দেশে স্বজনদের নিয়ে প্রবাসে উদ্বেগ

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় কী ঘটতে যাচ্ছে?

ঠিকানা রিপোর্ট : রাজধানী ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে দেশজুড়ে যে উদ্বেগ, উত্তেজনা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব এসে পড়েছে প্রবাসেও। বিশেষ করে রাজনৈতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে স্বজনদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে সরকার যে গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে তাতে অনেক প্রবাসীর নিকট স্বজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন পর্যন্ত গণসমাবেশ নয়াপল্টনেই করবে বলে অনঢ় রয়েছে। তবে আরামবাগ মাঠে অনুমতি দেয়া হলে সেক্ষেত্রে নয়াপল্টন ছাড়তে রাজি হয়েছে তারা। যদিও নয়াপল্টন এবং আরামবাগে অনুমতি না দেয়ার বিষয়ে অনড় প্রশাসন। এ ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে তাদের নাগরিকদের ঢাকায় চলাচলে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোনো সতর্কতা জারি না করলেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা উদ্বিগ্ন হয়ে ঢাকায় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাদের কোনো প্রকার রাজনৈতিক সংস্পর্শে না যাবার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এদিকে শীত মওসুমে বহু প্রবাসী মাতৃভূমিতে বেড়াতে গেছেন। তাদের মধ্যে যারা ঢাকায় অবস্থান করছেন তারা খুবই অস্বস্তিতে পড়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে প্রশাসনের বিশেষ সতর্কতায় তারা রাস্তায় বের হয়ে পুলিশের জেরার মুখে পড়ছেন। পুলিশ তাদের সম্মান করলেও বাসা থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
গত ৫ ডিসেম্বর সোমবার নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় গেছেন মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। ঢাকায় পা রেখেই তিনি পুলিশের তল্লাশীর মুখে পড়েছেন। পরিচয় দেবার পর তাকে সসম্মানে দেওয়া হয় এবং আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাসায় থাকার পরামর্শ দেন। অথচ গিয়াস উদ্দিন মাত্র ১৫ দিনের জন্য দেশে গেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ঢাকায় নেমে মনে হয়েছে বাংলাদেশ নয়, কোনো পুলিশি রাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছি। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘরে বসে থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে আটদিনই ঘরে থাকতে হবে। তাহলে দেশে আসার কী দরকার ছিল?
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহ আলম বলেন, তার ২২ বছরের ছেলে ঢাকার তেজগাঁও কলেজে পড়েন। তাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছেলের জন্য ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু দেশে নির্বাচন মানেই সহিংসতা। এর আগে ভিসা হয়ে গেলে বাঁচি, জানান শাহ আলম।
আরেক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের ৫০ বছর হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজনীতি মানেই ক্ষমতা দখল আর সহিংসতা। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে পরিচিত। অথচ এসব রাজনৈতিক সহিংসতার খবর প্রবাসে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এর অবসান হওয়া উচিত। তিনি বলেন, দেশে আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে যে ‘খেলা’ হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ বাড়ছেই।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শফিকুল ইসলাম বলেন, তার ভাগ্নে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় বেড়াতে গেছেন। উঠেছিলেন একটি অভিজাত হোটেলে। পুলিশ সেই হোটেলের সকল অতিথির সঙ্গে কথা বলেছে। বলতে গেলে একপ্রকার তল্লাশী করেছে। এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। ভয়ে জরুরি কাজ ফেলে তার ভাগ্নে গ্রামে চলে গেছেন। এমন অনাকাক্সিক্ষত আতঙ্ক পেয়ে বসেছে প্রবাসীদের।