
ঠিকানা রিপোর্ট : নিউইয়র্কে চলতি বছর উদযাপন করা হবে স্মরণকালের সেরা রবীন্দ্র উৎসব। আগামী ৬ ও ৭ মে অনুষ্ঠিতব্য উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসবকে ঘিরে গত ১৮ মার্চ এক সংবাদ সম্মলনে এ কথা জানান রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদের কর্মকর্তারা। আমেরিকায় বঙ্গ সম্মেলনখ্যাত ভারতীয় বাঙালিদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বঙ্গ সংস্কৃতি সংঘ বা কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল- সিএবি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠান বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আয়োজকরা।
উৎসবের আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান সাকীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসবের উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক বাঙালীর সম্পাদক কৌশিক আহমেদ।
তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে দু’দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ ড. রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মভূষণপ্রাপ্ত, নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে।
এছাড়া অনুষ্ঠানের বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থিত থাকবেন একুশ পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ভাষাবিজ্ঞানী ড. পবিত্র সরকার, ভারতীয় লেখক আলোলিকা মুখোপাধ্যায়, ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের বংশধর, শিল্প-ইতিহাসবিদ, খ্যাতিমান গ্যালারিস্ট সুন্দরম ঠাকুরকে উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
উৎসবে বিশেষ অতিথি উপস্থিত থাকবেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম, নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মো. মনিরুল ইসলাম ও ভারতের কনসাল জেনারেল রণধীর জয়সুয়াল। এছাড়াও ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৫টি অঙ্গরাজ্য থেকে কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, কলাকুশলী ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা অংশ নেবেন। বাংলাদেশি, ভারতীয়দের অন্তত ১৫টি সংগঠন উৎসবে অংশ নিচ্ছে। অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভাষাভাষী বিদেশি সংগঠনও পারফর্ম করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, নোবেলজয়ী প্রথম বাঙালি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ অভিবাসী জীবনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এ উদ্যোগ। দু’দিনের রবীন্দ্র উৎসবে আমরা এমন কিছু ব্যতিক্রমী আয়োজন করছি, যা উৎসবকে ভিন্নমাত্রা দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
দু’দিনের উৎসবে বাংলাদেশি-আমেরিকান শিল্পীরা রবি ঠাকুরকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরবেন তাদের চারুশিল্পের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব আঁকা ছবিও প্রদর্শনী হবে। উৎসব প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হবে রবি ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ তর্কে-বিতর্কে এবং বিদেশিদের চোখে রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
উৎসবে ‘তাসের দেশ’, ‘রক্ত করবী’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘ভানু সিংহের পদাবলী’ গীতি নৃত্যনাট্য এবং স্ত্রীর পত্র ও মিছে কোলাহল নামে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। রবীন্দ্র সংগীত গাইবেন নিউইয়র্কের শ্রীচিন্ময় সেন্টারের ৩০জন বিদেশি শিল্পী। উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান হবে শতকণ্ঠে। দেখানো হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অস্কারখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় নির্মিত একটি তথ্যচিত্র। নিউইয়র্কপ্রবাসী বরেণ্য সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরল বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে ডক্যুফিল্ম ‘স্টাডিরুম’ এবং সুমন মুখোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র ‘শেষের কবিতা’।
কৌশিক আহমেদ বলেন, বেশ কিছু নিরীক্ষাধর্মী অনুষ্ঠান আয়োজনেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যেমন রবীন্দ্র সংগীতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, কীর্তন, রাগ ও শাস্ত্রীয় সংগীতের ধারা প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ চরিত্রগুলো নিয়ে প্রীতি বিতর্ক, রবি ঠাকুরের জীবনে নারীর ভূমিকা শীর্ষক দুটি অনুষ্ঠান ‘ওরা সন্ধ্যার মেঘমালা’ এবং ‘কার মিলন চাও বিরহী’ পরিবেশিত হবে।
উৎসবে প্রখ্যাত ভারতীয় ভাইরোলজিস্ট (ভাইরাস বিশেষজ্ঞ), সেই সাথে দেবব্রত বিশ্বাসের শিষ্য, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অমিয় বন্দোপাধ্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন বিপা’র কর্ণধার সেলিমা আশরাফকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন বিপা’র কর্ণধার এনি ফেরদৌস ও পিনাকীসহ আরো অনেকে।