নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে জঙ্গি হামলা নিহতদের তালিকা প্রকাশ

ঠিকানা ডেস্ক : বিশ্বে যতগুলো শান্ত দেশ আছে তার অন্যতম নিউজিল্যান্ড। এজন্য অনেক মানুষ অভিবাসী হয়ে সেখানে চলে যান শান্তিতে বসবাসের জন্য। কিন্তু সেই শান্তির দেশে দুটি মসজিদে গত ১৮ মার্চ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন মুসলিম। তাদের বেশির ভাগই অভিবাসী। নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড, লন্ডনের ডেইলি মেইল সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এমন তালিকা প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে তাদের ছবি, নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিসর, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিজি, জর্ডান, সৌদি আরব, সোমালিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

নিহতদের মধ্যে রয়েছে দুইটি শিশু ও ২টি কিশোর। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স মাত্র তিন বছর। তার নাম মুকাদ ইব্রাহিম। নিহত আরেকটি শিশু হলো আবদুল্লাহ দিরিয়া। তার বয়স ৪ বছর। নিহত দুই কিশোর হলো সায়েদ মিলনে (১৪) ও হামজা (১৬)। ওই তালিকায় আরো নিহতের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেনÑ ওসামা আদনান আবু কাইক (৩৭), মহসিন আল হারবি (৬৩), জিহান রাজা (৩৮), লিন্ডা আর্মস্ট্রং (৬৫), কামাল দারিশ (৩৯), মাহবুব খন্দকার (৬৫), খালেদ মুস্তফা (৪৫), ড. হারুন মাহমুদ (৪০), মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (৬৬), নাঈম রশিদ ও তার ছেলে তালহা (২১), হুসনে আরা পারভিন (৪২), আলি ইলমাদানী (৬৬), তরিক রহমান (২৪), সৈয়দ জাহানদাদ আলি (৪৩), মনির সোলায়মান (৬৮), ওজায়ের কাদের (২৪), মোহাম্মদ ইমরান খান (৪৭), আমাদ জামালুদ্দিন আবদুল গনি (৬৮), সৈয়দ আরীব আহমেদ (২৬), মাতুল্লাহ সাফি (৬৫), হুসাইন মোস্তফা (৭০), রমিজ ভোরা (২৮), লিলিক আবদুল হামিদ (৫৮), হাজী দাউদ নবী (৭১), ফরহাজ আহসান (৩০), মোহাম্মদ আলি ভোরা (৫৮), মোজাম্মেল হক (৩০), গোলাম হুসেইন (৬০), আত্তা ইলায়ান (৩৩), করম বিবি (৬০), হুসেইন আল উমারি (৩৬), মুসা ওয়ালি সুলেমান প্যাটেল (৬০), মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩৬), আবদেল ফাত্তাহ কাসেম (৬০), জুনায়েদ ইসমাইল (৩৬) ও আশরাফ আলী (৬১)। নিখোঁজ রয়েছেন জাকারিয়া ভুঁইয়া নামে এক অভিবাসী। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান ভুঁইয়া। তার মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ ও গৃহবধূ হোসনে আরা ফরিদ।

নিহতের তালিকায় থাকা ছোট্ট শিশু মুকাদ বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ওইদিন আল নূর মসজিদে গিয়েছিল। বাবা ও ভাই সেদিন পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারলেও শিশু মুকাদ জঙ্গি ব্রেনটন টেরেন্টের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আফগান বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী দাউদ নবী বীরত্বের সঙ্গে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন সেদিন। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো কিশোর সায়াদ মিলনে (১৪)। মায়ের সঙ্গে আল নূর মসজিদে তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটলো। আর মাঠে দেখা যাবে না সায়াদকে। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে আসা নাইম রশিদ (৫০) অনেকটা সময় বেঁচেছিলেন। তবে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় এই বীরের। নিহত হয়েছেন নাইম রশিদের ছেলে তালহা রশিদও। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল তার। সাত মাস বয়সী ও তিন বছর বয়সী দুই শিশুসন্তান রেখে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ভারতের হায়দরাবাদ থেকে আসা ফারহাজ আহসান। নিহত হয়েছেন সিরিয়া যুদ্ধে শরণার্থী খালেদ মোস্তফা। যুদ্ধে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর বুলেটের আওয়াজকে ত্যাগ করে শান্তিতে বাঁচতে নিউজিল্যান্ড এসেছিলেন তিনি। সেই অস্ত্র থেকে রেহাই পায়নি তার জীবন। এ ঘটনায় তার এক ছেলে নিখোঁজ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নাগরিক হুসাইন আল ওমারি (৩৫) ও জান্নাহ ইজাত রয়েছেন নিহতের তালিকায়। ঘটনার দিন সাত ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক আল নূর ও লিনউড মসজিদে ছিলেন। পাঁচজন নিরাপদে পালিয়ে আসতে পারেন। তবে নিহত হয়েছেন লিলিক আবদুল হামিদ।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

