পথশিশুদের সুহৃদ বিদেশি বন্ধু ব্রাদার লুসিও

সিলেট : ভাইয়া আমি খেলব; ভাইয়া, ওরা আমাকে মারে; ভাইয়া আমাকে চকোলেট দিও; আজকে আমি কিন্তু ফার্স্ট হবোÑ ছোট পথশিশুরা এভাবেই তার কাছে মনের ভাব প্রকাশ করে। তার কাছে নানা আবদার করে। অনেক সময় তাদের দুষ্টুমিতে রাগ হলেও সেটি চেপে যান তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে। তিনি হলেন ইতালির নাগরিক লুসিও বেনিনাতি। তিনি এখন সিলেটের সব পথশিশুর বন্ধু। ১৮ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন এ দেশে। তার একটাই চাওয়া, কোনো শিশু যেন শিক্ষার বাইরে না থাকে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় যেন কেউ না কাঁদে। তিনি তার সাধ্যমতো সেভাবেই পথশিশুদের সহযোগিতা করে চলেছেন। সবার কাছে তার একটি আবেদন- মাসে অন্তত দুই ঘণ্টা পথশিশুদের জন্য ব্যয় করুন। ব্রাদার লুসিও বেনিনাতির জন্ম ইতালিতে। বাবা এলিও আন্তোনিয়েত্তা ছিলেন সাইনবোর্ড মিস্ত্রি আর মা গৃহবধূ। ৯ বছর বয়স থেকেই রোজগারের জন্য কাজ করতে শুরু করেন লুসিও। কাজ করেই নিজের পড়ার খরচ জোগান। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে সফলতার সঙ্গে ডিপ্লোমা করেন। সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে যোগ দেন সেবকদের প্রশিক্ষণ শিবিরে। এরপর ব্রাজিলে পথশিশুদের জন্য একটি সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন। বুঝতে পারেন, এ দেশের মানুষের মধ্যে রয়েছে উদারতা ও সম্প্রীতির বন্ধন। প্রয়োজন শুধু ভালো কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা। শুরু করলেন পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম। গড়ে তুললেন পথশিশু সেবা সংগঠন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। দিনাজপুর-ময়মনসিংহের রেলস্টেশনগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এভাবে ছয় বছর কাজ করার পর ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান ব্রাজিলে। কিন্তু বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের আকর্ষণে ২০০৬ সালে আবার ফিরে আসেন ঢাকায়। এবার তিনি আরও ভালোভাবে কাজ করতে এবং পথশিশুদের সঙ্গে আরও আন্তরিকভাবে মিশতে শিখে ফেললেন বাংলা ভাষা। ২০০৭ থেকে ঢাকায় পথশিশু সেবা সংগঠন শিশুদের খেলার ছলে শিক্ষা দেওয়া, গল্প করে তাদের মন ভালো রাখা, ওষুধপথ্য দেওয়া, প্রয়োজনে হাসপাতালে নেওয়া ইত্যাদি কাজ করে আসছে।
তিনি বলেন, আমার একটাই স্বপ্ন, যেদিন কোনো শিশু পথে থাকবে না। পৃথিবীতে জন্মানো প্রতিটি শিশু পৃথিবীর সন্তান। এ পৃথিবীতে আছে সবার সমানভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার।