ধর্ষণের ভিডিও করে তিন বছর ধরে ব্ল্যাকমেইল

মাদারীপুর : দরিদ্র পরিবারের মেয়েটি মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। দেখতেও সুশ্রী। এ কারণে স্কুলের শিক্ষকরা সবাই ওকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। তবে একজন শিক্ষক ওর দিকে ‘বিশেষভাবে’ খেয়াল রাখতে শুরু করে। বাসায় ডেকে নিয়ে পড়ায়। মাঝেমধ্যে আর্থিক সহযোগিতাও করে। এভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়া মেয়েটিকে এক দিন ধর্ষণ করে ওই শিক্ষক।
শিক্ষকরূপী ওই পিশাচের লাম্পট্যের এটা ছিল শুরু। ধর্ষণের ভিডিও দৃশ্য ধারণ করে তা দেখিয়ে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে সে। ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এরপর টানা তিন বছর মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ওই শিক্ষক। তাকে বিয়ের প্রলোভনও দেওয়া হয়। এর মধ্যে একবার গর্ভপাতও করানো হয়। একপর্যায়ে মেয়েটি দেখতে পায় যে ওই শিক্ষক আরো কয়েক ছাত্রীকে একই কায়দায় জিম্মি করে শারীরিক সম্পর্ক করছে। এবার সাহস করে মুখ খোলে সে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে। একই ধরনের অভিযোগ করে আরো দুই ছাত্রীর পরিবার। একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অডিও রেকর্ড ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে গাঢাকা দেয় শিক্ষক। বর্তমানে সে আত্মগোপনে থেকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মাদারীপুর শিবচরের উমেদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে জিম্মি করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ-বিব্রত স্কুল কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তবে অভিযোগ ওঠার দেড় মাস পার হলেও রবিউলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন ওই বিদ্যালয়ে গেলে একাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সহকারী শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। জানা যায়, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ওই ছাত্রীসহ মেধাবী চার-পাঁচজন ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে পড়াত রবিউল। মাঝেমধ্যে খাওয়াত। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক দিন রবিউল মেয়েটিকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর থেকেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ও বিয়ের প্রলোভনে ছাত্রীটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে রবিউল।
মেয়েটি একটি জাতীয় দৈনিককে বলে, ‘প্রথম দিকে রবিউল স্যার আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে লেখাপড়ার খোঁজখবর নিত। ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্যার আমাকে অসংখ্যবার ধর্ষণ করেছে। আরো কয়েকজন আপাকেও সে একই কায়দায় ফাঁসিয়েছে। স্কুলের সুন্দরী ছাত্রীদের সে সেভেন-এইট থেকেই টার্গেট করে ফুঁসলিয়ে এই জঘন্যতম কাজ করত।’
মেয়েটি জানায়, অন্য মেয়েদের সঙ্গে মিলে অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তার বিরুদ্ধেই অপবাদ ছড়ায় রবিউল। তখন বাধ্য হয়ে বিচারের দাবিতে ১৩ মার্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ করে সে। এরপরই বের হয়ে আসে রবিউলের একের পর এক অপকর্মের তথ্য।
ওই স্কুলছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘রবিউল শিক্ষক নামের কলঙ্ক। আমাদের সদা হাসি-খুশি ফুটফুটে মেয়েটির জীবন নষ্ট করে দিয়েছে সে। আমরা ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।