নিজস্ব প্রতিনিধি : ১১ বছর পর নয়াদিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হওয়ার পর জেআরসির মধ্যেও এমন ভয় ছিল যে সহসা, নির্ধারিত সময়ে জেআরসির বৈঠক আর সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি আগামী কয়েক বছরেও এ বৈঠক না-ও হতে পারে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বরাবরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেই এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু আকস্মিকভাবেই সেই ভয়, আশঙ্কা অমূলক প্রতিপন্ন করে আগামী জুনে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক ঢাকায় হতে যাচ্ছে।
জানা যায়, যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বছরে অন্তত একবার অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রয়োজনে বছরে একাধিকবারও এ বৈঠক হতে পারে। কিন্তু গত ১১ বছর এ বৈঠক হয়নি শুধু ভারতীয়দের অনিচ্ছার কারণে। বাংলাদেশ থেকে বারবার অনুরোধ করার পরও তাদের টনক নড়েনি, মন গলেনি। দ্রুত জেআরসির বৈঠক আহ্বান করতে ভারতীয় আগ্রহ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও যৌথ নদী কমিশনকেও বিস্মিত করেছে। ভারতীয়দের মানসিকতায় এই পরিবর্তনের পেছনে রাজনীতি, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।
তিস্তার পানিবণ্টন সুদীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত সমস্যা। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জনগণের জীবন-মরণের প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িত। তিস্তা এখন বড় রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিস্তা সমস্যার সমাধানের দিকে না গিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের কাছ থেকে তার সব সমস্যার দাবি আদায় করে নিয়েছে। তিস্তা সমস্যা অমীমাংসিত থাকলে নির্বাচনে তা সরকারের বিপক্ষে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, বিরোধীরা একে পুঁজি করে বাড়তি সুবিধা নেবে। ভারত সরকার, ভারতীয় জনগণের বৃহত্তর অংশ শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জোটকেই আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী দেখতে চায়। সে লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী। অন্তত তাদের বিজয়ের পথে ভারত কোনোভাবেই বাধা হতে চায় না। সেই নৈতিক, রাজনৈতিক তাগিদ থেকে নয়াদিল্লি তিস্তাসহ পানি সমস্যার গ্রহণযোগ্য সম্মানজনক সমাধান করতে চায়।
জানা যায়, আগামী জুনে জেআরসির বৈঠক হবে দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ঢাকায় আসতে পারেন এবং দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে স্বল্পমেয়াদি পাঁচ বছরের জন্য। তার চেয়েও বড় হয়ে আসছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। ১৭-১৮ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেবে। এ ব্যাপারে ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। তিস্তা পরিকল্পনার মাধ্যমে এ অঞ্চলে পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান ছাড়াও নেপাল, ভুটান জলবিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশকে অংশীদার করার কথাও বলা হবে। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন এবং অভিন্ন নদ-নদীগুলোর পানিবণ্টন ও ব্যবস্থাপনার ব্যাপারেও ভারতীয় দিক থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হবে।
৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে কুশিয়ারার ব্যাপারে উভয় পক্ষ একটা সমঝোতায় এসেছে। কুশিয়ারার ১ হাজার ৮০০ কিউসেক পানি চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখনো সে হারে পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ। মনু, মহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানিবণ্টনে চুক্তি সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ। আগামী জুনে অন্তত দুই থেকে তিনটি অভিন্ন সীমান্ত নদীর ডাটা ও তথ্য সরবরাহ করা হবে ভারতের দিক থেকে। তার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সমঝোতা হতে পারে।