ঠিকানা রিপোর্ট : নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টার নিয়ে নানা খেলা শুরু হয়েছে। এক পক্ষ সাংবাদিক সম্মেলন করে অনিয়মের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বহিরাগতদের ষড়যন্ত্র থেকে মসজিদকে হেফাজত করার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন আমরা তা করবো। সাংবাদিক সম্মেলনে এবং সভাপতি- সাধারণ সম্পদকের বিবৃতিতে রাজনীতির কথা না আসলেও শুনা যাচ্ছে মসজিদ নিয়েও রাজনীতি শুরু হয়েছে। একপক্ষের অভিযোগ মসজিদটি আওয়ামী লীগ দখল করছে, আরেক পক্ষের অভিযোগ মসজিদটি মুসলিম উম্মাহ দখল করতে যাচ্ছে। আবার ধর্মকেও টেনে আনা হয়েছে। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে নর্থ ব্রঙ্কসে নানা ধরনের কথাবার্তা শুনা যাচ্ছে। কমিটির লোকজনের মধ্যেও উত্তেজনা চলছে। অন্যদিকে সাধারণ মুসল্লীদের ফরিয়াদ- আল্লাহর ঘর নিয়ে এই নোংরা খেলা বন্ধ হওয়া উচিত। সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত। কেউ চায় না এই মসজিদটি বন্ধ হয়ে যাক।
নিউইয়র্কের নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টারের বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং সেক্রেটারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং অসাংবিধানিক কার্যক্রমের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ১৩ মে সন্ধ্যায় নর্থ ব্রঙ্কসের ৩০৬১ বেইনব্রীজ এভিনিউর চার্চ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ আনা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মসজিদের অনেক অনিয়ম আছে যা সময় সাপেক্ষে যাবতীয় প্রমাণসহ তুলে ধরা হবে। অবিলম্বে এসব অনিয়ম এবং অসাংবিধানিক কার্যক্রম বন্ধ না হলে নিয়মতান্ত্রিক ও সংবিধান সম্মতভাবে মসজিদ পরিচালনার স্বার্থে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নর্থ ব্রঙ্কস জামে মসজিদ অ্যান্ড ইসলামিক সেন্টারের কোষাধ্যক্ষ শাহিন আহমদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুর রহমান, কার্যকরী সদস্য আনছার হুসাইন চৌধুরী, হাজী আব্দুর রউফ, মোহাম্মদ শামীম, সিরাজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান এবং আলহাজ্ব সোলাইমান ভূইয়া। সংবাদ সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অসাংবিধানিক ভাবে গঠিত মসজিদের বর্তমান কার্যকরী কমিটির অপতৎপরতা বলা বাহুল্য। দুর্নীতি বলতে কেবল অর্থ আত্মসাতকেই বুঝায় না। অন্যায়য়ের সাথে আপোষ, কর্তব্যে অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার, জনগণের অর্থের অপচয় এবং বিবেকের সাথে প্রবঞ্চনা – এসবও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। আমরা চাই আল্লাহর ঘর পরিচালনায় কোন ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতি থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কিছুদিন আগে সভাপতি সৈয়দ জামিন আলী এবং সেক্রেটারী মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন কর্তৃক বিলিকৃত প্রচার পত্রই প্রমাণ করে যে তারা কতটুকু অসাংবিধানিক ভাবে মসজিদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। প্রচার পত্রে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংখ্যার কর্যকরী কমিটির গঠন সাধারণ সভার মাধ্যমে হয়েছে বলে উল্লেখ আছে। মসজিদের সাধারণ সদস্য কারা এবং এক মুসল্লাহ নামাজের জায়গা ক্রয়কারীদের অবস্থান এবং তারা আদৌ সাধারণ সদস্যের অন্তর্ভূক্ত কিনা তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে বহু বছর আগে হতে মাসিক ১০ ডলার বা তার উর্ধ্বে চাঁদা প্রদানকারী এলাকাবাসী আজ পর্যন্ত কোন সাধারণ সভার আহবান পাননি সেক্ষেত্রে সেই সব সাধারণ সদস্য কারা তাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রচার পত্রের মাধ্যমে সভাপতি এবং সেক্রেটারী সুন্নী মতাদর্শের ব্যাখ্যা দিয়ে মসজিদের মুসল্লীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে আলীম-উলামাদের আমেরিকায় আনতে সেক্রেটারী কর্তৃক মসজিদের পক্ষে স্পন্সর করা হয়েছে, যদিও বিষয়টি সেক্রেটারী অস্বীকার করেছেন। সেক্রেটারী কর্তৃক মসজিদের পক্ষে স্পন্সর করার প্রমাণ পত্র আমাদের কাছে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, গত ৩০ এপ্রিল শবে বরাতের রাতে সেক্রেটারী মুসল্লীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বিদায়ী ঠিকাদার তার পাওনার অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে গেছে, যার পরিমাণ প্রায় দু’শ ষাট হাজার ডলার। উল্লেখিত ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের আশ্রয় নেয়ায় মুসল্লীদের দানকৃত অর্থের অপচয় হয়েছে। ঠিকাদারের কাজের পূর্বেই এত বড় অঙ্কের অর্থ অগ্রিম প্রদান করা সেক্রেটারীর আর্থিক অনিয়মের সামিল।
