ঠিকানা রিপোর্ট: নিউইয়র্কের প্রায় ৩৫ হাজার প্যারোলী ভোটাধিকার লাভ করেছেন। ডেমক্র্যাটিক দলীয় ক্ষমতাসীন গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমোর এক নির্বাহী আদেশের বলে প্যারোলে থাকা নিউইয়র্কবাসীরা উক্ত অধিকার লাভ করেছে বলে ২১ এপ্রিল জানা গেছে।
ম্যানহাটনে রেভারেন্ড আল শার্পটন আয়োজিত এক কনভেনশনে গভর্নর ক্যুমো বলেন যে প্যারোলীদের ভোট দেয়ার অধিকার প্রদানে তিনি আইনসভার সদস্যমণ্ডলীর অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নন। ক্যুমো বলেন, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্যারোলে থাকা অবস্থায় কেউ ভোট দিতে পারবে না তা মেনে নেয়া যায়না। গভর্নর ক্যুমো আরও বলেন, আপনি নির্ধারিত মেয়াদের কারাভোগ করেছেন, আপনি আপনার ঋণ পরিশোধ করেছেন। এতদসত্ত্বেও আপনার ভোটাধিকার নেই- এমনটি হতে পারেনা।
অবশ্য ইস্ট নর্থপোর্ট থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলীয় সিনেট ম্যাজরিটি লীডার জন ফ্লানগান গভর্নরের ঘোষণাকে একতরফা হুকুম এবং পরোক্ষ উপায় অবলম্বনে লেজিসলেটিভ পাওয়ার এড়িয়ে যাওয়া হিসেবে অভিহিত করেছেন। আইনসভার সদস্যদের সাথে রুদ্ধদ্বার নেগোশিয়নে ইস্যুটি উত্থাপিত হয়েছিল বলে ক্যুমোর জনৈক এইডের বক্তব্যকেও আলবেনীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাহা মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন ফ্লানগান। তিনি ক্যুমোর পদক্ষেপকে হাস্যাস্পদ ও খারাপ পাবলিক পলিসি হিসেবেও মন্তব্য করেন। পরোক্ষ উপায় অবলম্বনে লেজিসলেটিভ পাওয়ার এড়িয়ে যাওয়ায় তিনি গভর্নর ক্যুমোর পদক্ষেপকে অবৈধ বলেও অভিহিত করেন। তিনি বলেন, মোদ্দাকথা, আমাদের লেজিসলেচারের প্রয়োজন নেই।
এদিকে গভর্নর পদে ডেমক্র্যাটিক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সিন্থিয়া নিক্সন বলেন, গভর্নরের উক্ত আদেশ থেকে প্রমাণ মিলে যে সমগ্র নিউইয়র্কের প্রকৃত ডেমক্র্যাটদের ভোটে গভর্নরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগ্রহী কমিউনিটিকে তিনি ভয় পান। নিক্সন আরও বলেন.আইনসভার সদস্যমন্ডলীকে পাশ কাটিয়ে গভর্নর অন্যদের মতামত উপেক্ষা করেছেন। তিনি নির্বাহী আদেশে একে আইনে পরিণত করেছেন। নিক্সন আরও বলেন, গভর্নরের নতুন লাফালাফির তেমন গুরুত্ব নেই। তিনি আরও বলেন, প্যারোলীদের আর্লী ভোটিং এবং অটোমেটিক রেজিস্ট্রেশনে প্রবেশাধিকার দেয়ার মাধ্যমে ৮ বছর আগেই নিউইয়র্কে ভোটারদের দমিয়ে রাখার ব্যবস্থার অবসান হয়েছে। লক্ষ্যণীয়, ন্যাশনাল কনফারেন্স অব স্টেট লেজিসলেচারদের নভেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নিউইয়র্কসহ মোট ২২টি স্টেটে কারাবরণের সময় এবং কারামুক্তির কিছু সময় পরও ফেলনদের ভোটাধিকার নেই।
যাহোক, প্যারোলীদের কন্ডিশনাল পার্ডনস (শর্তসাপেক্ষ ক্ষমা) মঞ্জুরে ক্যুমো অস্বাভাবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তারা ভোটাধিকার লাভ করবে। তবে প্যারোলের অপরাপর শর্তের ব্যাপারে ক্যুমো কোন ধরনের ছাড়া দেননি। এর ফলে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার প্যারোলী ভোট প্রয়োগের ক্ষমতা পাবে। এক্সিকিউটিভ অর্ডার ১৮১ এর আওতায় প্যারোলীরা ভোট দেয়ার জন্য লোকাল ইলেকশন বোর্ডে পুনঃ তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমোদন পাবে।
বক্তব্যে ক্যুমো আরও বলেন, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত স্টেট সিনেটকে এ বছর তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভোটের মাধ্যমে প্যারোলীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়ার জন্য। তবে প্যারোলীদের ভোট দানের অধিকারের ব্যাপারে কোন প্রস্তাব স্টেট সিনেটে আসেনি। কিংবা স্টেট বাজেটেও এটি অন্তর্ভূক্ত করার জন্য ক্যুমো প্রকাশ্যে কোন কথা বলেন নি। এ ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যা চাওয়া হলে, ক্যুমোর জনৈক এইড জানান আইনসভার সদস্যদের সাথে রুদ্ধদ্বার নেগোশিয়েশন বৈঠকে এটি আলোচিত হয়েছিল।
ব্যালট লাইন থেকে নিক্সনের নাম প্রত্যাহার
ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টীর স্টেট ডাইরেক্টর বিল লিপটন বলেছেন যে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ডেমক্র্যাটিক প্রাইমারীতে গভর্নর ক্যুমোর নিকট নিক্সন হেরে গেলে তবে নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ব্যালট লাইন থেকে সিন্থিয়া নিক্সনের নাম বাদ দেয়া হবে। আলবেনীর ক্যাপিটল প্রেসরুম রেডিও শোকে লিপটন বলেন, বিগত ২০ বছরে ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টী কখনও ব্যর্থতার দায় কাঁধে নেয়নি। আমাদের ডিএনএতে ব্যর্থতা নেই। লিপটন বলেন, নিক্সন প্রাইমারীতে হেরে গেলে পার্টীর নেতৃবৃন্দ নিক্সনের সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং ওয়ার্কিং ফ্যামিলির স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
নির্বাচন আইনজীবী মার্টিন কনর বলেন, ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টী নিক্সনকে স্টেট লেজিসলেচার আসনের জন্য মনোনয়ন দিয়ে তাকে গভর্নর পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখতে পারে। নভেম্বরের অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টীর নিজস্ব অটোমেটিক ব্যালট স্ট্যাটাস বজায় রাখতে হলে পার্টীকে কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোট আকৃষ্ট করতে হবে। কারণ বড় ২ দলের বাইরে, কোন প্রার্থীকে তৃতীয় পার্টী সমর্থন জানাতে হলে কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোটার আকৃষ্ট করতে হয়।
সিয়েনা কলেজ জরিপ প্রতিবেদন:
এদিকে ২০ এপ্রিল প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে গভর্নর ক্যুমোর জনপ্রিয়তা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। এতদসত্ত্বেও নিক্সনের তুলনায় ক্যুমো ঢের সুবিধেজনক অবস্থানে রয়েছেন। সিয়েনা কলেজ পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে ডেমক্র্যাটদের মধ্যে ক্যুমো ৫৮%-২৭% ব্যবধানে নিক্সন থেকে এগিয়ে রয়েছেন। অবশ্য এর আগের মাসে তাদের ব্যবধান ছিল ৬৬%-১৯%। আর ভোটারদের মধ্যে ক্যুমোর কর্মকান্ডের অনুমোদনের হার ৪৯% এবং তার প্রতি বিরূপ ভাবাপন্নের হার ৪৪%। অবশ্য বিগত ৮ বছরের মধ্যে ক্যুমো জনপ্রিয়তা কখনও এত নিচে নেমে আসেনি। আবার ডেমক্র্যাটদের মধ্যে ৬২% অদ্যাবধি ক্যুমোকে অধিকতর পছন্দ করেন। আবার স্টেট ভোটারদের ৪৪% জানিয়েছেন যে তারা ক্যুমোকে তৃতীয়বারের মত গভর্নর হিসেবে পেতে চান। অন্যদিকে ৪৭% জানান যে তারা তৃতীয় কাউকে গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত করতে চান। এছাড়া সিংহভাগ ভোটার বলেছেন যে নিক্সন সম্পর্কে তাদের তেমন জানাশুনা নেই। তবে ৩৩% ভোটার নিক্সনের পক্ষে এবং ২৩% তার বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। একই জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে ক্যুমো রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী মার্কাস মলিনারোর চেয়ে ৫৭%-৩১% ব্যবধানে এবং জন ডিফ্রানসিস্কোর চেয়ে ৫৬%-৩২% ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। ১২-১৪ এপ্রিলের মাঝে জরিপকার্য পরিচালিত হয় বলে জানা যায়।