ঠিকানা রিপোর্ট : ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নারীদের অবস্থান রাজনীতিতে ও আদালতে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হলো। এ বছরই প্রথম একজন অশ্বেতাঙ্গ, ভারতীয় মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া নারী কমলা হ্যারিস প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন। তিনি আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। এর পাশাপাশি জিল বাইডেন হতে যাচ্ছেন প্রথম শিক্ষক ফার্স্ট লেডি, যিনি এর আগেও দুবার সেকেন্ড লেডি ছিলেন। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আবারও হাউস স্পিকার হতে পারেন বলে এখন পর্যন্ত খবর রয়েছে। তিনি যদি আবার হাউস স্পিকার হন, সেটা হবে আরো একটি নতুন ইতিহাস। টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার।
এদিকে এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ও হাউসে বিভিন্ন স্টেট থেকে নারীরা নির্বাচিত হয়েছেন। পুরুষদের পাশাপাশি তারাও সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেক জায়গায় তারা পুরুষ প্রার্থীদের হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হওয়ার ইতিহাসও রয়েছে বেশ কয়েকজনের। এর মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও, ইলহান ওমরের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন নারী নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে এ বছরই মারা যান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ বেদার গ্রিন্সবার্গ। তিনি চলতি বছর ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ফ্লোরিডার বিচারপতি, সাবেক আইনবিষয়ক অধ্যাপক ও বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেট। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও বিজ্ঞতার সাথে তার নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে সফলভাবে পাস করেন। তাকে নিয়োগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ডেমোক্র্যাট পার্টির সিনেটররা তাকে ভোট দেননি। তবে তাকে কনফার্ম করার সিনেট হিয়ারিংয়ে ডেমোক্র্যাটিক সিনেট সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। তাকে যে কজন প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছেন, এর মধ্যে সিনেটর কমলা হ্যারিসও ছিলেন। অ্যামি কোনি ব্যারেট নির্বাচনের কয়েক দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগলাভ করেন ও শপথ গ্রহণ করেন।
নারীদের এসব পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিভিন্ন দেশের নারীসমাজ। তারা মনে করেন, নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৩ পদের দুটিতেই নারী। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নেবেন কমলা হ্যারিস। হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ফলে স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ন্যান্সি পেলোসি।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকেই ভয় পেতেন, বলা যায়। তিনিই প্রথম নারী স্পিকার নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৭ সালে প্রথমবার স্পিকার হন। এরপর ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি দায়িত্ব নেন হাউস স্পিকারের। তিনি বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। ২৬ জন নারী বর্তমানে মার্কিন সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এবারের নির্বাচনে পুরুষদের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য নারী প্রার্থী ছিলেন। জেড সিমন্স এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। তিনি বহু-হাইফেনেটেড নারী। একজন প্রাক্তন বিউটি কুইন, পেশাদার কনসার্টের পিয়ানোবাদক, প্রেরণাদায়ী স্পিকার, রেপার, মা এবং নিযুক্ত পাদরি। তিনি বলেন, তার লক্ষ্য অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক এবং অপরাধমূলক বিচার সংস্কারের মাধ্যমে সমান সুযোগ তৈরি করা।
রুটগারস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান উইমেন অ্যান্ড পলিটিকসের (সিএডব্লিউপি) বরাতে দ্য হিলের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১১৭তম কংগ্রেস সদস্য হিসেবে ১৩১ জন নারী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে ১০০ জন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে বাকি ৩১ জন রিপাবলিকান। কংগ্রেসে বর্তমানে ১২৯ জন নারী সদস্য রয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১০৬ জন নারী (ডেমোক্র্যাট ৮৩ জন ও রিপাবলিকান ২৩ জন) প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান কংগ্রেসে সংখ্যাটি ছিল ১০২। এখন পর্যন্ত পরিষদের সকল আসনের ফল পুরোপুরি প্রকাশিত হয়নি।
এবারের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে যেমন রেকর্ড হয়েছে, তেমনি নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও রেকর্ড হয়েছে। মোট ৫৮৩ জন নারী নির্বাচনে লড়াই করেন। প্রেসিডেন্ট পদেও নারী প্রার্থী ছিলেন। সিনেটেও নারীর সংখ্যা এবার বাড়তে পারে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এবার ২৫ জন নারী সিনেট সদস্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন ডেমোক্র্যাট এবং বাকি ৮ জন রিপাবলিকান। ২০২১ সালে মার্কিন কংগ্রেসে রেকর্ড সংখ্যক নারী দায়িত্ব পালন করবেন। কমপক্ষে ১২৯ জন নারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ও সিনেটে যোগ দিতে চলেছেন। রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এগলটন ইনস্টিটিউট অব পলিটিকসের ইউনিট দ্য সেন্টার ফর আমেরিকান উইমেন অ্যান্ড পলিটিকসের (সিএডব্লিউপি) তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে প্রথম রেকর্ডটি ভেঙেছিল, যখন মার্কিন কংগ্রেসে ১২৭ জন নারী দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মার্কিন হাউসে কমপক্ষে ৮৩ জন ডেমোক্র্যাটিক এবং কমপক্ষে ২১ রিপাবলিকান নারী দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। ফ্লোরিডার ২৬তম এবং ২৭তম ডিস্ট্রিক্টে ডেবি মুকার্সেল-পাওয়েল এবং মারিয়া এলভিরা সালাজার শীর্ষস্থানীয়, যা রিপাবলিকান নারীদের সংখ্যা ২৩ এবং হাউসে মোট নারীর সংখ্যা ১০৬। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ অনুসারে মোট ৩৬৬ জন নারী মার্কিন প্রতিনিধি বা সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মন্টানার প্রতিনিধি জ্যানেট রাঙ্কিন প্রথম নারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯১৭ সালে ৬৫তম কংগ্রেসে তিনি যোগদান করেছিলেন। মার্কিন নারী সিনেট অনুসারে প্রথম নারী সিনেটর ছিলেন ৮৭ বছর বয়সী রেবেকা লতিমার ফেল্টন, যিনি ১৯২২ সালে জর্জিয়ার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর টমাস হার্ডউইক দ্বারা শূন্য আসনে নিযুক্ত হন।
কেবল ২০২০ সালের নির্বাচন মার্কিন কংগ্রেসে আরও বেশি নারীকে এনেছে তা নয়, বৈচিত্র্যও এসেছে। ইলহান ওমর, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, রাশিদা তালিব এবং আয়ান্না প্রেসলি, যিনি নিজেকে দ্য স্কোয়াড বলে অভিহিত করেছেন, তারা সবাই ২০১৮ সালে হাউসে যোগদানের পর এ বছর পুনরায় নির্বাচন করে জিতেছেন। এই স্কোয়াডের সদস্যরা সবাই প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট। তিনজন নেটিভ আমেরিকান নারী এ বছর নির্বাচন বা পুনরায় নির্বাচনের মাধ্যমে জিতেছেন।
নারীদের অবস্থান সুদৃঢ় হওয়ার অনন্য নজির
মার্কিন নির্বাচন-২০২০