
ঠিকানা রিপোর্ট : কয়েক দিন ধরেই চলচ্চিত্রপাড়া সরগরম চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক প্রযোজকের কিছু অভিযোগ নিয়ে। রহমত উল্লাহ নামের ওই প্রযোজকের দাবি, তিনি শাকিব খান অভিনীত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক। শাকিব খানের বিরুদ্ধে তিনি অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।
১৫ মার্চ প্রযোজক রহমত উল্লাহ লিখিত আকারে বিস্তর অভিযোগ জমা দেন প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে। এরপর বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টায় ১৬ মার্চ ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় বসেন শাকিব খান ও রহমত উল্লাহ। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসও। কিন্তু সেখানে কোনো সমঝোতা হয়নি।
গত ১৮ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। সেদিন রাতে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গুলশান থানায় যান শাকিব। প্রায় আড়াই ঘণ্টা বসে থেকে তিনি মামলা না করেই ফিরে আসেন। এরপর তিনি ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে মামলা করেছেন। সে সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শাকিব দাবি করেন, ওই প্রযোজক ভুয়া, মিথ্যাবাদী। তিনি শাকিবের নামে মিথ্যাচার করে পালিয়ে গেছেন।
তবে শাকিব খান ডিবি পুলিশের কাছে যেসব তথ্য দিয়েছেন, সেসব অভিযোগ ভুল বলে জানিয়েছেন অনেকে। পুলিশ ইনভেস্টিগেশন করে মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্ষণকারী শাকিব খান মাতাল হয়ে অ্যানি সাবরিনকে যোনি ও পায়ুপথে নির্মমভাবে যৌনাচার চালিয়েছেন- এমন অভিযোগ সামনে আনার কারণে প্রযোজক রহমত উল্লাহকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে মারার পরিকল্পনা করার কথাও একটি সূত্রে জানা গেছে। পরে বাধ্য হয়েই দেশ ত্যাগ করতে হয় সেই প্রযোজককে।
তবে বিপক্ষেও অস্ট্রেলিয়া থেকে মন্তব্য করেছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি পালিয়ে আসিনি। কাজের টানেই অস্ট্রেলিয়া এসেছি। কারো ভয়ে পালিয়ে আসিনি। আমি আবার আসব। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো সকল প্রমাণ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে গণমাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের একটি রিপোর্ট পাঠান প্রযোজক। ২৬ পৃষ্ঠার সেই পিডিএফ ফাইলে দেখা যায়, বর্বর এক ধর্ষণের বর্ণনা। পুলিশের নথিতে উঠে এসেছে মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী অ্যানি সাবরিন নিজেই। মামলার সাক্ষী প্রযোজক রহমত উল্লাহ। যাকে রিপোর্টে অ্যানির ‘আংকেল’ উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ম্যাথিউ জন ক্রুকসন। মামলাটি করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট জর্জ পুলিশ স্টেশনে। রিপোর্টে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত শাকিব খান ওরফে রানা। ক্যারিয়ারের প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার এই নায়ক। শাকিব খানের বিষয়ে পুলিশ রিপোর্টে এমন তথ্যই মিলেছে।
পুলিশ রিপোর্টে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নভোটেল দ্য গ্র্যান্ড প্যারেড অ্যাপার্টমেন্ট ৭২১ ব্রাইটন লা স্যান্ডস হোটেল কক্ষে রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অ্যানিকে ধর্ষণ করেন শাকিব খান। সে সময় ওই নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক। পুলিশ সেই প্রতিবেদনে আরও বলেছে, শাকিব খান রানা একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা। ভুক্তভোগী অ্যানি সাবরিন তার আঙ্কেল রহমত উল্লাহর ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেন। সাবরিন ও উল্লাহ বাংলাদেশি সিনেমার কাজ শুরু করেছে। যার শুটিং অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় শাকিব খানের সঙ্গে অ্যানি সাবরিনের প্রথম দেখা হয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। এর পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া শাকিব খানের নিয়মিত ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, খাওয়া-দাওয়া ও যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করেন অ্যানি।
এদিকে শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন তার অস্ট্রেলিয়ান আইনজীবী উপল আমিন। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, শাকিবের বিরুদ্ধে প্রযোজক রহমত উল্লাহর আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। উপল আমিন জানিয়েছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির সেন্ট জর্জ গোয়েন্দা কার্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা মাইকেল বাগ তাকে শাকিব খানের ব্যাপারে চারটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে আছে ১. শাকিব খানের নামে কখনো কোনো মামলা হয়নি অস্ট্রেলিয়ায়। ২. শাকিব খানকে কখনো কোনো ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার করা হয়নি। ৩. যেহেতু তিনি গ্রেফতার হননি, সেহেতু ওনার পালানোর কথা আসেই না। এ ব্যাপারে পুলিশের তদন্ত শেষ এবং এই বিষয়টি পুরোপুরি নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। ৪. শাকিব খানের নামে কখনো কোনো অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছিল না।
অন্যদিকে অভিনেতার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন শাকিবপত্নী ও চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী। ২০ মার্চ বিকেলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি নিয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরেন নায়িকা। বুবলী লেখেন, ‘শাকিব খান একজন অভিনয়শিল্পী, যে কিনা প্রায় ২৪ বছর এই বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করেছেন। অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, সিনেমা নিয়ে ভেবেছেন। হঠাৎ করে বিভিন্ন ধরনের ইস্যু এনে তাকে নিয়ে নানান বিতর্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে!’
এত বছর আগের অভিযোগ, তখন কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? বুবলীর প্রশ্ন, ‘আচ্ছা শুটিং চলাকালীন এত এত অভিযোগ যখন টের পেয়েছিল ওনারা, তাহলে কেন তখন তাকে বাদ দেওয়া হলো না? সমিতিগুলোতে অভিযোগ করা হলো না? দুই পক্ষের কথা শোনা হলো না?’
ঘটনা ঘটার দুই বছর পর শাকিব পুনরায় শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া যান। তিনি যদি অপরাধী হতেন, তাহলে পুলিশ তাকে শুটিংয়ের অনুমতি দিত না কিংবা শাকিব নিজেও যেতেন না বলে জানান বুবলী।