দেশে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যায়নি তো!

হকিকত জাহান হকি : ফ্ল্যাটের মালিক জানেন না তার ফ্ল্যাটটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ভুয়া মালিক ভুয়া মালিক সেজে যার কাছে ফ্ল্যাটটি বিক্রি করা হচ্ছে, সেই ক্রেতাও ফ্ল্যাটটির মালিকানা এবং দখলস্বত্ব কখনো বুঝে নিতে চাইবেন না। বেচাকেনার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অর্থ লেনদেনও হবে না! কারণ একজন ভুয়া মালিক সেজে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন, আরেকজন ভুয়া ক্রেতা সেজে কিনছেন! ভুয়া মালিক ও ক্রেতা সেজে তারা ফ্ল্যাট বেচাকেনার সব ধরনের কাগজপত্রও তৈরি করছেন।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের ঢাকা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে এমনই এক নতুন জালিয়াত চক্র ধরা পড়েছে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি।
সূত্র জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য একটাই, ওনসব ভুয়া কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার কথা বলে ঋণের নামে টাকা তুলে আত্মসাৎ করা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় ফ্ল্যাট কেনার নামে ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে ৮৫ লাখ টাকা তুলে নেয়ার আগ মুহূর্তে ধরা পড়েছেন ওই চক্রের তিন সদস্য।
জানা গেছে, চক্রের সদস্যরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ঢাকার মুগদা থানার পূর্ব ব্রাহ্মণচিরণ মৌজার ২১১৬ দাগের ৯ তলা ভবনের সাত তলার একটি ফ্ল্যাট কেনার রেজিস্ট্রেশন করতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শ্যামপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান। ওই অফিসটি তেজগাঁওয়ের ঢাকা রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অবস্থিত। ফ্ল্যাটের নামজারির কাগজে মতিঝিল সার্কেলের এসি ল্যান্ডের স্বাক্ষর ও বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে সন্দেহ হয় শ্যামপুরের সাব-রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদের। পরে তিনি কাগজপত্রসহ বিক্রেতা, ক্রেতা ও শনাক্তকারীকে সঙ্গে নিয়ে এর সমাধানের জন্য যান কমপ্লেক্সের চার তলায় ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকারের কাছে।
জেলা রেজিস্ট্রার ওইসব কাগজপত্র দেখে ও ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের জালিয়াত চক্রের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। জেলা রেজিস্ট্রারের কক্ষেই প্রাথমিকভাবে আটক করে তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ওই সময় চক্রের সদস্যদের মাধ্যমেই ফ্ল্যাট কেনার নামে ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখার ৮৫ লাখ টাকার ঋণের মঞ্জুরিপত্র সংগ্রহ করা হয়। এরপর জেলা রেজিস্ট্রার ফোনে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে জালিয়াত চক্রের সদস্যদের আটক করে। এরপর ভুয়া ফ্ল্যাট ক্রেতা-বিক্রেতা ও বিক্রেতা শনাক্তকারীসহ চারজনকে আসামি কওে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়।
ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার বলেন, প্রতিনিয়ত নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। কমপ্লেক্সে রেকর্ডস অব রাইটস (আরওআর) নেই। নামজারির পর এসি ল্যান্ড অফিস থেকে কোনো কপি দেয়া হয় না। জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। এসব কারণে জালিয়াত চক্র চোখে ধুলা দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, জালিয়াতি ও প্রতারণা বন্ধে কমপ্লেক্সে ওইসব সুবিধা থাকা জরুরি।