নিউইয়র্ক : বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদা দিনে দিনে বাড়ছে। এক্ষেত্রে প্রবাসী লেখকেরা আরও ভূমিকা রাখতে পারেন। বিশ্বমানের লেখার সঙ্গে সেতুবন্ধ তৈরি ও অনুবাদপ্রবাহ বিশেষ জরুরি। দুইবাংলার পাশে প্রবাস মিলিয়ে ‘তিনবাংলা’ একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। এ আন্দোলন বিশাল বিশ্ব ও বাঙালির সেতুবন্ধনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ-প্রবাসের পাশাপাশি বৃহত্তর ভারতেও এর ব্যাপ্তি অবারিত হোক।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে এমন বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কবি সুবোধ সরকার। ভারতের সাহিত্য একাডেমি সম্মাননাপ্রাপ্ত এই কবি-অধ্যাপক প্রবাস-সাহিত্যকে বহুমাত্রিক বলে আখ্যা দেন।
‘কথা-কবিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলো তিনবাংলা, নিউইয়র্ক। উদ্বোধন করেন গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট কবি-কথাকার সালেম সুলেরী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন জার্মান-প্রবাসী লেখিকা নাজমুন্নেসা পিয়ারী। নিউইয়র্কের অধিকাংশ প্রধান লেখক-লেখিকা এতে অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন তিনবাংলার স্থানীয় আহ্বায়ক সংস্কৃতিসেবী নার্গিস আহমেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব কবি রওশন হাসান।
অনুষ্ঠানে সাহিত্যব্যক্তিত্ব সুবোধ সরকার নানা প্রশ্নের জবাবও দেন। ভারতের কবিতা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ও জনপ্রিয় কবি তিনি। ২০০২ সালে গুজরাটের সংখ্যালঘু হত্যার প্রতিবাদে কবিতা লিখেছিলেন। ভারতে গো-মাংস ভক্ষণে সরকারি নিষেধাজ্ঞার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানান। কবি-শিল্পী-সংস্কৃতিসেবীদের নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। মিডিয়ার সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে গো-মাংস ভক্ষণ করেন। বিষয়টি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট তথ্য মেলে ধরেন কবি-কথাকার সালেম সুলেরী। তিনি বলেন, তিনবাংলা তার জন্মসনেও কবি সুবোধকে পাশে পেয়েছে। ২০০৩-এ ঢাকায় তিনবাংলা-নিউজব্যাংক হলে তিনি গণমুখী কবিতা পড়েছিলেন।
কবি সুলেরী বলেন, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে শুদ্ধতার পক্ষে ‘তিনবাংলা’ সক্রিয়। ব্যাকরণ, প্রকরণ, বিশ্বমান আরোপে রয়েছে প্রশিক্ষণ কর্মশালা। নিউইয়র্কের সৃষ্টিকর্ম অনায়াসে ভারতে ও জার্মানে ছড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে অন্যদেশের অতিথিবৃন্দ ভূমিকা রাখতে পারেন।
অনুষ্ঠনে কথা-কবিতা পর্বে অংশ নেন ১১ জন লেখক-সংগঠক-সম্পাদক। নিউইয়র্কের প্রথম বাংলা সংবাদপত্র দিগন্ত-এর সম্পাদক কবি শামস আল মমিন, শব্দগুচ্ছ সম্পাদক কবি হাসান-আল আব্দুল্লাহ, উনবাঙাল-এর কর্ণধার কবি-কথাসাহিত্যিক কাজী জহিরুল ইসলাম, কবিতালাপ গোষ্ঠী-খ্যাত কবি সৈয়দ কামরুল, দেশকণ্ঠ সম্পাদক ও স্থানীয় প্রেসক্লাব সভাপতি কবি-কথাশিল্পী দর্পণ কবির, উত্তর অ্যামেরিকা ‘প্রথম আলো’তে কর্মরত লেখক-সাংবাদিক মনিজা রহমান, কবি-গীতিকার জুলী রহমান, সাহিত্য একাডেমি’র পরিচালক মোশাররফ হোসেন, বিশিষ্ট লেখক সুরীত বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা-আলোকচিত্রী-সংগঠক কাজী সফিকুল হক, কণ্ঠশিল্পী বাবলী হক প্রমুখ।
মুখ্য অতিথিকে বিশেষ শুভেচ্ছা জানান প্রখ্যাত গীতিকার-সাংবাদিক জীবন চৌধুরী, স্কলাসটিকা টিউটোরিয়ালের কর্ণধার এম. রেজা, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন বড়ুয়া, সাপ্তাহিক আজকাল-এর নির্বাহী সম্পাদক শাহাবউদ্দিন সাগর প্রমুখ।
প্রিয়দিন-জন্মদিন ও প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিশেষ পর্ব ছিলো অনুষ্ঠানে। এক্ষত্রে শ্রদ্ধা জানানো হয় তিনজন লেখক-গবেষক-কবিকে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কবি আহসান হাবিব ও কবি আল মাহমুদ। অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট কবির কবিতা আবৃত্তি করেন তিন প্রবাসকবি- জুলী রহমান, রওশন হাসান ও মনিজা রহমান।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে কবি নাজমুন্নেসা পিয়ারী বলেন, আমি অভিভূত। গত জানুয়ারিতে ঢাকায় তিনবাংলা’র সাহিত্য সম্মেলনে ছিলাম। ভারত-বাংলা থেকে ৪৩জন অংশ নিয়েছিলেন। নিউইয়র্কেও জমজমাট অবস্থা। এবার জার্মানিতেও তিনবাংলা’কে চাই।
অনুষ্ঠান সভাপতি নার্গিস আহমেদ বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান। ভারত-অ্যামেরিকার ইংরেজির অধ্যাপক কাম কবি আমাদের মাঝে। তিনবাংলার প্রবাস-বাংলায় লড়াই-এর গল্প অনেক। কবি সুবোধ সরকার আজ তিনবাংলা’র সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করলেন। অনেক দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন। আশা করি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা নতুন ইতিহাস গড়তে পারবো।
অনুষ্ঠান শেষে হস্তান্তর করা হয় ‘তিনবাংলা সম্মাননা’। গ্রহণ করেন কবি সুবোধ সরকার ও কবি নাজমুন্নেসা পিয়ারী। উভয়ের হাতে নানা উপহারও তুলে দেন ভক্ত-সুহৃদবৃন্দ।
প্রতিউত্তরে কবি সুবোধ বলেন, এতো নিউইয়র্ক নয়। মনে হচ্ছে বাংলার মাটিতেই অবগাহণ করছি। তা কলকাতা হোক, আর ঢাকাই হোক। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।