ঠিকানা রিপোর্ট : বিশ্বের রাজধানী হিসাবে সুপরিচিত নিউইয়র্ক এখন অপরাধের নগরী। চারদিকে লাগামহীন খুন, সন্ত্রাস, রাহাজানি চলছে। স্বস্তি পাচ্ছেন না নগরবাসী। সন্ত্রাস দমনে ভরসা যাদের ওপর, সেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জীবনও হুমকির মুখে। তারাও অনেক ক্ষেত্রে হয়ে পড়েছেন অসহায়। তবে নগর কর্তৃপক্ষ অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। পুলিশ বিভাগের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিউইয়র্কে গত ১০ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। একই সময়ে দস্যুতা সংঘটিত হয়েছে ৩১৭টি। ট্রানজিট সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে ৪০টি। হাউজিংয়ে অপরাধের ঘটনা ঘটেছে ১২১টি। গত বছর একই সময়ে অপরাধের মাত্রা তুলনামূলক কম ছিল। অর্থাৎ প্রতিবছর নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধ বেড়েছে। বিশেষ করে দস্যুতা বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। এ বিষয়টি নগরবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, নিউইয়র্কে দস্যুতা ছাড়াও গ্যাংভিত্তিক অপরাধ বেড়েছে। একসময় যেসব গ্যাংয়ের অবস্থান ছিল সিটির বাইরে, এখন তারা সিটির বিভিন্ন বরোতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করছে।
আয়তন ও জনসংখ্যার আধিক্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নিউইয়র্ক সিটি। একসময় শান্তির শহর হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। এরপর সময়ের বিবর্তনে অপরাধের স্বর্গরাজ্যও হয়েছে। সুশাসনে আবার শান্তি ফিরে এসেছে।
এদিকে ১৭ এপ্রিল সোমবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান জিম জর্ডান নিউইয়র্ক সিটির অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির সমালোচনা করে বলেছেন, অপরাধ দমনে নজর না দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
এর আগে নিউইয়র্ক পুলিশের সাবেক কমিশনার হাওয়ার্ড সাফির নিউইয়র্কের অপরাধ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলেছেন, ‘আমরা খারাপ পুরনো দিনে ফিরে যাচ্ছি।’
২০২১ সালে সদ্যবিদায়ী মেয়র বিল ডি ব্ল্যাজিও’র শাসনামলে, নিউইয়র্ক সিটিতে পাঁচ শতাধিক লোক খুন হয়েছেন, যা গত এক দশকের রেকর্ড ভেঙেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য তখন ব্ল্যাজিও’র পুলিশ ডিফান্ডিং নীতিকেই অনেকে দায়ী করেছিলেন। সে সময় মনোবল ভেঙে পড়েছিল নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের। সেই রেশ চলছে এখন এরিক অ্যাডামসের আমলেও।
ব্রুকলিনের কমিউনিটি সংগঠক টনি হার্বার্ট সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর আগে গত পাঁচ বছরে নগরীর অপরাধপ্রবণতা কমে আসছিল। হঠাৎ করে মাত্রাহীন অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এমন পরিস্থিতি নিজের জীবনে আর দেখেননি বলে জানান এ সংগঠক। তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র আইনের সংস্কার করতে হবে। অবৈধ অস্ত্রের জন্য বিচারে কোনো ছাড় না দিয়ে ন্যূনতম ১০ বছরের কারাদণ্ড নিশ্চিত হলেই নিউইয়র্কের সড়কে অস্ত্র সহিংসতা কমবে বলে মনে করেন তিনি।
নিউইয়র্ক সিটির ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন ‘পার্টনারশিপ ফর নিউইয়র্ক সিটি’র প্রধান ক্যাথরিন ওয়াইল্ড বলেছেন, মেয়র হওয়ার আগে তিনি সিটিকে নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত করতে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পূরণ করা বাস্তব জীবনে কঠিন হলেও নগরবাসীর অবাধে চলাফেরার ন্যুনতম নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
নগরবাসী তাকে নির্বাচিত করেছে বিশ্বাস করে এবং এখন তাকে তার নীতি নির্ধারক ও নীতি কার্যকর করার জন্য দায়িত্বশীলদের সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে। কারণ অপরাধ এখনই ঠেকানো না হলে অপরাধীরা আস্কারা পেয়ে যাবে।
অপরাধ দমনে মেয়র এরিক অ্যাডামস যে পদ্ধতির কথা বলছেন, তার মধ্যে রয়েছে- পুলিশের সম্প্রসারিত ভূমিকা পালন। ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ বলেছেন যে পুলিশের উচিত ছোটখাট অপরাধে গ্রেফতারকৃতদের কারাগারে দীর্ঘ সময় আটকে না রেখে মারাত্মক অপরাধীদের আটকে রাখার জন্য অনুরূপ মামলা দায়ের করা। এমন কি তিনি নগণ্য অপরাধের কারণে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বন্ধ করতেও পরামর্শ দিয়েছেন।
মেয়র অ্যাডামস আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট অপরাধ মোকাবিলার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ নিয়োগে সংস্কার আনার বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তবে এসব বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে কোনো কিছুই বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব হবে না বলে অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন।