ঠিকানা রিপোর্ট: নিউইয়র্কের নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার এন্ড জামে মসজিদের শেষ পর্যায়ে থাকা নির্মাণ কাজে বাধা না দেয়ার আহবান জানিয়েছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা বলেন, একটি মহল অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে শান্তিপ্রিয় জনগণকে বিভ্রান্ত করে ৫তলা বিশিষ্ট মসজিদের ডোনেশন বন্ধসহ মসজিদের চরম ক্ষতি সাধনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শে স্থাপিত মসজিদটি ভিন্ন মতাদর্শে নিয়ে যাওয়ারও অশুভ পাঁয়তারা করছে মহলটি।
নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদের সভাপতি সৈয়দ জামিন আলী এবং সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এক যৌথ বিবৃতিতে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে আনিত বিভিন্ন অনিয়ম এবং অসাংবিধানিক কার্যক্রমের অভিযোগের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এ বিবৃতি প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। তারা বলেন, অনিয়ম নয়, সংবিধান অনুযায়ী বৈধ নিয়মেই মসজিদ পরিচালিত হচ্ছে। বিবৃতিতে গুজব বা মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হয়ে পূর্বের মতোই মসজিদের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সকলের সাহায্য সহযোগিতা কামনা করে বলা হয়, এই মুহূর্তে মসজিদের নির্মাণ কাজটি একেবারে শেষ পর্যায়ে। অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে সেখানে নামাজের ব্যবস্থা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে মসজিদের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে প্রয়োজন আরও প্রায় ২০০ হাজার ডলারের।
নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার এন্ড জামে মসজিদের সভাপতি সৈয়দ জামিন আলী এবং সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, মসজিদের বর্তমান কমিটির ৭১ জন সদস্যের মধ্য থেকে মাত্র ৮ জন সদস্য কার্যকরি কমিটির বাইরের কতিপয় লোককে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনসহ প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে নতুন মসজিদের কাজ বাধাগ্রস্ত করতে বিভ্রান্তিমূলক অসত্য তথ্য প্রচার করছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, মসজিদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যার প্রমাণ মসজিদের রেজুলেশন বুকে রয়েছে।
বর্তমান ২১ সদস্যের কার্যকরি কমিটি বর্ধিত করে আরো ৫০ জন সদস্য নিযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, কার্যকরি কমিটির মেয়াদ এক বছর। সংবিধান অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে গঠিত ৭ সদস্যের এডহক কমিটিকে পর্যায়ক্রমে ১১, ১৩, ১৭, ২১, ৫১ এবং সর্বশেষ ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরি কমিটিতে উন্নীত করা হয়। হাতে গোণা মাত্র ৪/৫ জন সদস্যই সাধারণভাবে মসজিদের যাবতীয় কার্যক্রম আঞ্জাম দিয়ে আসছিলেন। নতুন মসজিদে প্রতি শুক্রবার সহ অন্যদিনেও অনেক খাদেমের প্রয়োজন বিধায় কার্যকরি কমিটি এবং বিপুল সদস্যের উপস্থিতিতে মসজিদের বৃহৎ স্বার্থে নতুন সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয়তার কারণে কাউকে কমিটিতে আনা হয় নি। বরং যোগ্যতা এবং মসজিদের কাজকর্মের ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্টরা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। মসজিদের উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনে কমিটি আরো বর্ধিত করা যেতে পারে। আজ যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তারা নিজেরাও নতুন সদস্যদের নাম ঠিকানা পরিচয়সহ জেনে শুনে রেজুলেশন বুকে স্বাক্ষর করেছেন।