ঠিকানা ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় অর্ধশত মুসলিম শাহাদতবরণ করেন গত ১৫ মার্চ জুমার নামাজে। ইসলামভীতি, মুসলিমবিদ্বেষ ও অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণার আগুন নিয়ে চালানো হলো এ সন্ত্রাসী হামলা। এর প্রতিবাদে ক্ষোভে ও নিন্দায় সমগ্র বিশ্ব আজ সোচ্চার। বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন মুজাহিদুল ইসলাম ও আবু আফিফা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এ হামলার নিন্দা করেন এবং উগ্রতা ও সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে মিলে কাজ করার ব্যাপারে তার দেশের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি লিখেছেন, নিউজিল্যান্ডের জনগণ এবং সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানদের স্থান আমাদের অন্তরে রয়েছে এবং এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা তাদের দুঃখের সমান অংশীদার। জাস্টিস ট্রুডো আরও লিখেছেন আমাদের ইসলাম-ফোবিয়ার ওপর জয়ী হতে হবে। এমন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে যেকোনো ধর্ম, বর্ণ বা বংশের লোক নিজেদের নিরাপদ মনে করবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এক শোক বার্তায় বলেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা এর নিন্দা জানাই। রাষ্ট্রপতি এ ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
শোক-বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূলে নিউজিল্যান্ডসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা ও কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট টুইটে বলেন, আমার উষ্ণ সমবেদনা এবং শুভকামনা নিউজিল্যান্ডবাসীর জন্য। মসজিদে বর্বর হামলায় ঝরে গেছে ৫০টি প্রাণ। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টুইট করেছেন নিউজিল্যান্ডের সবার জন্য আমার ও মিশেলের গভীর সমবেদনা। আমরাও মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে এ ঘটনার নিন্দা জানাই। সব ধরনের ঘৃণার বিরুদ্ধে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে সবাইকে।
সাবেক মার্কিন ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন
টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন নিউজিল্যান্ড ও বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আমার হƒদয় কাঁদছে। ইসলাম-ফোবিয়া ও বর্ণবাদের চিরস্থায়ীকরণ ও স্বাভাবিকীকরণের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের সব নেতাকেই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সন্ত্রাসীদের নিন্দা জানানো উচিত। তাদের এ খুনে ঘৃণাকে যেকোনো মূল্যে থামাতেই হবে।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্তোনিও গুতেরেস
প্রার্থনারত মানুষের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন আমি গভীরভাবে শোকাহত। একদল শান্তিপূর্ণ প্রার্থনারত নিরীহ মানুষের ওপর এ হামলার নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা। মুসলিমবিরোধী ঘৃণা এবং সব ধরনের ভ-ামি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের আজ এবং প্রতিদিনই একতাবদ্ধ হওয়া উচিত।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে
টুইট বার্তায় এ নেতা বলেন, ক্রাইস্টচার্চে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নিউজিল্যান্ডের জনগণের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। এ ঘৃণ্য সহিংসতার শিকার প্রত্যেকের জন্য আমার হƒদয় কাঁদছে।
বাকিংহাম প্যালেস থেকে রানি এলিজাবেথ
ক্রাইস্টচার্চের ভীতিকর ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। জীবন হারানো মানুষগুলো পরিবারের প্রতি আমার ও প্রিন্স ফিলিপের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা। একই সঙ্গে আহতদের জন্য নিরলস কাজ করা জরুরি, সেবা ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল
