দেশে কি মানসম্পন্ন ফুটবলারের অভাব?

স্পোর্টস রিপোর্ট : গত ২০১৩ সালের সুপার কাপ। ওই আসর নতুন ফুটবলার হিসেবে আবির্ভাব ঘটায় জুয়েল রানার। পরে জাতীয় দলে স্থান পান। এবার তিনি খেলেছেন সাইফ স্পোর্টিংয়ের হয়ে। সেই সুপার কাপ ছিল সম্পূর্ণ দেশি ফুটবলারদের উপস্থিতিতে। এবার বিদেশি ফুটবলার ছাড়া স্বাধীনতা কাপ আবিষ্কার করল আরেক জুয়েলকে। আরামবাগের স্ট্রাইকার মোহাম্মদ জুয়েল এবারের ওয়ালটন স্বাধীনতা কাপে ফুটবলে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। পাঁচ খেলায় ৩ গোল তার। চ্যাম্পিয়ন আরামবাগেরই আরেক ফরোয়ার্ড আরিফ হয়েছেন ফাইনাল ও টুর্নামেন্ট সেরা। এ ছাড়া এই দলের সুফিল, শাহরিয়ার বাপ্পীরা ছিলেন প্রতিপক্ষের আতঙ্ক। বাফুফের কোচ জাবিদ হাসান অপু জানান, আমি আগেই বলেছিলাম স্বাধীনতা কাপে আরামবাগই চ্যাম্পিয়ন হবে। কারণ তাদের আছে গতিসম্পন্ন তরুণ ফরোয়ার্ড লাইন।এই স্বাধীনতা কাপ জুয়েল, আরিফ, সুফিল, বাপ্পী ছাড়াও উপহার দিয়েছে ফরাশগঞ্জের ফরহাদ মনা, ব্রাদার্সের বিশাল দাসের মতো খেলোয়াড়দের। বিদেশি না থাকায় লিগে রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা ফুটবলাররা তাদের মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন এই টুর্নামেন্টে। লিগে ইনজুরির জন্য মাঠের বাইরে থাকা জাতীয় দলের স্ট্রাইকার সাখাওয়াত রনি এই টুর্নামেন্টে গোল পেয়েছেন দুটি। লিগ ও ফেডারেশন কাপে তিনি ছিলেন গোলশূন্য। ফরহাদ মনা ও বিশাল দাসের মতো শেখ জামালের জাহেদ পারভেজ, নুরুল আবসার, শেখ রাসেলের নয়ন, চট্টগ্রাম আবাহনীর সবুজও দুটি করে গোল পান। মওসুম শেষের এই প্রতিযোগিতা আরেকটি তথ্য জানান দিয়েছে, বাংলাদেশে এখন তারকা আর সাধারণ মানের ফুটবলাদের মধ্যে কোনো তফাত নেই। তা না হলে প্রিমিয়ার লিগের রেলিগেশন ফাইটে থাকা দুই দল কিভাবে সেমিফাইনালে খেলে। নেমে যাওয়া ফরাশগঞ্জ কিভাবে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। ফরাশগঞ্জ, আরামবাগ ও রহমতগঞ্জে তো কোনো তারকা ফুটবলার ছিল না। তারাই তো কাবু করেছে বড় বড় দলকে। বিশেষ করে আরামবাগ। গ্রুপ পর্বে দুই ড্র করে কোয়ার্টার ফাইনালে এসে তারা একে একে হারিয়েছে ঢাকা আবাহনী, শেখ জামাল ও চট্টগ্রাম আবাহনীকে। দুই আবাহনীকে তো উড়িয়ে দিয়েছে।
দেশে মানসম্পন্ন ফুটবলার নেই বলে যারা মুখে ফেনা তোলেন তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আরিফ, জুয়েলরা। গতিময় ও স্কিলফুল আরিফকে তো ধরেই রাখতে পারেনি বড় দলের তারকা ডিফেন্ডাররা। মূলত দক্ষ কোচিং ও পর্যাপ্ত খেলার সুযোগই মেলে ধরার রাস্তা করে দেয়। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থেকে কয়েক মিনিটের জন্য মাঠে নেমে তাদের পক্ষে কি প্রমাণ করা সম্ভব? আরামবাগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্য কোচ মারুফুল হক। অথচ এবার তাকে প্রথমে কোনো দলই নিতে চায়নি। যেভাবে এ মৌসুমে ফরাশগঞ্জ ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল কোচ আবু ইউসুফকে। ২০১৫ সালে বুড়ো বুড়ো সব ফুটবলারকে নিয়ে তিনি ফেডারেশন কাপের ফাইনালে তুলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাকে। শেখ জামালের বিপক্ষে ফাইনালের একপর্যায়ে ৪-২ গোলে লিড নিয়েও পরে তার দলকে হারতে হয় বদলি মানসপন্ন খেলোয়াড় সঙ্কটের জন্য।
মামুনুল, জাহিদ, জামাল ভূঁইয়া, হেমন্ত, জুয়েল রানা, মতিন মিয়া পাশাপাশি এবার তরুণ উঠতিরা যেভাবে মাঠ দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন, তাতে উজ্জ্বল ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত। এ জন্য এভাবে সুযোগ করে দিতে হবে স্থানীয়দের। খালি বিদেশিদের পেছন ছুটলে হবে না। তবে দুঃখজনক বিষয় স্বাধীনতা কাপের বেশির ভাগ সময় জুড়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসে থাকা অ্যান্ড্রু অর্ডের বিবেচনায় আসেননি জুয়েল বা আরিফ; অর্থাৎ জাতীয় দলের বাইরে তারা।