সংবিধান অনুযায়ী প্রতি বছর অডিটসহ আয়-ব্যয়ের হিসাব বিষয়ে সভাপতি ও সেক্রেটারী বলেন, মসজিদের ক্যাশিয়ার কর্তৃক ১৯৯৬ সাল থেকে এপ্রিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের বিস্তারিত হিসাব রয়েছে। প্রতি বছর ঈদগাহ ময়দানে, প্রতি শবেবরাতের রাতে এবং মাঝে মাঝে শুক্রবারেও মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সেক্রেটারি হিসাবের বিবরণ তুলে ধরেন। লাখ লাখ ডলারের অনিয়মের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিটি পেনির হিসাব ক্যাশিয়ারের কাছে রয়েছে। মসজিদের নিয়মিত একাউন্টে অর্থ জমা হত না বলে যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে তার প্রমাণাদি অভিযোগকারীদের কাছে আইনিভাবে চাওয়া হবে। মানুষের দানকৃত প্রতিটি পেনি মসজিদের একাউন্টেই জমা হয়েছে। যার প্রমাণ ক্যাশিয়ার দিবেন। কেননা গত ২৩ বছর যাবত মসজিদের প্রতিটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট তার কাছে রক্ষিত রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১২০০ ডলারের হিসাব পাওয়া যায় নি বলে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার করা হয়েছে। যেখানে ক্যাশিয়ার কর্তৃক কমবেশী ৬৭২ জন মুসল্লির অর্থ কালেকশন হয়েছে এবং বাকিগুলোর কালেকশনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ক্যাশিয়ার কর্তৃক মসজিদের বার্ষিক হিসাবে এই ৬৭২ জন মুসল্লির অর্থ পেমেন্টের রেকর্ড রয়েছে। প্রতি মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সহ মসজিদ সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন থাকলে কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নেয়ার আহবান জানান হয়।
মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন বিষয়ে তারা বলেন, তিন তিনবার মিটিং করে রেজুলেশনের মাধ্যমে অনেক পূর্বেই ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতি মাসে ১০ ডলার প্রদানকারীরা শর্তসাপেক্ষে সদস্য। আর ১২০০ ডলার প্রদানকারীরা সংবিধান অনুযায়ী সদস্য নন।
সেক্রেটারী কর্তৃক স্পনসর প্রদান প্রসঙ্গে তারা বলেন, মসজিদের দীর্ঘ দিনের হাফিজ ইয়াকুবকে সর্বসম্মতিক্রমে শত শত মুসল্লির স্বাক্ষর সহ লেবার সার্টিফিকেশনের জন্য নিউইয়র্ক সিটির ডিপার্টমেন্ট অব লেবার এ আবেদন করা হয়েছিল দুর্ভাগ্য ক্রমে তা গৃহীত না হওয়ায় তিনি নিজ দেশে চলে যান। মসজিদের মাধ্যমে কাউকে স্পনসর কখনও করা হয়নি। মসজিদের সেক্রেটারি হিসেবে ইনভাইটেশন পত্র দেয়া হয়েছে মাত্র। মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী এবং মাওলানা আবু সুফিয়ান এসে মসজিদের জন্য প্রায় ৭০/৮০ হাজার ডলার কালেকশন করে সহযোগিতা করেছেন। আর আল্লামা মুহাম্মদ এমদাদুল হকের ভিসাই হয় নি। সেক্রেটারী কোনক্রমেই কখনো কাউকে স্পনসর দেননি।
এলাকাবাসীর সার্বিক সাহায্য সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদে নট ফর প্রফিট এর কোন নিয়ম অমান্য করা হয়নি।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মসজিদের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য ৫ লাখ ডলারের বিনিময়ে শাহ জাকারিয়া এবং সৈয়দ ইউসুফ আলীকে কন্ট্রাক্ট দেওয়া সংক্রান্ত তথ্যটি মিথ্যা।
সেক্রেটারী কোর্টের তারিখে মসজিদের ডোনেশনের কালেকশন বুক সাথে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, গত রামাদান মাসে সেক্রেটারী এককভাবে ২১৭ হাজার ডলার ডোনেশন ও কর্জে হাসানা কালেকশন করেছেন। যার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সেক্রেটারী ক্যাশিয়ারকে প্রদান করলে ক্যাশিয়ার সেক্রেটারীকে আরো ১৮৪৪ ডলার ফিরিয়ে দেন। এছাড়াও মসজিদ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই পর্যন্ত যা কালেকশন হয়েছে সেই সবেরও ডকুমেন্ট সেক্রেটারির বাসায় রক্ষিত ছিল, যা ডিএ অফিসের লোক নিয়ে যায়। তবে গত রামাদান মাসে