নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় কাটালেন আইজিপি

সমালোচকদের ‘বুড়ো আঙুল’

নিউইয়র্ক : জাতিসংঘ পুলিশপ্রধান লুইস লিবেরিও কারিলহে-এর সঙ্গে ড. বেনজীর আহমেদ। 

ঠিকানা রিপোর্ট : নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে জাতিসংঘে দুদিনের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফর করলেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। নিউইয়র্কে আসার পর তিনি শুধু জাতিসংঘে নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। কথা বলেছেন তার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে। কারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ভুল বুঝিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়েছে, সে বিষয়েও প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে কাটিয়েছেন ব্যস্ত সময়।
আইজিপির নিউইয়র্ক সফরে খুশী নিউইয়র্কের আওয়ামী ঘরানার প্রবাসীরা। তারা আইজিপিকে নাগরিক সংবর্ধনা দিয়েছেন। তাদের মতে, সমালোচকদের ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে গেলেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
গত ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কের গুলশান টেরেসে ‘যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটি’ আয়োজিত সংবর্ধনা সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে নিষেধাজ্ঞার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ না করে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘তারা অভিযোগ করেছেন ২০০৯ সাল থেকে নাকি র‌্যাব কর্তৃক ৬০০ লোক গুম হয়েছে। অথচ আমি র‌্যাবে ঢুকেছিলাম ২০১৫ সালে। তাহলে আমাকে কেন ওই তালিকায় নেওয়া হয়েছে? এজন্য আমি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অথবা আমেরিকানদের দোষারোপ করতে চাই না। কারণ, এটা করেছে তারাই, যারা সত্তর সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়নি, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৪টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত নিষেধাজ্ঞার জন্য।’

নিউইয়র্ক: জাতিসংঘে পুলিশ প্রধান লুইস লিবেরিও কারিলহে-এর সঙ্গে বৈঠক শেষে আইজি ড. বেনজীর আহমেদসহ অন্যান্যরা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা। মঞ্চে উপবেশন করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
আইজিপি বলেন, ‘২২ জন তথ্য সন্ত্রাসী রয়েছে। এদেরকে জবাব দিতে হবে। আপনি যে মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন, সেই বিশ্বাসে যদি চ্যাম্পিয়ন হোন, তাহলে আপনাকেই সেটি পালন করতে হবে।’
তথ্য সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে, তারা মানবতাবিরোধী যতসব অপপ্রচার চালাচ্ছে-মন্তব্য করে আইজিপি আরও বলেন, ‘নোংরা জিনিস ফেসবুকে দেখামাত্র ফ্লাশ করা দরকার। এর বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে উপস্থাপন করতে হবে-তাহলেই মিথ্যার পরাজয় ঘটবে।’
‘একসময় মনে করা হয়েছিল যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি আমরা’ এই প্রশ্ন রেখে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আশা করা হয়েছিল সমাজের তথ্যচিত্রটি সবিস্তারে উঠে আসবে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যত ভুয়া, আজগুবি তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।’
এদিকে নিউইয়র্ক সফরকালে আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস লিটল ইতালির কাঁকর রেস্টুরেন্টে এক ডিনার পার্টিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আইজিপি ড. বেনজির আহমেদের সম্মানে ডিনার পার্টি আয়োজন করেন বাংলাদেশ ক্লাবের যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি, নিউইয়র্ক মহানগর আওযামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাবু। সহযোগিতায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিন্দাল কাদির বাপ্পা, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, নুরুল আফসার সেন্টু, আব্দুল হামিদ, এম উদ্দীন আলমগীর, মাহফুজুল হায়দার।
ডিনার পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইকুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের আহ্বায়ক তারিকুল হায়দার চৌধুরী, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ শফিকুর রহমান।
এর আগে জাতিসংঘের চিফ অব পুলিশ সামিটে (ইউএনকপ) অংশ নিতে ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কে পৌঁছান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। তাকে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই সামিটে অংশ নেয়।
জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানের সঙ্গে বৈঠক: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশকে অন্যতম প্রধান পুলিশ সদস্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে জাতিসংঘ পুলিশ প্রধান লুইস লিবেরিও কারিলহো শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতি এবং পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্ব ও কর্মনিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ প্রশংসা করেন জাতিসংঘ পুলিশ প্রধান ।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রেস উইং জানায়, আন্তরিকতাপূর্ণ এ বৈঠকে পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। বৈঠকে পূর্ব তিমুর এবং হাইতিতে পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের যে উচ্চ পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ তিনি দেখেছেন তা উল্লেখ করেন পুলিশ প্রধান। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালি ও ডিআর কঙ্গোতে কর্তব্যরত বাংলাদেশি পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্বেরও প্রশংসা করেন তিনি।
বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে আসছে যা নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘ পুলিশ প্রধান।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের যে কোনো প্রয়োজনে সাড়া দিতে বাংলাদেশ পুলিশ সদা প্রস্তুত রয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকার ঝুঁকিপূর্ণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষ ও পেশাদারী বিশেষায়িত ইউনিট মোতায়েনের অনুরোধ জানান আইজিপি।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশ আগামী দিনগুলোতেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে মর্মে প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ পুলিশ প্রধান। জাতিসংঘের শান্তি পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক সহযোগিতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে ড. বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে পুলিশ প্রধানদের সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত ‘জাতিসংঘ পুলিশের অংশগ্রহণে টেকসই শান্তি ও উন্নয়ন’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন আইজিপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।
প্রসঙ্গত, আইজিপি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের গত ৯ ডিসেম্বর র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দফতর। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে।