নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বাংলাদেশের ১৬তম সেনাপ্রধান হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ বিজিবিএম, পিবিজিএম, বিজিবিএমএস, পিএসসি, জি। আগামী ২৫ জুন তিনি বিকেলে দায়িত্ব নেবেন। ওই দিনই বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহম্মদ শফিউল হক, এনডিসি, পিএসসি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব থেকে মেয়াদ শেষে বিদায় নেবেন। সেনাপ্রধান আবু বেলালকে সেনাপ্রধানের শেষ কর্মদিবসে বিদায়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সদর দপ্তর থেকে বিদায় জানানো হবে। ওইদিনই আজিজ আহমেদ দায়িত্ব নিবেন সেনাপ্রধানের। পরদিন থেকে নতুন সেনাপ্রধান অফিস শুরু করবেন। সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার জেনারেল পদেও তার পদোন্নতি কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাকে জেনারেলের র্যাঙ্ক ব্যাজ পড়িয়ে দেবেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে এ অনুষ্ঠান হতে পারে। আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। তিনি বিভিন্ন ইউনিট, ডিভিশনও ভিজিট করবেন। সেনাবাহিনীর সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশ্যে দরবারে বৃক্ততা করবেন।
এদিকে সেনাপ্রধান হিসাবে তার দায়িত্ব রয়েছে অনেক। এ দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি তাকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বড় একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতে পারে। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি কীভাবে মোকাবিলা করবেন- সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে। চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে- দেশে-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয় বিএনপি-আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সব দল মনে করেছে, সেনাবাহিনী থাকা মানেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি যে দল যখন বিজয়ী হয়েছে, পরাজিত দল তখন সুক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ করলেও তা খুব বেশি জোরালো ছিল না। এর আগে ২০০৭ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদ তখনকার পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে ওয়ান-ইলেভেন করেন । তিনি ২০০৫ সালের ১৬ জুন থেকে ২০০৯ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তার ব্যাকে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি নির্বাচন করে। ওই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়। তার ও সেনাবাহিনীর ব্যাকআপে ওই সময়ের সরকার দুই বছর দায়িত্ব পালন করে। তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পর জেনারেল মুবীন দায়িত্ব পান। তার সময়ে জাতীয় নির্বাচনের কোন সিডিউল ছিল না। এরপর দায়িত্ব নেন জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, এসবিপি, পিএসসি। তিনি ২০১২ সালের ২৬ জুন থেকে ২০১৫ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়ে দেশের পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সবচেয়ে বিতির্কত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে নানা সহিসংতা হয়েছে , জ্বালাও পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটেছে। তিনি জেনারেল মঈনের মতো কোন ওয়ান-ইলেভেন করেননি। তিনি তার রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর সেনাপ্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন জেনারেল আবু বেলাল মোহম্মদ শফিউল হক এনডিসি, পিএসসি। তার সময়েও জাতীয় কোন নির্বাচন ছিল না। এখন নতুন করে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি দায়িত্ব নেয়ার ছয়মাসের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। দেশে-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ রয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপির বিভিন্ন দাবি দাওয়া রয়েছে। সংলাপে বসে সমঝোতা ও দাবিপূরণ না হলে তারা আন্দোলন করবে পরিকল্পনা করেছে। আন্দোলনে সহিংসতা হতে পারে। আশঙ্কা রয়েছে, দেশে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোন সময়ে যে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ২০০৭ সালের মতো পরিস্থিতিও হতে পারে। এ অবস্থায় গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থেকে যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারে ও যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এ জন্য সরকারের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই হিসাবে সরকার নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। গোয়েন্দারাও সতর্ক রয়েছে।
অনেকেই বলছেন, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের দলগুলোর কাছে বিতর্কিত না হলেও এবং তারা ওই নির্বাচনকে একতরফা মনে না করলেও, তা ছিল বিতর্কিত। আগামী নির্বাচন যেন তেমন কিছু না হয়, এজন্য সব মহল সতর্ক রয়েছে। যদিও আগের প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন।