সংবাদ সম্মেলনে মসজিদের কিছু অসাংবিধানিক কার্যক্রম তুলে ধরে বলা হয়, সংবিধান মোতাবেক প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বার্ষিক সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে কমিটির বার্ষিক কার্যক্রম সম্পর্কে মুসল্লী তথা এলাকাবাসী অন্ধকারে আছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মসজিদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কার্যকরী কমিটির মেয়াদ এক বছর। সেই প্রেক্ষিতে প্রতি বছর কার্যকরী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি কার্যকরী কমিটির নির্বাচন সাধারণ সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে কি না আমরা কমিটির সদস্য হয়েও অবগত নই।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বছর মসজিদের আয়-ব্যয় হিসাব অডিট হওয়ার কথা। এই অডিট রিপোর্ট সাধারণ সভায় সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদন ক্রমে সাধারণ সদস্যদের কাছে পেশ করার বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত কোন অডিট কমিটির মাধ্যমে মসজিদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করা হয়নি। ফলে মসজিদের মুসল্লীদের প্রদানকৃত চাঁদার অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা তার অডিটকৃত পরীক্ষিত প্রমাণ নেই।
সেক্রেটারী কমিটির সদস্যদের সামনে মসজিদের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন। মসজিদটি সকলের সাহায্যে ও সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত। সেই ক্ষেত্রে মুসল্লীদের পরামর্শ এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া এই মসজিদের জন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা মোটেই যুক্তিসংগত এবং সংবিধান সম্মত নয়। উল্লেখিত অনিয়ম এবং অসাংবিধানিক কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে নিয়মতান্ত্রিক ও সংবিধান সম্মতভাবে মসজিদ পরিচালনা করার স্বার্থে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিবৃতি
সভাপতি সৈয়দ জামিদ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এই বিবৃতিতে জানান, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টারের কার্যকরি কমিটির সদস্য, মুসল্লী এবং এলাকাবাসীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ২০ এপ্রিল আমাদের মসজিদে একটি প্রচারপত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যাতে আমাদের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরি কমিটির ৯ জন সদস্যের নাম আমাদের চোখে পড়ে। তবে হাজী আব্দুর রউফ বাংলাদেশে রয়েছেন এবং আব্দুল গফুর তার নাম প্রচারে অনুমতি প্রদান করেননি। ১৯৯৫ সাল থেকে এই মসজিদের সভাপতি সৈয়দ জামিল আলী এবং সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইনসহ সর্বপ্রথম কমিটিতে আমরা ছিলাম, পরবর্তীতে তা বর্ধিত করে ১১, ১৭, ২১ সদেস্যের করা হয়। গত ২২ বছরে মসজিদের সাহায্য সহযোগিতা এলাকাবাসীই করছেন। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমেল ওলামা এনে ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয়। আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী এবং আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আল কাদরীকে আনার সময় সেক্রেটারি আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছিলেন। যা কোনভাবেই স্পন্সর নয়। নতুন ৫ তলা মসজিদ বর্তমানে সম্পূর্ণ হওয়ার পথে, যেখানে প্রতি শুক্রবারে ৮০ থেকে ৯০ জন লোকের প্রয়োজন। যা ২২ জনের পক্ষে সম্ভব নয়। মসজিদ কমিটি বর্ধিত করা হয়েছে আইন অনুযায়ী এবং যারা বাকি রয়েছেন তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে কমিটিতে নেয়া হবে। যারা প্রচার করছে কমিটিতে সমস্যা আছে, তা আমাদের সৃষ্টি নয়। কমিটিতে কোন সমস্যা নেই। তারা আরো বলেন, মসজিদের স্বার্থে এবং বহিরাগতদের ষড়যন্ত্র থেকে মসজিদকে হেফাজত করার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা আমরা করবো। মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকায় বিভ্রান্ত সৃষ্টি করবেন না। এ ছাড়া ১৯৯৫ সাল থেকেই হিসাব স্বচ্ছভাবে চলছে।