এ নেতা বলেছেন ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনারত মানুষের ওপর হামলা যে কোনো সময়ই বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। হামলাটি মুসলমানদের ওপর হলেও এটি মূলত নিউজিল্যান্ডের গণতন্ত্র ও উন্মুক্ত ও সহনশীল সমাজের ওপর করা হয়েছে। আমরাও নিউজিল্যান্ডের এ মূল্যবোধগুলোর চর্চা করি এবং গভীর সমবেদনা জানিয়ে তাদের ওপর এ হামলার ভয়াবহতার সমান ভাগিদার হতে চাই। আমরা নিউজিল্যান্ডের জনগণের পাশে আছি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
ফ্রান্স সবসময়ই সবধরনের চরমপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বন্ধুদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ক্রাইস্টচার্চের মুসলমানদের জন্য গভীর সমবেদনা।
পোপ ফ্রান্সিস
নীতিহীন ও অর্থহীন এক সন্ত্রাসী হামলায় মানবজীবনের এ বিনাশে আমি গভীরভাবে ব্যথিত। নিউজিল্যান্ডবাসী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি একাত্মতা জানাচ্ছি।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ
এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এ নেতা বলেন এ ঘটনাটি আবারও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করতে একতাবদ্ধ করবে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদের সবধরনের রূপকে নষ্ট করার জন্য এক নীতিতে আসতে হবে। এ ঘটনা প্রমাণ করে, জঙ্গিবাদ যেকোনো সময়ে যেকোনো স্থানে মাথা উঁচু করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন
এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ক্রাইস্টচার্চের ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনায় আমি ভীত, শঙ্কিত। আমার কিউয়ি ভাইদের জন্য প্রার্থনা। পরে আরেকটি বার্তায় হামলাকারী অস্ট্রেলীয় এ কথা জানার পর যৌথ তদন্তের আগ্রহ প্রকাশ করেন স্কট মরিসন।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক
রাতারাতি ভয়ানক খবর এলো নিউজিল্যান্ড থেকে। যে সহনশীলতা ও বিনয়ের জন্য নিউজিল্যান্ড সবার কাছে সমাদৃত, ক্রাইস্টচার্চের এ সন্ত্রাসী হামলা তা কখনোই মুছে ফেলতে পারবে না।
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ
নিউজল্যান্ডের দুটি মসজিদে নিরপরাধ নামাজরতদের লক্ষ্য করে জঘন্য গণহত্যা সন্ত্রাসী কর্মকা-। সব দ্বীনধর্ম ও মূল্যবোধে অননুমোদিত সন্ত্রাস ও ঘৃণা প্রকাশকারী যেকোনো বক্তৃতা-বিবৃতি মোকাবেলা করা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি নিরপরাধ শহীদদের ওপর করুণা করুন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা দান করুন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদ ও ইসলাম-ফোবিয়ার শিকার মুসলিমবিশ্ব ও নিউজিল্যান্ডে এ সন্ত্রাসী ঘটনার শিকার সবার প্রতি আমার ও তুরস্কের জনগণের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি। যেসব নেতা ও মিডিয়া বিশ্বব্যাপী ইসলাম-ফোবিয়ার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, এ হামলার পেছনে তারাও দায়ী।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
এ নেতা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই। পরে এক টুইটবার্তায় ইমরান খান আরও বলেন, এ ঘটনার জন্য দায়ী ৯/১১-এর পর বিশ্বব্যাপী শুরু হওয়া ইসলাম-ফোবিয়া। যখন বিশ্বের কোথাও কোনো একজন মুসলমানের একটি সন্ত্রাসী কাজের জন্য বিশ্বের ১৩ বিলিয়ন মুসলমানকে দায়ী করা হয়।
সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহামেদ ফরমাজু
ক্রাইস্টচার্চের প্রার্থনারত মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ হামলা ইসলাম-ফোবিয়ার নিদর্শন এবং এ হামলার গভীর নিন্দা জানাচ্ছি। নিউজিল্যান্ড সরকারের সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াচ্ছি যেন তারা এ শোক কাটিয়ে উঠতে পারে। সন্ত্রাসবাদের অশুভ তৎপরতা রুখতে আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো
এ নেতা বলেন, ‘আমরা এই ধরনের সহিংস কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা জানাই।’ এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেছেন, ‘ইন্দোনেশিয়া সরকার হত্যার শিকার ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।’ এ হামলার সময় আল নুর মসজিদের ভেতরে ছয় ইন্দোনেশীয় মুসল্লি ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে তিনজন প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন।

