ঠিকানা রিপোর্ট: স্বদেশের দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অন্যান্য কারণে এবং স্পন্সরদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ বা অবৈধভাবে প্রবেশকারী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ছেলেমেয়েদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে গিয়ে ফেডারেল কর্মকর্তাদের নিয়মিত হয়রানি হতে হচ্ছে। এর মধ্যে অনুপ্রবেশকারী প্রায় এক হাজার ৫০০ ছেলেমেয়ের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য গত মাসে কংগ্রেশনাল শুনানিতে ফেডারেল কর্মকর্তারা উপস্থাপন করেছেন।
শুনানিতে আরও বলা হয়, ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করার জন্য পিতা-মাতার সাথে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টাকালে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা সন্তান-সন্ততিদের থেকে আলাদা করে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে কম বয়সী হাজার হাজার অভিবাসীকে অব্যাহতভাবে কারাগারে প্রেরণের দায়ে আমেরিকার এজেন্সিগুলোকে আইনি, যৌক্তিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ইউএস হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফল চিলড্রেন এন্ড ফ্যামিলিজ ডিপার্টমেন্টের সহকারীএ্যাক্টিং সেক্রেটারি স্টিভেন ওয়াগনার গত এপ্রিল মাসে সাব-কমিটিকে বলেছিলেন, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্পন্সরদের গৃহে স্থানান্তরকৃত এক হাজার ৪৭৫ জন ছেলেমেয়ে কোথায় আছে কর্মকর্তারা তা নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। আইনপ্রণেতাদের ওয়াগনার আরো জানান, অপর ২৮টি ছেলেমেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে রুটিন চেক-আপের আওতায় এজেন্সিসাত হাজার ৬৩৫ জন ছেলেমেয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে আসছিল। তার মধ্যে ১৯ শতাংশেরও বেশি ছেলেমেয়ের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
সেন্ট্রাল আমেরিকান দেশগুলোর অভিভাবকহীন ছেলেমেয়েদের বেশির ভাগকেযুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশকালে গ্রেপ্তার করার পরইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সি থেকে হিউম্যান সার্ভিসেস অফিস অব রিফিউজি সেটেলমেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপর ছেলেমেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে পারে এমন ধরনের স্পন্সর, পিতা, আত্মীয় কিংবা পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে তাদের স্থানান্তর করা হয়।
হিয়ারিংয়ে ওয়াগনার আরো বলেন, আইনের দীর্ঘকালীন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণী থেকে হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসের তরফ থেকে আমি বুঝি যে অফিস অব রিফিউজি রিসেটেলমেন্টের তত্ত্বাবধান থেকে ছেলেমেয়েদের মুক্তি দেয়ার পরঅফিস অব রিফিউজি রিসেটেলমেন্ট আইনগতভাবে ছেলেমেয়েদের জন্য দায়ী নয়। ওয়াগনার জানান, ২০১৭ চল্লিশ হাজারেরও বেশি ছেলেমেয়েকেরিফিউজি রিসেটেলমেন্টে পাঠানো রয়েছিলো।
এদিকে সিনেট ইনভেস্টিগেশনের তথ্যানুযায়ী হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস কম বয়সীদের অনেককে মানবপাচারকারীর কাছে হস্তান্তর করেছে। পরে পাচারকারীরা এসব ছোট ছেলেমেয়েকে ওহাইওর ডিমের খামারে সপ্তাহে ছয় থেকে সাত দিনের জন্য কাজে লাগিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, মানবপাচারের বকেয়া পরিশোধের জন্য এসব ছেলেমেয়ের পে-চেক বা মজুরির চেক মানবপাচারকারীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, মানবপাচারকারীরা ছেলেমেয়েদের অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। এমন কি কাজ না করলে তার বাবার মাথায় গুলি করার হুমকি দেয়ার কথাও একজন শিশু শ্রমিক জানিয়েছে। আবার অভিযোগ করায় এক ছেলেকে হিট, বিছানা, গরম পানি ও টয়লেটবিহীন ট্রেইলারে রাখার খবরও মিলেছে।
টেক্সাসের একটি কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন প্রসেসিং ফ্যাসিলিটি (প্রক্রিয়াকরণ ভবন) থেকে মুক্তির পর বাসের টিকিটের জন্য অভিবাসীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অথচ কর্মকর্তারা বলছেন যে অস্থায়ী ্আবাসনে স্থানান্তরের পর রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী মামলার ফলাফলের জন্য অপেক্ষাকালে অভিবাসী ছেলেমেয়েদের খোঁজখবর রাখার জন্য কর্মকর্তারা আইনত দায়ী নন। তারা আরো বলেন, স্পন্সরদের গৃহে অভিবাসী ছেলেমেয়েদের (ইমিগ্র্যাটন্ট চিলড্রেন) পৌঁছে দেয়ার পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য তারা আর আইনগতভাবে দায়ী নন।
যা হোক, হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিস সাম্প্রতিক সময়ে স্পন্সরদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, অতীত ইতিহাস যাচাই-বাছাই জালিয়াতি কমিয়ে আনার লক্ষে ব্যবহার হতে পারেÑ এমন ধরনের স্পন্সর ডক্যুমেন্ট সংশোধন, গুয়াতেমালার কম বয়সীদের মানবপাচারকারীদের কাছে হস্তান্তর রোধে ঠিকানার সমস্যাসহ নানা ধরনের পরিবর্তন এনেছে। অধিকন্তু ছেলেমেয়েদের মুক্তি দেয়ার পর তাদের ব্যাপারে এজেন্সির আইনানুগ দায়িত্বের ব্যাপারে এজেন্সি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে, যাতে করে স্পন্সরদের কাছে ছেলেমেয়েদের হস্তান্তরের পরও ডিপার্টমেন্টকে তাদের ব্যাপারে দায়ী করা যায়।
অধিকসংখ্যক ছেলেমেয়েকে সীমান্তে বিচ্ছিন্ন করা হবে : গত ২৯ মে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, অনির্দিষ্ট ভয়ানক আইনের অপরাধ ডেমোক্র্যাটদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন একটি নতুন নীতিমালা কার্যকর করতে যাচ্ছে। যা অধিকসংখ্যক ছেলেমেয়েকে সীমান্তে পিতা-মাতা থেকে আলাদা করে ফেলবে। বেআইনিভাবে সীমান্ত পাড়ি ঠেকাতে প্রত্যেককে আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নতুন‘জিরো টলারেন্স’ পরিকল্পনার বাইপ্রডাক্ট হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন পিতা-মাতার কাছ থেকে ছেলেমেয়েদের বিছিন্ন করার বিষয়টি চলতি মাসে নিশ্চিত করেছে।
এ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেসনস বলেন, আপনি কোনো ছেলেমেয়েকে পাচার করলে আপনাকে অবশ্যই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে এবং আইনানুযায়ী ছেলে বা মেয়েকে বিছিন্ন করা হবে। ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ জন কেলীও আইনটির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন।
এনপিআরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জন কেলী সাম্প্রতিক সময়ে সেন্ট্রাল আমেরিকানদের অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয় দেখিয়ে সীমান্ত পাড়ি থেকে বিরত রাখার কঠোর নীতিমালার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।