সেক্রেটারী ২১৭ হাজার ডলার যে ডোনেশন বুক দিয়ে কালেকশন করেছিলেন সেই কালেকশন বুকগুলো অন্যত্র ছিল বিধায় ডিএ অফিসের লোক তা নিতে পারেনি। সেক্রেটারী কোর্টে যাওয়ার পূর্বে তার আইনজীবীদেরকে দুই বারই এই ডোনেশন বুকগুলো দেখানোর জন্য নিয়েছেন। কেননা প্রশ্ন আসতে পারে যে, সেক্রেটারী কিভাবে ১ মাসের ভিতর ২১৭ হাজার ডলার কালেকশন করলেন। এই তথ্যটা বের করার জন্যই সেক্রেটারীর আইনজীবী ডোনেশনের কালেকশন বইগুলো নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। বর্তমানে কালেকশন বইগুলো সেক্রেটারীর জিম্মায় রয়েছে। কেননা সেক্রেটারীর কেইস যখন ফাইনাল হবে তাকে তখন হয়তো ২১৭ হাজার ডলার কালেকশনের ডকুমেন্ট দেখাতে হবে।
ঠিকাদারকে আইনের আশ্রয়ে আনা সম্ভব হবে না সংবাদ পত্রে এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন এটি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। ঠিকাদারকে কোন অতিরিক্ত অর্থই দেয়া হয়নি। পেমেন্ট সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার পর ঠিকাদারকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারকে পেমেন্ট দেওয়ার সময় বর্তমান অভিযোগকারীরাও ছিলেন। ঠিকাদারকে যদি অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হয়েই থাকে সেজন্য সকলেই সমানভাবে দায়ী।
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, মসজিদের ব্যতিক্রম এসি ইউনিট নিয়ে যেটা করা হয়েছে তার জন্য এবং অন্যান্য ছোটখাট ভুলের জন্য পাঁচ হাজার ডলার জমা দিয়ে কনস্ট্রাকশন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এটর্নীর পরামর্শক্রমে নির্মাণাধীন কোম্পানিকে টার্মিনেট করা হয়েছে। এটর্নীর পরামর্শের ভিত্তিতেই নতুন মসজিদের কাজ সম্পূর্ণভাবে সম্পাদন করে অকুপেশন সার্টিফিকেট পাওয়ার পর ঠিকাদার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সেক্রেটারী সবুজ বাংলা গ্রোসারীর মালিক ছিলেন। শাস্তি এড়ানোর জন্য মসজিদকে ব্যবহার করেছেন এমন অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, সেক্রেটারী সমাজে একজন খুবই পরিচিত ব্যক্তি। নিউইয়র্কের গণ্যমান্য ব্যক্তি সহ সমাজের অনেকেই তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন।
বিবৃতিতে মসজিদের কিবলা সম্পর্কে বলা হয়, নতুন মসজিদের কিবলা শতভাগ সঠিক আছে। মসজিদের ইমাম সাহেব ধর্মীয় ব্যাখা দিয়ে এটি প্রমাণ করেছেন। ৯৬ মসজিদ, জ্যামাইকা মুলিম সেন্টার, কনি আইল্যান্ড মসজিদ, মক্কী মসজিদ, বসনিয়ান ইসলামিক সেন্টার সহ আরো অনেক মসজিদের তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী মসজিদের কিবলা সঠিক।
সভাপতি সৈয়দ জামিন আলী এবং সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন তাদের বিবৃতিতে আরো বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শের উপর ভিত্তি করেই এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে সবার এবাদত বন্দেগীসহ ধর্মীয় সকল কাজকর্ম করার ব্যবস্থাও রয়েছে। অনেক পরিশ্রম করে মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে পেনি পেনি কালেকশন করে ৫তলা বিশিষ্ট মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। কেবল মসজিদের নতুন কমিটিতে কিছু লোক সংযোজন করার কারণেই আড়ালে থাকা একটি মহল কমিটির গুটি কয়েকজনের সাহায্য সহযোগিতায় পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন অপপ্রচার সহ নতুন কার্যকরী কমিটি নিয়ে সমাজের শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমরা চিহ্নিত গুটি কয়েকজন লোক ব্যতীত এলাকার সবাইকে এই মসজিদে সংযুক্ত করতে চাই। তাই সকলের কাছে আকুল আবেদন আপনারা কোন গুজব বা মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হয়ে পূর্বের মতোই মসজিদের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।