সেদিন যা ঘটেছিল-

ঠিকানা ডেস্ক : গত ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূর ও লিনউড মসজিদে ঠা-া মাথায় পরিকল্পিত হামলা চালায় ব্রেনটন টেরেন্ট। শান্ত পায়ে অস্ত্র হাতে নিয়ে মসজিদে ঢুকে সে। এরপর সামনে যাকেই পায় তাকেই গুলি করে । ভেতরে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। গুলি শেষ হয়ে গেলে বারবার ম্যাগাজিন রিলোড করছিল সে। একপর্যায়ে মসজিদের মধ্যে থাকা আহতদের আবারো গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মসজিদের ভেতরে রক্তের বন্যা বাধিয়ে শান্তভাবে বেরিয়ে আসে হামলাকারী।

তার নৃশংসতার কবল থেকে কয়েক মিনিটের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা। গত ১৫ মার্চ জুমার নামাজ আদায় করতে তারা ওই সময় গিয়েছিলেন মসজিদে। ভেতরে রক্তে তখন সয়লাব। একজন নারী বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ভেতরে প্রবেশ করতে বারণ করেন। তার নিষেধেই তড়িঘড়ি করে ওই স্থান ত্যাগ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
ব্রেন্টন টেরেন্ট তার গত ১৫ মার্চের রক্তক্ষয়ী হামলার কারণ ম্যানিফেস্টোতে বিস্তারিত তুলে ধরেছে। এতে বলেছে, আরেক সন্ত্রাসী অ্যান্ডার্স ব্রেইভিকের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিউজিল্যান্ডে হামলা চালিয়েছে সে। একই সঙ্গে সে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান এবং লন্ডনের মেয়র সাদেক খানের মৃত্যু কামনা করেছে টেরেস্ট। ওই ম্যানিফেস্টোর নাম দিয়েছে সে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’।

মসজিদে হামলাকারীকে আদালতে তোলা হয়েছে : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে গুলি করে কমপক্ষে ৪৯ জনকে হত্যার প্রধান অভিযুক্ত ব্রেনটন টেরান্টকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে একটি হত্যাকা-ের অভিযোগ। গত ১৬ মার্চ আদালতে হাজির করার সময় তার পরনে ছিল কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত সাদা শার্ট। হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলেছে, তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রেনটন টেরান্ট বাদেও আরো দু’জন সন্দেহভাজন হামলাকারী রয়েছে পুলিশি হেফাজতে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিনদা আরডেন গত ১৫ মার্চের ওই হামলাকে উগ্র-সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর বলা হয়েছে প্রধান সন্দেহভাজন এই হামলাকারী যে অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে তা ছিল বৈধ, অর্থাৎ লাইসেন্সকৃত অস্ত্র। আরডেন আরো বলেছেন, যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকে কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই।

গত ১৫ মার্চের হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম দাউদ নবী নামে একজনের নাম প্রকাশ করেছে তার পরিবার। ৭১ বছর বয়সী নবী ১৯৮০ সালে আফগানিস্তান থেকে নিউজিল্যান্ডে যান। হতাহত অন্যদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। গত ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে জুমার নামাজরত শত শত মুসল্লির ওপর ওই হামলা চালায় সশস্ত্র বন্দুকধারী। এতে কয়েকজন জড়িত বলে বলা হয়। হামলায় আহত হয়েছেন ৪৮ জন। তার মধ্যে দুই বছর বয়সী এবং ১৩ বছর বয়সী দুটি শিশুও রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে এসব দেশের নাগরিকও রয়েছেন। ক্রাইস্টচার্চে ব্যাপক নিরাপত্তা বিরাজ করছে এবং দেশজুড়ে সকল মসজিদ বন্ধ রয়েছে।

নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে ৫

ঢাকা অফিস : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত ১৮ মার্চ রাজধানীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। নিহত বাংলাদেশিরা হলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, সিলেটের ফরিদ আহমেদের স্ত্রী হুসনে আরা আহমেদ, নারায়ণগঞ্জের ওমর ফারুক, চাঁদপুরের মোজাম্মেল হক ও নরসিংদীর জাকারিয়া ভূঁইয়া।