বিএনপি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এবং আন্তর্জাতিক মহল মনে করে যে কোন ভাবেই হোক, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন বাংলাদেশে আর কখনো হতে দেয়া যাবে না। অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে সরকার ও কমিশনকে। সেই ধরণের নির্বাচন বিদেশিদের কাছেও প্রত্যাশিত। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন যাতে গ্রহণযোগ্য হয়, বিএনপি ও তাদের জোট অংশ নিতে পারে, সেজন্য তারা বার বার পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেছে। সেই হিসাবে তারা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনসহ সব নির্বাচনেই বিএনপি সেনা মোতায়েন চেয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন মনে করেন, আর যাই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য তারা যত চেষ্টা করুক না কেন, অবশ্যই সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে তারা একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না। আবার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংও করতে পারবে না। অন্তত সেনাবাহিনী প্রধান ও সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবেন, তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেটা করলে নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারবে। আর ভোট দিতে পারলে কারচুপির সম্ভাবনাও কমে যাবে। তিনি ও তার দল আশাবাদী নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তারা ক্ষমতাসীন হতে পারবে। তবে তার আশঙ্কা নির্বাচন সুষ্ঠু না করার সব নীল নকসা হচ্ছে। তিনি কারাবন্দী হওয়ার আগে এই আশঙ্কার কথা বার বার বলেছেন। এখন বিএনপির নেতারাও বলছেন।
সূত্র জানায়, বিএনপি এখনও আশাবাদী আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে। সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। সেটা করলে বিএনপির ও তাদের জোটের নির্বাচনে যাওয়ার অন্তত একটি ধাপ এগুবে। এদিকে গত কয়েক বছর বিএনপি সব নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করে আসলেও তা হয়নি। সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে অবস্থান ছিল না। এখন তারাও সেনা মোতায়েনের কথা বলছে না। তবে আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য সেনা মোতায়েন একটি কৌশলও হতে পারে সরকারের জন্য। আর সে কারণেই আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের আভাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
এ কে এম নুরুল হুদা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে, সেটা আমরা চাইবো। কীভাবে সেনা মোতায়েন হবে ও কত সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হবে, কীভাবে তারা কাজ করবে- এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তাকে পুরো বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে, তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে ঠিক করবে।
সরকারের গ্রিন সিগন্যালেই এমনটি চিন্তা করছে কমিশন বলে অভিজ্ঞরা মনে করছেন। যদিও বিএনপির দাবি সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের সময়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। বিএনপি মনে করে সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের মাঠে রেখে কেবল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব দিলে হবে না। সেক্ষেত্রে তাদের করণীয় তেমন কিছুই থাকবে না। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হলে তারা প্রয়োজনে সব ধরণের ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যদিও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সেনাবাহিনীকে দেয়া হবে কিনা, এমন কোন খবর কোন মহল থেকে মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নয়, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবেই রাখা হতে পারে। তারা জেলা প্রশাসকের আহ্বানে মাঠে থাকবেন ও সহায়তা করবেন। জেলা প্রশাসকের হাতেই তাদের পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে।
এদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, আওয়ামী লীগ এর আগের টার্ম ক্ষমতায় ছিল। বর্তমান টার্মেও আছে। আগামী টার্মও তারা ক্ষমতায় থাকবে সেই লক্ষ্যেই তারা সব চেষ্টা করছে এবং সেভাবেই তারা কাজ করছে। সে কারণেই কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন এমন একজনকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। লক্ষ্য বিএনপি যাতে কোনভাবেই পরিস্থিতি খারাপ করতে না পারে। দেশে যত যা কিছুই হোক না কেন বা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা হোক না কেন, আন্দোলন হোক না কেন নতুন সেনাপ্রধান অন্তত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার যে ধরণের সহযোগিতা চাইবে সেই ধরণের সহযোগিতা করতে পারেন। অন্তত দেশের পরিস্থিতি খারাপ হলে কিংবা দেশে আন্দোলন পরিস্থিতির অবনতি হলেও অন্তত জেনারেল মঈন উ আহমেদের মতো কোন কাজ করবেন না। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন করে সেনাপ্রধান হিসাবে কি কাজ জেনারেল মঈন করেছেন, এটা সবাই দেখেছেন। তারা ওয়ান ইলেভেন করে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। দুই বছর পর নির্বাচন দিয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এমনকি বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও।
ওয়ান ইলেভেনের সরকার রাজনৈতিক দলের কাছে কাম্য ছিল না। এ ধরণের ঘটনা যাতে আর কোন দিন না ঘটে, সেই জন্য সরকার নানা নিয়ম করেছে। আইনও করেছে। কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে কি শাস্তি হবে- সেটাও বলে দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকার নিশ্চিত অতীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন ক্ষমতাসীন হলেও এবং ওয়ান ইলেভেন করলেও আগামী দিনে কেউ বিদ্রোহ করবে না ও ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টা করবে না। সেনাবাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।
এদিকে নতুন সেনাপ্রধান নিয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেয়নি। আবার আওয়ামী লীগ নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করার পর কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে নানা কারণেই তারা নতুন সেনাপ্রধানের প্রতি আস্থাশীল। কারণ তিনি অতীতে অনেক সাফল্য দেখিয়েছেন। বিশেষ করে বিডিআর বিদ্রোহের পর বিডিআর থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সাফল্য দেখিয়েছেন। বিডিআর বিদ্রোহের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও যেসব কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে যাতে কেউ কোন ধরণের বিদ্রোহ করতে না পারেন কিংবা বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে যাতে নতুন করে আর কোন বিদ্রোহ না হয় সেজন্য তিনি সফলভাবে কাজ করেছেন। নতুন সেনাপ্রধানের বিষয়ে কেউ কেউ নানা কথা বললেও তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে যেভাবে শৃঙ্খলা ধরে রেখে ও এটি পুনর্গঠনে সফল হয়েছেন। এ কারণে সরকার তার উপর ভীষণ আস্থাশীল ও আশাবাদী।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হলে কীভাবে সেনাবাহিনী কাজ করবে- সে ব্যাপারে সেনাপ্রধান হিসাবে ভূমিকা হবে বড়। সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হতে পারে।
এদিকে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে, এটা আমাদের একটা দাবি ছিল। আগামীতেও থাকবে। তবে কেবল সেনা মোতায়েন করা হলেই বিএনপি ও তার জোট নির্বাচনে যাবে সরকার এটা মনে করলে হবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে হলে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে, তার ও তার ছেলের নামে এবং বিএনপির নেতাদের নামে যেসব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নির্দলীয় হতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার মেনে নেয়া হবে না।
বিএনপির একাধিক নেতার দাবি বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে না। বর্তমান সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে ও তাদের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনে কারচুপি হবে, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে পরাজিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এমনকি বিরোধী দলেও বিএনপি যাতে বসতে না পারে সেই সব পরিকল্পনা চলছে। এসব জেনে শুনেতো আর বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে না।
বিএনপির নীতি নির্ধারক একজন নেতা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কোন কারচুপি বরদাস্ত করা হবে না। একতরফা নির্বাচনে হতে দেয়া হবে না। জনগণকে নিয়ে ও দেশে-বিদেশে সবাইকে নিয়েই ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চাইলে তা সবাইকে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। নির্বাচনের জন্য আমাদের দাবি মেনে না নিলে ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না করা হলে কোন ভাবেই আমরা নির্বাচনে যাবো না। ওই নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে। তবে আমরা আশাবাদী সরকার বাস্তবতা বুঝে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে রেখে নির্বাচন করবে। দেশের ভোটারদের ভোট দিতে সুযোগ করে দেবে।
সূত্র জানায়, নির্বাচনের ছয় মাস বাকি নেই। তারপরও বিএনপি এখনও আন্দোলনে জোরে সোড়ে যেতে চাইছে না। তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে অপেক্ষা করা সরকারের কাছ থেকে সমঝোতার ও আলোচনার ডাকের। লক্ষ্য নির্বাচনে দুই মাস আগ পর্যন্ত হলেও সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করা। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে আর আলোচনার সুযোগ থাকবে না। তাই যা করার অক্টোবরের আগেই করতে হবে। সেই জন্য সংলাপে বসার প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপি একটি মরণকামড়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারের সঙ্গে কোন সমঝোতা না হলে ও আলোচনা না হলে বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচন করতে গেলে তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে চেষ্টা করবে। এতে তাদের নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করা হতে পারে। নানা ধরণের মামলায় আসামী করে গণ গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। সরকারেরও আশঙ্কা ক্ষমতায় যেতে বিএনপি অনেক কিছু করতে পারে। ২০১৩ সালের পরিস্থিতির চেয়েও অবনতি হতে পারে। সব মিলিয়ে ওই ধরণের পরিস্থিতি হলে যাতে কোনভাবেই বিএনপি সফল হতে না পারে, সে জন্য সব ধরণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। যে কোন মূল্যে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও যথাসময়ে নির্বাচন হতেই হবে এর কোন বিকল্প সরকার ভাবছে না। এই অবস্থায় আগামী অক্টোবরের পর যে বিএনপি তাদের জোটের আন্দোলন ও সরকারের সেই আন্দোলন ঠেকানোর কৌশল সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে নানা মহল আশঙ্কা করছে। এই অবস্থায় আগামী দিনে যে কোন সময়ে সহযোগিতা লাগতে পারে সেনাবাহিনীর। সেখানে এমন একজনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পরিচালিত হওয়া দরকার তার কঠিন সময়ে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আজিজ আহমেদকে আগামী দিনের সব দিক বিবেচনা করেই সরকার তাকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করেছে।