ঠিকানা রিপোর্ট: নিউইয়র্কে প্রবাসীদের দেয়া এক সংবর্ধনায় বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের সহকারী এটর্নী জেনারেল এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেছেন, মাদক-জঙ্গী মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খেলা-ধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা বিমুখ অলস হতাশাগ্রস্ত যুব সমাজ মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই মাদক-জঙ্গী মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খেলা বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এলক্ষে যুগান্তকারী পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে ব্রঙ্কসের আল আকসা পার্টি হলে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইউনাইটেড অর্গানাইজেশনস অব বাংলাদেশী-আমেরিকানস ইন নিউইয়র্ক। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের সদস্য আব্দুর রকিব মন্টুর যুক্তরাষ্ট্র সফর উপলক্ষে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এসময় তিনি প্রবাসীদের সাথে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
বাংলাদেশ-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও স্থানীয় কমিউনিটি বোর্ডের ফাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমদ।
আশরাফুল হাসান বুলবুলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্পোর্টস ফাউন্ডেশন অব নর্থ আমেরিকার সভাপতি ও স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকার সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাবেক জাতীয় খেলোয়ার অলিম্পিয়ান সাইদুর রহমান ডন, প্রবীণ রাজনীতিক মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সমাজ কর্মী ডা. শাহানারা আলী, স্টারলিং-বাংলাবাজার বিজনেস এসোসিয়েশন ও বাংলাবাজার জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াস উদ্দিন, আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সভাপতি আব্দুস শহিদ, বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাসিম হাসনু, সাবেক ফুটবলার গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশী-আমেরিকান উইম্যান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রেক্সোনা মজুমদার, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট হাসান আলী, আব্দুল বাছির খান, সাখাওয়াত আলী, মোঃ রফিকুল ইসলাম, জামাল হুসেন, এ ইসলাম মামুন, মোজাফফর হোসেন, আনোয়ারুল আলম ভূইয়া, নাসির উদ্দিন, হাসানাত আবদুল্লাহ, রকিবুল হাসান প্রমুখ।
পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাবাজার জামে মসজিদের খতীব মাওলানা আবুল কাশেম এয়াহইয়া।
অনুষ্ঠানে সাবেক ক্রীড়াবীদ বাংলাদেশের সাবেক দ্রুত মানব শাহজালাল মবিন, শাহাব উদ্দিন চৌধুরী, জাহানারা বেগম লক্ষী, মনোয়ারা বেগম মনি, আবদুর রউফ পাশা, ফেরদৌসী বেগম, ওয়াহিদ কাজী এলিন, শেখ আতিকুল ইসলামসহ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, পেশাজীবী সহ নানা শ্রেণী পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সাবেক কৃতি খেলোয়ার ও সংগঠক এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টুকে আয়োজকসহ অন্যদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান হয়।
এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু প্রবাসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৬ প্রবাসীকে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করেন। এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন : কামাল আহমদ, মোহাম্মদ এন মজুমদার, আব্দুর রহিম বাদশা, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আব্দুল হাসিম হাসনু এবং সাইদুর রহমান ডন।
সংবর্ধনা সভায় বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, ক্রিকেটের পাশাপাশি অ্যাথলেটিকসও এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে অ্যাথলেটিকস দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে। দীর্ঘ দিনের বন্ধ্যাত্ব শেষে বর্তমানে কৃতি খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, এক সময় অ্যাথলেটিকস বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিতি দিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশ সে অবস্থান থেকে ছিটকে পড়ে। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অ্যাথলেটিকসের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যদিও দায়িত্ব নেয়ার দু’বছরেও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন নি। ইতোমধ্যে অ্যাথলেটিক্সের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে অ্যাথলেটিক্সে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। অ্যাথলেটিক্সে আমুল পরিবর্তন আনতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। এজন্য সবার পরামর্শ চাই। সবার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে চাই। অ্যাথলেটিক্সককে এগিয়ে নিতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াব, চেয়ার আঁকড়ে রাখবো না। তিনি বলেন, দেশে অ্যাথলেটস না থাকলে অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অর্থহীন। তাই খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। আমরা দেশের সেরা খেলোয়ারদের পাশাপশি প্রবাসী খেলোয়ারদেরও মূল্যায়ন করতে চাই। যাতে দেশের সাথে প্রবাসের সেতু বন্ধন তৈরি হয়। তিনি বলেন, দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত রাখছে সরকার। খেলোয়ারকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে তার মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। অন্য কোন পরিচয়ে নয়।
তার সম্মানে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, এর মাধ্যমে দেশ ও সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ আরো বেড়ে গেল। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতিভা অন্বেষনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান ক্রীড়া প্রতি মন্ত্রী ১০ বছর সংসদে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ক্রীড়াঙ্গণকে তিনি অনেক দূর এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন এ প্রত্যাশা সকলের। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেলেও আরো উন্নতির জন্য শুধু সরকার নয় প্রবাসী সহ বেসরকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অ্যাথলেটিক্সকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়াড়ী কোটা বন্ধসহ ক্রীড়াঙ্গনের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে আরো বলেন, ভারতসহ অনেক দেশের সাবেক খেলোয়াড়দের জন্য চাকুরীসহ ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটি হয়ে ওঠেনি। এ নিয়ে গভীরভাবে ভাববার সময় এসেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে মন্টুসহ তার পরিবারের সাত সদস্যের সবাই জাতীয় পর্যায়ের কৃতী অ্যাথলেট। সিলেটে মন্টুদের পরিবার অ্যাথলেট পরিবার হিসেবে পরিচিত। সকলেরই ক্রীড়া ক্ষেত্রে রয়েছে অনন্য সাফল্যের নজির। যোগ্যতার ভিত্তিতেই বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টুকে ক্রীড়াঙ্গনের এ গুরু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দৃশ্যমান পরিবর্তনও লক্ষ করা যাচ্ছে অ্যাথলেটে। সভায় বক্তারা আব্দুর রকিব মন্টুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রবাস থেকে খেলোয়ারদের দেশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়ারও আহ্বান জানান। তারা মন্টুর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
বক্তারা ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে সিলেটের কৃতি সন্তান আব্দুর রকিব মন্টুকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রদানেরও দাবি জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের সদস্য সহকারী এটর্নী জেনারেল এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু গত ৫ ফেব্রুয়ারী এক সংক্ষিপ্ত সফরে নিউইয়র্কে আসেন।