ওই হামলায় আহত লোকজনের মধ্যে কিশোরগঞ্জের মাসুদের স্ত্রী লিপির অবস্থা গুরুতর। তার আরেকটি অস্ত্রোপচারের দরকার হতে পারে। গাজীপুরের মোতাসসিম ও শেখ হাসান রুবেল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারা এখন আশঙ্কামুক্ত। ড. সামাদের পরিবার তাকে নিউজিল্যান্ডে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য তার বড় ছেলে বাংলাদেশ থেকে সেখানে যাচ্ছেন। হুসনে আরাকে সেখানে দাফন করা হবে, নাকি লাশ দেশে আনা হবে সে সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।

কেন এই হামলা-

ঠিকানা ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী একজন কট্টর শেতাঙ্গ বর্ণবাদী। তার নাম ব্রেনটন টেরেন্ট। ২৮ বছর বয়সী এ সন্ত্রাসী মুসলমান ও অভিবাসী বিদ্বেষী। তার মতে, মুসলমানরা ইউরোপের দেশগুলো দখল করে নিচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করতে এবং ইউরোপে ইসলামপন্থীদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে সে এ হামলা চালিয়েছে।
গত ১৫ মার্চ হামলার আগে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ৭৩ পৃষ্ঠার কথিত মেনিফেস্টো (ঘটনার কারণ) প্রকাশ করে ব্রেনটন। এতে সে মুসলমানদের দাস, সন্ত্রাসী ও দখলদার হিসেবে উল্লেখ করে।
অভিবাসী ও মুসলমানদের প্রতি চরম ঘৃণা প্রকাশ করে সে বলে, ইউরোপ থেকে অভিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে ‘মাতৃভূমি’ পুনরুদ্ধার করা তার লক্ষ্য। অন্য ধর্ম থেকে মুসলমানে পরিণত হওয়াকে সে রক্তের সঙ্গে বেইমানি বলে উল্লেখ করে।

ব্রেনটন লিখেছে, আমাদের ভূখ- কখনোই অনুপ্রবেশকারীদের ভূখ- হবে না। আমাদের মাতৃভূমি আমাদের এবং যতদিন পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গরা জীবিত থাকবে, তত দিন তারা আমাদের ভূখ- দখল করতে পারবে না। তারা কখনোই আমাদের লোকদের জায়গা দখল করতে পারবে না।
সে বলে, সংজ্ঞায়িত করলে এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। কিন্তু দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এটি একটি পক্ষপাতমূলক হামলা বলেই আমি মনে করি।
হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, হামলাকারী মৌলবাদী, কট্টর ডানপন্থী ও সহিংস সন্ত্রাসী ছিল। সে অস্ট্রেলিয়ায় হাজতবাসেও ছিল। দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপরাধসংক্রান্ত পুরনো রেকর্ড আছে। তার বাড়ি গ্রাফটন শহরে।

এ ভয়াবহ হামলা চালানোর জন্য ২ বছর ধরে পরিকল্পনা করছিল জানিয়ে ব্রেনটন আরও বলে, ৩ মাস আগেই সে ক্রাইস্টচার্চে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রেনটন টেরেন্ট তার কথিত মেনিফেস্টোতে নিজেকে একজন ‘সাধারণ শ্বেতাঙ্গ’ বলে উল্লেখ করে। সে লিখেছে, ২০১৭ সালে সুইডেনের স্টকহোমে সন্ত্রাসী হামলায় ১১ বছর বয়সী শিশু এব্বা অকারলান্ডের নিহত হওয়ার ঘটনার শোধ নিতে এ হামলাটি চালানো হয়েছে।
তার ভাষ্য, ‘স্টকহোমের ওই ঘটনাটিই আমাকে প্রথম এ ধরনের হামলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, বিশেষ করে ওই ১১ বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু। এব্বার মৃত্যু হয়েছে ‘দখলদার’দের হাতে আমি এ ধরনের হামলা এড়িয়ে যেতে পারি না।’

সে আরও লেখে, এটি ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপের ভূমিতে বিদেশি ‘দখলদার’দের কারণে শত শত মানুষের মৃত্যুর পাল্টা প্রতিশোধ।
মেনিফেস্টোতে ব্রেনটন টেরেন্ট আরও বলে, ২০১১ সালে নরওয়ের অসলোতে ৭৭ জনকে হত্যাকারী আন্ডারস ব্রেইভিকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সে এ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।
এছাড়া সে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলেও দাবি করে। এ হামলার ঘটনায় সে ট্রাম্পের উগ্র সমর্থক ক্যানডিস ওউনসের কাছ থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছে।
ব্রেনটন তার টুইটার অ্যাকাউন্টের হেডার ফটো হিসেবে যে ছবি দিয়েছে, সেখানে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের নিসে শহরে বাস্তিল ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত একজনের ছবি দেখা যায়। সেদিন জনতার ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়ার ঘটনায় ৮৪ জনের প্রাণহানি হয়েছিল।

