মোহাম্মদ এন মজুমদার : নিউইয়র্ক শহর ইমিগ্র্যান্টদের স্বর্গভূমি। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ইমিগ্র্যান্টরা বসবাসে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। সানসুয়ালী তথা প্রগ্রেসিভ সিটি হিসেবে খ্যাত এই শহরে বসবাসকারী জনগণ সকল রাজনীতিবিদদেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সবার অনুকম্পা ও আদরপ্রাপ্ত নিউইয়র্ক স্টেট এবং নিউইয়র্ক সিটি। বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টদেরও সিংহভাগ এই নিউইয়র্ক শহরেই বসবাস করেন। বাংলাদেশের দুই প্রধান দলের রাজনীতিও এখানে অনেকটা বলতে গেলে বাংলাদেশের মতোই সরব।
এখানে বাংলাদেশের মতো শহর, মহল্লা ও ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। বাংলাদেশি সকল জাতীয় অনুষ্ঠান এখানকার দূতাবাসসমূহ ও কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ কখনো ভিন্ন ভিন্নভাবে, আবার কখনো সম্মিলিতভাবে পালন করে থাকে। সব অনুষ্ঠানই দেশ ও জাতিকে তাঁদের জাতীয় সত্ত্বা, ভাষা, সাংস্কৃতি ও ইতিহাস জানতে সহায়ক হয়।
তবে, যখনই এই প্রবাসে থেকেও আমরা আমাদের দেশকে নিয়ে বিভাজনের রাজনীতিতে লিপ্ত হই তখন তা গৌরবের পরিবর্তে বিদেশে আমাদেরকে অন্য জাতির কাছে এমন কি আমাদের নিজ নিজ সন্তানেরা যারা এখানে বড় হয়েছে তাদের কাছেও আমরা লজ্জিত ও হেয় প্রতিপন্ন করে। ‘কেউ জয় বাংলা এবং জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিচ্ছে, অন্যান্য নেতার নাম উল্লেখ করছেন না, আবার আরেক দল বঙ্গবন্ধুর নাম ও ছবি কিছুই তাদের ব্যানার এবং পোস্টারে উল্লেখ করছেন না। তাদের স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’। কর্নেল ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের মনোনীত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়া স্বত্ত্বেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অনুষ্ঠানে ওসমানীর নাম উচ্চারণ করে না। যদিও বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। ‘তোমাদের যার যা আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর’ বঙ্গবন্ধুর ২৬ শে মার্চের এই ভাষণে গোটা জাতি তথা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা শিশু-কিশোর সর্বস্তরের জনগণই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। অনেকেই বেতনভোগী রেজিষ্ট্রিকৃত মুক্তিযাদ্ধা ছিলেন, আবার বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিনা পারিশ্রমিকে এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অনানুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাহায্য ও সহায়তা দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের শতকরা ৯৪ ভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে।
আজকে বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করা যেমন, ইতিহাস বিকৃত করা, একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপেক্ষ কাজ করা আপামর জনগোষ্ঠীকে বর্তমান সরকার বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীল দল হয়ে দলের বাইরে বা বর্তমান আওয়ামী লীগ বিরোধীদের অবদান অস্বীকার করাও ইতিহাস বিকৃতিহর শামিল।
পরমত সহিষ্ণুতা ও জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার মতো মানসিকতা যতদিন আমাদের মধ্যে না আসবে ততদিন আমরা জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো না। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় স্বার্থ দলের উর্ধ্বে রাখতে হবে।
আমাদের ফেলে আসা দেশের সহিংসতার রাজনীতি, প্রতিশোধের রাজনীতি ও ক্ষমতা দখলে হিংস প্রতিযোগিতার অবসান হোক এটাই প্রত্যাশা।
সবশেষে যারা এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন তাদের দেশীয় রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতা যেন পরস্পর বিরোধী এবং সাংঘর্ষিক না হয়, এতে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনাই রয়েছে।