বিশ্বচরাচর ডেস্ক : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা গত ৯ মার্চ বলেছেন, ‘আমরা সম্ভবত কোনোদিনই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করতে পারব না’। ব্রেক্সিট নিয়ে তার নতুন পরিকল্পনাটি যদি এমপিরা অনুমোদন না করেন তবে শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট নাও হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। তেরেসা মে এমপিদের পুরনো তিক্ততা ঝেড়ে ফেলে ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার আহŸান জানান। তিনি একই সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত (আইরিশ ব্যাকস্টপ) নিয়ে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আরও নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা ইইউকে মনে করিয়ে দেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির একাংশ এবং শরীক দল ডিইউপির এমপিরা চাইছেন ব্রেক্সিট পরিকল্পনায় সমর্থনের বিনিময়ে আইরিশ ব্যাকস্টপ ইস্যুতে প্রয়োজনীয় ছাড় আদায় করে নিতে। মে ৯ মার্চ সৈকত শহর গ্রিমসবেতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলেন, কমন্স সভার সদস্যরা এখন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। হয় তারা তার ব্রেক্সিট পরিকল্পনা সমর্থন করবেন অথবা করবেন না। পরিকল্পনাটি সমর্থন না করার অর্থ হবে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আদৌ সম্পন্ন না হওয়া বা এখন যেমন আছে সেভাবে ব্রিটেন ইইউর সঙ্গে থেকে যাবে।
মে বলেন, ‘পরিকল্পনাটিতে আপনারা সমর্থন দিন, ব্রিটেন ইইউ থেকে নির্বিঘেœ বেরিয়ে আসুক। যদি আপনারা এটি সমর্থন না করেন তবে কোনো চুক্তি ছাড়াই আমাদের বেরিয়ে আসতে হতে পারে অথবা এমনও হতে পারে যে, কোনো চুক্তিই হলো না। তখন ইইউ থেকে বেরোনোর পর ব্রিটেনের স্বার্থ রক্ষার কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না। অথবা ব্রেক্সিট নাও হতে পারে।’ তিনি এমপিদের স্মরণ করিয়ে দেন যে ২০১৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত গণভোটে ৩ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ তাদের মত জানিয়ে দিয়েছিল। সেটি ছিল ইইউ ত্যাগ করা। মে বলেন, ‘এটি কেবলমাত্র পার্লামেন্ট বা মন্ত্রী ও এমপিদের নিজস্ব বিষয় নয়, এটি পুরো দেশের ব্যাপার। বিশেষ করে ওই সমস্ত লোকের যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। আমরা একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এই চাওয়া যেমন যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিল তাদের একইভাবে যারা এর বিপক্ষে ভোট দেয় তারাও এটি চায়। রাজনীতিবিদদের কাছে জনগণ এটিই প্রত্যাশা করে যে, তারা দেশের স্বার্থে সুবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত নেবে। এমন কিছু তারা করবে না যাতে দেশ পিছিয়ে যায়। মে যুক্তি দেখান নতুন পরিকল্পনাটি বাণিজ্য, সীমান্ত ও অভিবাসনসহ সবদিক দিয়ে ব্রিটেনের স্বার্থের অধিকতর অনুক‚ল হবে।
আইরিশ ব্যাকস্টপ নিয়ে ইইউর কাছ থেকে শেষ মুহূর্তে ছাড় আদায় করতে মে’র অ্যাটর্নি জেনারেল জেওফ্রি কক্স চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে ব্রাসেলস সফরে যান। এ ছাড়া ইইউ ছাড়ার পর ব্রিটেন কতদিন কাস্টম ইউনিয়নে থাকবে সেটি নির্ধারণ করাও তার এ সফরের আরেকটি উদ্দেশ্য। ইইউর সঙ্গে নভেম্বরে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো না গেলে ব্রিটেনকে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাস্টম ইউনিয়নে থেকে যেতে হতে পারে।
মে গত ৭ জুলাই তার ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার যে নতুন নীলনকশা তিনি তৈরি করেছেন তার প্রতি দল ও ব্যবসায়ীদের সমর্থন আদায় করতে তিনি ব্যর্থ হন। তা সত্তে¡ও ২৫ নভেম্বর ব্রাসেলসে ইইউ নেতৃবৃদ ওই পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। কিন্তু সেটি অনুমোদন না করার জন্য গো ধরেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত তারা ১২ ডিসেম্বর মে’র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও মে সেটি উতরে যান। জানুয়ারি কমন্স সভার সদস্যরা এর বিপক্ষে ভোট দেন। ব্রেক্সিট পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে চলতি বছর তার অনেক মন্ত্রী ও এমপি পদত্যাগ করেছেন। আগামী বছর ২৯ মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়া দীর্ঘ সূত্রতায় ঝুলে যেতে পারে।