ছালাবত জাং চৌধুরী
ঐতিহাসিক সত্য এবং ভৌগলিক মৌলিক সত্যগুলির যেমন পরিবর্তন হয় না, তেমনি আর একটি সত্য এই যে, কালের চক্রে ইতিহাসের যেমন বিবর্তন ঘটে, তেমনি ভৌগলিকও কিছুটা বিবর্তন ঘটে। যেমন উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার মত একটা বিরাট দেশের ভৌগলিক সীমারেখার পরিবর্তন হয়ে দেশটি কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়। প্রতিটি রাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব সীমারেখা, সার্বভৌমত্ব এবং নিজস্ব পতাকা। যুগ যুগ ধরেই মানব সৃষ্ট পরিবর্তন বা রাজনৈতিক এই দৃশ্যপট একটি চলমান প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত এবং বিভিন্ন সীমান্তে রয়েছে প্রচণ্ড বিরোধ। পাকিস্তান, তিব্বত এবং লাদাখ সীমান্তেও রয়েছে প্রচণ্ড সীমান্ত বিরোধ। প্রায়শই এসব সীমান্তে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গেও সীমান্ত নিয়েও একটি ঘুমন্ত বিরোধ রয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ করছে না। বেরুবাড়ী, আঙ্গরপোতা, দহগ্রাম করিডোর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া চুক্তি মোতাবেক সম্পন্ন হয়েছে কিনা, বা কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে, সে সম্পর্কে জনগণ এখনও অন্ধকারেই আছে। অন্যদিকে ভারতীয় পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী ভারতের অভ্যন্তরে এবং কাশ্মীরে মুসলমান নিধনে যে অমানবিক হত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে, সে বিষয়েও বর্তমান সরকারের কোন জোরালো প্রতিবাদ এখনও দৃশ্যমান হয়নি। মুসলিমরা নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরোনের পথে ভারতীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিদারুণভাবে লাঠিপেটা হয়ে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছেন নামাজ পড়ার কারণে। এমন কি নামাজরত অবস্থায়ও এই হীন কাজটি নির্লজ্জের মত মোদী সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, যিনি ইতিমধ্যেই জননীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আপনার জানা উচিৎ যে, ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৯২ হাজার ৯৪৫ জন যোদ্ধাকে জীবন দিতে হয়েছে। তার মধ্যে ৬২ হাজার ৯৪৫ জন যোদ্ধাই মুসলমান। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরো বলেছেন যে, কোন উছিলায়ই মুসলমানদের উপর কোন প্রকার নিপীড়ন করা যাবে না। গরু জবাই বা রক্ত নিয়ে কোন প্রকার অত্যাচার মুসলমানদের করা যাবে না। এ নিয়ে যদি কোন সন্ত্রাসী কাজ পরিচালিত হয়, তবে তা কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এসব মুখের কথা বা মিথ্যার ফুলঝুড়ি না। ফেসবুকে ছবিসমেত অনেক প্রমাণ রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বসভা বা বড় বড় শক্তিধর দেশগুলিও কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া বা নিন্দা প্রকাশ করেনি। মুসলমানদেরকে যুদ্ধ করেই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে।
সৌদিফেরৎ নারী গৃহপরিচারিকা বাংলাদেশিদের যে করুণ কাহিনী বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোচিত বা প্রকাশিত সূত্রে জানা যায়, তা যেমন হৃদয়বিদারক, তেমনি অমানবিক। প্রতিদিন এই নারীরা ঐ পরিবারের প্রতিটি পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। এছাড়া শারীরিকভাবে প্রহার এবং খাওয়া না দেয়ার মত কঠিন যাতনাও তাদের সহ্য করতে হয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের অজানা নয়। একপর্যায়ে সরকার সৌদিতে মহিলা শ্রমিক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোথায় যেনো একটা দুর্বলতা কাজ করছে বলে মনে হয়।
