
ঠিকানা ডেস্ক: আমেরিকার অভ্যন্তরিণ নিরাপত্তা অধিকতর নিশ্চিত করার খাতিরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাশনাল ভেটিং সেন্টার স্থাপন বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এদিকে সাফক ও নাশাউ কাউন্টি এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ডসহ কিছু সংখ্যক এলাকায় কুখ্যাত এমএস-থার্টীন গ্রুপ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ড্রাগ ব্যবসা এবং খুন খারাবি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই ভয়াবহ অপরাধী চক্রকে সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করার লক্ষে গোলটেবিল আলোচনার অংশ বিশেষ হিসেবে রিপ্রেজেনটেটিভ পিটার কিঙ ও লী জেলডিন হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে মিলিত হয়েছেন বলে ১১ ফেব্রুয়ারি জানা যায়।
হোয়াইট হাউজ চীফ অফ স্টাফ জন কেলী, হোমল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারী ক্রিস্টেন নীলসেন এবং ডজনাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তা কংগ্রেস সদস্যের সভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ৪ দফা অভিবাসন সংস্কার পরিকল্পনা এবং
সাউদার্ন বর্ডার ওয়াল নির্মাণের ২৫ বিলিয়ন তহবিল বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য আইনপ্রণেতাগণের উপর চাপ দেন।
ইমিগ্রেশন আইন কার্যকরের শৈথিল্যের প্রতীক হিসেবে ট্রাম্প দীর্ঘকাল ধরনের কুখ্যাত এমএস-থার্টীনের কর্মকান্ডের প্রতি জোর দিয়ে আসছিলেন। ট্রাম্প বলেন, অতীতে এই কুখ্যাত চক্রটি হিং¯্রতা, নিষ্ঠুরতা এবং সহিংসতার জন্ম দিয়েছিল। ট্রাম্প আরও বলেন, প্রাচির নির্মাণ ছাড়া আমরা কোনক্রমেই এই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান করতে পারব না।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাগণ জানান, ১৯৮০ এর দশকে লস এঞ্জেলেসে এমএস-থার্টীন নামক কুখ্যাত চক্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং কালক্রমে এই সংঘবদ্ধ চক্রটি সেন্ট্রাল আমেরিকান দেশগুলোতে শাখা বিস্তার করে। আর এডাল্ট বা পিতা-মাতা ছাড়া যে সকল অল্প বয়স্ক বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে সে সকল নবাগতকে দলে ভিড়ানোর জন্য এই কুখ্যাত চক্রটি মরিয়া হয়ে উঠে এবং তাদের সদস্য উত্তরোত্তর সংখ্যা বাড়াতে থাকে।
সীফোর্ড থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলীয় রিপ্রেজেনটেটিভ কিঙ বলেন, যে সকল সঙ্গীবিহীন অল্পবয়স্ক ইমিগ্র্যান্টকে স্থানীয় আত্মীয়স্বজনদের তত্ত্বাবধানে স্থানান্তর করা হয়েছে তাদের ব্যাপারে ফেডারেল সরকারের আরও অনেক করণীয় ছিল এবং তাদের ফলো আপ করার দরকার ছিল। অথচ ফেডারেল কর্তৃপক্ষ সে দায়িত্ব যথাযথ পালন করেনি। ফলে এ সকল অল্প বয়স্ক কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের অনেকেই এমএস-থার্টীন গ্রুপের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। কিঙ বলেন, ২০১৬ সালে ব্রেন্টউড হাই স্কুল শিক্ষার্থী নিসা মাইকেনস এবং কাইলা কিউভাস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ১৩ জনের মধ্যে ৭ জন স্বীকার করেছে যে তারা কাগজপত্রবিহীন অল্প বয়স্ক হিসেবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছিল। কিঙ সুপারিশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর হোস্ট করা সকল অপ্রাপ্তবয়স্কের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া উচিত এবং তারা যেন গ্যাঙ দলে জড়িত না হতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা উচিত। কিঙ বলেন, ফোস্টার চাইল্ডকে ( দত্তক কিশোরকে) পরিবারে স্থানান্তর করা হলে তার অধিকতর ফলো আপ থাকা বাঞ্ছনীয়।
শার্লী থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলীয় রিপ্রেজেনটেটিভ জেলডিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আগ্নেয়াস্ত্র বিরোধ কবলিত হাইতি, হন্ডুরাস এবং এল সালভাডরের আমেরিকায় বসবাসরতদের প্রভিশনাল লিগ্যাল ( অস্থায়ীভাবে বৈধ) স্ট্যাটাস প্রদানকারী টেম্পরারী প্রটেকটেড স্ট্যাটাস সিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, কেন টেম্পরারী ( অস্থায়ী) নামে কথিত কোন কিছুর আওতায় ১৬ বছর পর কেউ আমাদের দেশে অবস্থান করবে? মূলত অন্যান্য দেশের যে সকল ছেলে-মেয়ে নিজেদের পিতা-মাতা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে ও বসবাস করছে সে সকল পিতা-মাতার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করতে গিয়েই জেলডিন উক্ত প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। জেলডিন বলেন, আমেরিকাকে বলা হয় কমপেশানেট (সহানুভ’তিশীল) দেশ। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নির্যাতন ও গ্যাঙ ভায়োলেন্স (সংঘবদ্ধ সহিংসতা) কবলিত বিশ্বের যে কোন দেশের প্রতিটি ছেলে-মেয়ের প্রতি আমাদের সহানুভ’তি রয়েছে। তাহলে নিজ নিজ সন্তানের সান্নিধ্যবঞ্চিত অভিভাবকদের সন্তানের নৈকট্য লাভ থেকে দূরে রাখার অধিকার আমাদের নেই।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন রিফরম প্ল্যান ( অভিবাসন সংস্কার পরিকল্পনা) গ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসের উপর অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের সংশোধিত নীতিমালায় ফ্যামিলি পুনর্মিলন ভিসা বাতিল এবং ডাইভারসিটি ভিত্তিক ভিসা লটারী প্রোগ্রাম বাতিলও রয়েছে। তবে মাইনর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনীভাবে আগত ১৮ লাখ তথাকথিত ড্রীমারদের নাগরিকত্ব প্রদানের পথ ট্রাম্পের পরিকল্পনায় রয়েছে। যাহোক, সভা শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাশনাল ভেটিং সেন্টার স্থাপনকারী একটি বিশেষ আইনে স্বাক্ষর করেছেন। হোয়াইট হাউজের মতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ইমিগ্র্যান্ট এবং ভ্রমণকারীদের স্ক্রীনিং উন্নততর করার লক্ষে উক্ত সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারী সারা হুকাবী স্যান্ডারস বলেন, সেন্টারটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট দ্বারা পরিচালিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ প্রত্যাশীরা জাতীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত নিরাপত্তা, স্বদেশের নিরাপত্তা কিংবা সর্বসাধারণের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি স্বরূপ কি-না তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করার কাজে নিয়োজিত অন্যান্য ফেডারেল এজেন্সীর সাথে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সমন্বয় সাধন করবে।