সাগর কুমার বিশ্বাস (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা গ্রামের মাঠ থেকে ধান তোলার সময় বজ্রপাতে আজিজুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।
বৃষ্টিতে যেন ধান নষ্ট না হয়, সে জন্য বিকেলে আজিজুল ও তার ভাইসহ ৩-৪ জন স্থানীয় ঠ্যাংগামারী বিল মাঠে নিজেদের জমির ধান গোছাতে যান। তারা মাঠে ধান গোছানো অবস্থায় বজ্রপাত হয়। এতে আজিজুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পাশে থাকা তার ভাই দেখে চিৎকার দেন। তখন স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে দ্রুত বাগআঁচড়ার জোহরা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আজিজুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে বুধবার রাতে চৌগাছায় মাঠে ধান ক্ষেতে ধান জালি দেওয়ার সময় বজ্রাঘাতে সাগর কুমার বিশ্বাসের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হালদার পাড়ার বাসিন্দা।
পৌর কাউন্সিলর রুহুল আমিন বলেন, বুধবার রাত ৯টার দিকে সাগর ও তার বাবাসহ কয়েকজন মিলে তারিনিবাস দুয়ালের মাঠে নিজেদের জমির ধান যেন বৃষ্টিতে না ভেজে সে জন্য পলিথিন দিয়ে ঢাকছিলেন। রাত ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে বজ্রপাতে সাগরের শরীরের বাম পাশ ঝলসে যায়। তার সঙ্গী মৃত্যুঞ্জয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তখন তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাগরকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হলেন সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গার বিহারীনগর গ্রামের মৃত ওয়াহেদ মিস্ত্রির ছেলে আব্দুল্লাহ মিস্ত্রি (৫০)।
ঝাউডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, আব্দুল্লাহ বিকেলে নিজের জমিতে কাজ করছিলেন। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে তিনি মারা যান।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ক্ষেত থেকে উস্তা তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে মো. সাইদুল মৃধা (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার দেবীপুরচরে এ ঘটনা ঘটে। সাইদুল উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের খালেক মৃধা পাড়ার মো. জামাল মৃধার ছেলে।
স্থানীয় চাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, সাইদুলসহ আমরা ৫-৬ জন ক্ষেতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড় শুরু হলে আমরা দৌড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিই। কিন্তু সাইদুল, কাইউম খাঁ, আসলাম, ইউসুফসহ চারজন তখনো মাঠে উস্তা তুলছিলেন। এ সময় হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ করে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতটি সাইদুলের গায়ে লাগলে তার কান ও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে লোকজন তাকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঠিকানা/এনআই