বিভিন্ন সূত্র এবং ফেসবুকে বাংলাদেশের নূতন মানচিত্র প্রকাশের মাধ্যমে এটাই মনে হয় যে, বাংলাদেশের নূতন প্রজন্ম বাংলাদেশ নিয়ে নূতনভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করেছে। সেটি পশ্চিম বাংলার জনগণ ৫০-৬০ বছর আগেই পশ্চিম বাংলার স্বাধীনতার বার্তা দিয়েছিল। যে কারণে উলফা নামক একটি সংগঠনের সৃষ্টি হয়। যার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়া বর্তমানে ভারতীয় কারাগারে অন্তরীণ। কিন্তু চিন্তার কারণ অন্যত্র। ভারতের স্বাধীনতার ঊষালগ্নে তৎকালীন পাকিস্তানের নেতা জিন্নাহ ও ভারতীয় কুশীলবদের গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে বৃটিশ সরকারের অনুমোদিত দলিল মোতাবেক ভারতের এবং পাকিস্তানের সীমারেখা বাস্তবায়িত না হওয়া। মূলত করাচিকে পাকিস্তানের রাজধানী করা ও লারকানার জমিদারির এক বিরাট অংশ রক্ষার উদ্দেশ্যই এই ষড়যন্ত্রের একমাত্র কারণ। লারকানার জমিদার জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিতা ও পিতামহ এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। সমগ্র পশ্চিম বাংলা ভারতকে ছেড়ে দিয়ে জিন্নাহ সাহেব করাচি ও লারকানার জমিদারিকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। বৃটিশ সরকারের দলিল মোতাবেক সমগ্র পশ্চিম বাংলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। দীর্ঘ ৭০ বছর পর হলেও বাংলাদেশের তরুণ সাহসী প্রজন্ম এই গভীর ষড়যন্ত্র বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে বলেই মনে হয়। আপাতত বিষয়টি উদ্ভট, অলিক বা অনুর্বর মস্তিষ্কের বিকৃত চিন্তাচেতনার প্রকাশ মনে হলেও এই গভীর ষড়যন্ত্র একটা বড় ধরনের অপরাধ বলেই মনে করি। অন্যায়ের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা না থাকলেও প্রতিবাদ করার মৌলিক অধিকার সবারই আছে। পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলি বাংলাদেশের নিকটতম বন্ধু হিসাবে পরিগণিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় মরিয়া। অথচ চীন, রাশিয়া ও ভারতের অদৃশ্য ইঙ্গিতেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকার মিয়ানমারের মুসলিম নিধন এবং উচ্ছেদ অভিযান সংগঠিত করে। উন্নয়নের নামে এই দেশগুলি মিয়ানমারে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে রাস্তাঘাট, শিল্প কারখানা স্থাপন করে খুবই চতুরতার সাথে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে আত্মসাতের মহাপরিকল্না বাস্তবায়নে ব্যস্ত। পারস্পরিক যোগসাজসের মাধ্যমে এই নীলনকশা বাস্তবায়ন করার জন্যই প্রথমে রোহিঙ্গা বিতারণ একটি জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। কেননা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলিই খনিজ সম্পদের কেন্দ্রস্থল। এর আরো একটি দিক আছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখা এবং চীনের বলয়ে আটকে রাখা। অতি সতর্কতার সঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বহির্বিশ্বে সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা এ ধরণের আলামত কোথাও দেখা দিলে বিশ্বসভা তখন লেজ উঁচিয়ে তা বন্ধের আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে। প্রয়োজনে দিবারাত্র জরুরি সভা ডেকে যুদ্ধ বন্ধের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি দেখা দেয়, তবে তা বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার অঞ্চলেই সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অস্ত্র ব্যবসায়ী দেশগুলি নানা কৌশলে এ অঞ্চলে অস্ত্র বিক্রির বাজার সৃষ্টির ইন্ধন দিয়ে, অস্ত্র সাহায্য দিয়ে সহযোগিতা প্রকাশের চেষ্টা করাটাও বিচিত্র নয়। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের এ বিষয়ে আগাম সতর্ক চিন্তা-ভাবনা ও প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি।
-নিউইয়র্ক।