নিউজিল্যান্ডে মাত্র ১ শতাংশ মুসলমান। তারপরও কেন এ দেশটিকে হামলার জন্য বেছে নেয় ব্রেনটন- এর কারণ হিসেবে সে লিখেছে, দেশটি ইউরোপের অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক দুর্গম। তারপরও এখানে দিন দিন মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। হামলার মাধ্যমে এ বিষয়ে সে সবাইকে সতর্ক করতে চেয়েছিল। নিজের পারিবারিক অবস্থা ও শৈশবের বেদনা উল্লেখ করে সে লিখেছে, আমি নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মেছি, বাবা-মা স্কটিশ আইরিশ এবং ইংলিশ ছিল, আমার কোনো নিয়মিত শৈশব ছিল না।

ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে প্রাণঘাতী হামলা চালাতে যখন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ব্রেনটন তখন লোক গান ও সামরিক সঙ্গীত শুনছিল। এরপর একটি সরু গলিতে গাড়িটি পার্ক করে রেখে অস্ত্র নিয়ে মসজিদের দিকে এগিয়ে যায় সে।
তার গাড়ি থেকে অন্তত ৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যে অস্ত্র-সরঞ্জাম নিয়ে ব্রেনটন টেরেন্ট ও তার সহযোগীরা হামলা চালিয়েছে সেখানে মুসলিমদের ওপর বিগত সাম্প্রদায়িক হামলার তথ্য তুলে ধরে এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহমূলক বিভিন্ন শব্দ-বাক্য দেখা যায়। হামলায় জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ চারজনকে আটক করলেও ব্রেনটনকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

রিনার স্মৃতিতে শুধুই ১৭ দিনের স্বামীসঙ্গ!

নরসিংদী : ২০১৬ সালে আগস্ট মাসে নববধূর সাজে সেজেছিলেন রিনা আক্তার (২০)। হাতের মেহেদির রঙ না শুকাতেই বিয়ের ১৭ দিনের মাথায় বিদেশে (নিউজিল্যান্ড) পাড়ি দেন স্বামী জাকারিয়া ভূঁইয়া। প্রায় আড়াই বছর বিদেশে থাকার পর এবার রমজানের ঈদে বাড়ি আসার কথা ছিল জাকারিয়ার। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বামীকে কাছে পাবেন, সেই স্বপ্ন মনে মনে বুনছিলেন রিনা। কিন্তু স্বপ্নই থেকে গেল তার ওই স্বপ্ন। গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন রিনা আক্তারের স্বামী জাকারিয়া ভূঁইয়া। স্বামী নিহত হওয়ার খবর শুনে রিনা আক্তার এখন শোকে স্তব্দ। নিজেকে সামলানোর কোনো শক্তি ও মনোবল যেন তার মধ্যে নেই।

রিনা আক্তার নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গাজারীয়া ইউনিয়নের সরকারচর গ্রামের আবদুল আলীর মেয়ে। প্রায় আড়াই বছর আগে ওই ইউনিয়নের জয়পুরা গ্রামের আবদুল বাতেন ভূঁইয়ার ছেলে জাকারিয়া ভূঁইয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়ের ১৭ দিনের মাথায় জাকারিয়া কাজের উদ্দেশে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে পাড়ি দেন। এর আগে জাকারিয়া দীর্ঘ আট বছর সিঙ্গাপুরে ওয়েল্ডার টেকনোশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরেজমিন জাকারিয়ার গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যদের মত শোকে স্তব্দ হয়ে আছেন জাকারিয়ার স্ত্রী রিনা আক্তারও। বার বার স্বামীর ছবিটি বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন তিনি। চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার স্বামীকে তোমরা এনে দাও।’ মেয়েকে সান্ত¡না দিতে ছুটে এসেছেন তার বাবা আবদুল আলী ও মা মজিদা বেগম। রিনা আক্তারের বাবা আবদুল আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সংসার জীবনের শুরুতেই মেয়ের জীবনে এত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে, তা কখনও ভাবিনি। সরকার যেন দ্রুত জাকারিয়ার লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।’