
মোস্তফা কামাল : ভেজাল খুঁজে হয়রান। ভেজালেও ভেজাল। নিজে ছাড়া সব জাল-ভেজাল। চারদিক মন্দে ভরা। ধর্মের নামে অধর্ম। বকধার্মিক ব্যস্ত গন্ডগোলে। চেতনার দোকানদারি। চেতনার সাথে ধর্মের আজব সংঘর্ষ। স্বস্তি কোথায়? মোটামোটি সাংবাদিকরাই ভালো। নাহ, সেখানেও গলদ। এরা জম্মের খারাপ। দলবাজিতে মশগুল। তাহলে পুলিশ? ওরা তো আরো খারাপ। ধরাবান্ধার ব্যবসা করে। হয়রান করে নীরিহ মানুষকে। ডাক্তার? একদম কসাই। বাঁচলে বাটে। মরলেও ছাড়ে না। ইঞ্জিনিয়ার? আরো বাজে। ওদের কাছে টাকাই সব। টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। তাহলে উকিলরা ভালো? ওরা তো শকুন। একবার যারে ধরে, শেষ না করে ছাড়ে না। তাহলে সলিড কে?
সরকারি-সেরকারি সাধারণ চাকরিজীবীরা সাদামাটা। নির্ভর করা যায়। নাহ, একদম না। ঘুষখোর। কাজ নিয়ে গেলেই আটকে দেয়। কিছু না দেয়া পর্যন্ত ফাইল ছাড়ে না। রাজনীতিবিদ? ওরে বাবা! ওরাই তো সব নষ্টের গোড়া। তাহলে কর্পোরেট জব করা লোকেরা? আস্ত নব্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি। তাহলে ব্যবসায়ী? কারো আগেপিছে থাকে না। কামায়, খরচও করে। কিসের ভালো ওরা? দিনভর থাকেই ভেজালের কারবার নিয়ে। ব্যাংকার? আরে ধ্যাৎ, ব্যাংকাররা তো সুদের কারবারী। কবি-সাহিত্যিক? ওরা তো ধান্দাবাজ। হুদামিছা কিচ্ছা লেখে। গালগল্প বানায়। শিল্পী-অভিনেতারাই ভালো? নষ্টের হাড্ডি। আলেম-ওলামারা? নাউজুবিল্লাহ-আসতাগফিরুল্লাহ, এগুলো কাঠমোল্লা। দাওয়াত আর ফাও খাওয়া ছাড়া কোন কাজ আছে তাদের?
বেকাররাই তাহলে আসল ভালো? কিসের ভালো? বখাটে, আকামলা। কাজকামে ঠনঠন। বাকি থাকলো কে, কারা? কেউ বাকি নেই। তা’হলে? তারপর? তার আর পর নেই। যার বা যাদের আর পর নেই, তাদের কোনো বুঝ মানানো সম্ভব?
গোটা সমাজের অবস্থা এখানেই ঠেকেছে। কিছু বলতে যাওয়াও বিপজ্জনক। অবশিষ্ট মান-ইজ্জত খোয়ানো নিশ্চিত। কোনো ফিল্টারেও সাফ হবার নয়। জঙ্গল দিন দিন ছোট হয়ে এলেও এই গাছেরা কুড়ালকেই আপন ভাবে। কারণ কুড়ালের হাতল কাঠের তৈরি। তাই কুড়াল তো গাছেদেরই কেউ! মূর্খের গলার আওয়াজের কাছে তাই মান-ইজ্জতবানদের চুপ থেকে আত্মরক্ষা ছাড়া উপায় কী?
অল্প বিদ্যার বাহাদুর বা মূর্খ্য দুষ্টুদের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করা চলমান সময়ের কতো কঠিন কাজ ভুক্তভোগীরা হাড়ে-হাড়ে মালুম করেন। মাত্রাতিরিক্ত বাচালতা, অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক-অবান্তর আলোচনা, বিতর্কে জড়ানো কিছু মানুষের নিত্য স্বভাবে পরিণত হয়েছে। অন্যের মতামতকে অসম্মান, তিরস্কার করাই তাদের মগজে ঘোরে। এদের জ্ঞানহীন পাণ্ডিত্যের কাছে ধরাশায়ী হবেন, না সাইডলাইনে থাকবেন?
সৃষ্টিকর্তা একমাত্র মানুষকেই উপযুক্ত জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি-প্রজ্ঞা ও যোগ্যতা দান করেছেন। অন্য কোনো সৃষ্টিকে তা দেননি। এ জন্যই মানুষকে বলা হয় আশরাফুর মাখলুকাত। অন্য সব সৃষ্টির উপরে এখানেই মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব। জ্ঞানীর সঙ্গ নিয়ে শিক্ষালাভের পাশাপাশি অযাচিত জ্ঞানদান থেকে মুক্তির খোঁজ কে দেবে? অন্তত নষ্টের গোড়া খোঁজা বাদ দিয়ে নিজেকে নিরাপদ রাখার ঠিকানা কোথায়?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।