পথ ও প্রবাসের গল্প: জুরি ডিউটি

আবু রায়হান

পাঁচ বছর পর ‘কমিশনার অব জরর’ আবার চিঠি পাঠায়। কুইন্স বুলেভার্ডের ক্রিমিনাল কোর্টে গিয়ে জুরীর মহান
দায়িত্ব পালন করতে হবে। আজাদ সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এবারে কোর্টে গিয়ে গতবারের মত লোক হাসাবে না। তার বাঙালী উচ্চারন নিয়ে কে কি ভাবে, ভাবুক। সে তার দায়িত্ব পালন করবে। এখন সে জানে প্রতিটি মার্কিন নাগরিককে পাঁচ, ছয় বছর পর পর এই কাজ করতে হয়। ফাঁকি দেওয়া যায় না। অবশ্য কেউ যদি ঠিকানা বদলে অন্য কাউন্টি বা ষ্টেটে বসবাস শুরু করে তাহলে ভিন্ন কথা।
সম্প্রতি আমেরিকার কয়েকটি পত্রিকায় জুরী ডিউটি সংক্রান্ত একটি খবর ছাপা হয়েছে। আজাদ মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেই খবর পড়ে।
‘আমেরিকার বর্তমান যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রনায়কÑঅনেকের নিশ্চিত ধারনা একদিন তিনি ইতিহাসের ভাগাড়ে পতিত হবেন; তাকে জুরীর দায়িত্ব পালনের জন্য ডাকা হয়েছে। টেক্সাসে তার খামার বাড়ির ঠিকানায় জুরী বোর্ডের সমন পৌছে গেছে।’
আজাদ খুব আগ্রহ নিয়ে এই সমনের পরিনতি দেখার অপেক্ষা করে। প্রেসিডেন্ট জুরী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য কিনা, তার জানা নেই। অবশ্য প্রেসিডেন্টের অনেক নির্বাহী ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতাবলে তিনি পারও পেয়ে যেতে পারেন। এই ব্যক্তি ইতিমধ্যেই মানবতার বিরুদ্ধে বিরাট অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত আর কোনো খবর তার চোখে পড়ে না। তবে এই সংবাদ থেকে এটুকু বুঝতে পারে, যে ডিপার্টমেন্ট দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে প্রেসিডেণ্টকে সমন জারী করতে পারে, তাদের ক্ষমতা হেলাফেলা করার ব্যাপার নয়।
এ দেশের নাগরিক হিসেবে থাকতে হলে জুরী ডিউটি দিতেই হবে। দু’দিন আগে বা পরে। তা হোক, এই দায়িত্ব পালনে আজাদের কোন অসুবিধা নেই। তবে তার একটা শর্ত আছে। সে যে কোনো কেসে জুরী হবে, শুধু দাম্পত্য কলহ বাদে। ডমেষ্টিক ভায়োলেন্সর ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ নেই। প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী দের কলহ বিবাদ শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে।
আমেরিকার টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে আইন আদালত ও আইনের জটিল মারপ্যাচ নিয়ে অনেক শো আছে। জাজ ম্যাথিউ, জাজ জুডি, জাজ অ্যালেক্স, জো ব্রাউন, জাজ জেনি পিরো, ইত্যাদি। এরা সত্যিকারের জাজ কিনা আজাদের জানা নেই। এদের দেয়া রায় বাস্তবে কার্যকর হয় কিনা, তা-ও অজানা। তবুও সে প্রচুর আগ্রহ নিয়ে এই শো’গুলি দেখেÑবিশেষ করে জাজ জুডি। সবগুলি অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু মোটামুটি একই। পার্থক্য শুধু জাজদের মধ্যে।
অসাধারণ এক চরিত্র এই জাজ জুডি। পৃথিবীতে এর সমতুল্য বদরাগী আর মারমুখো বিচারক দ্বিতীয়টি আছেন কিনা সন্দেহ। তিনি সারাক্ষন রেগে থাকেন, কথা বলেন অমার্জিতভাবে। আর সামান্য কারনে হাতুরি দিয়ে ডেস্কের উপর নির্দয়ভাবে পেটাতে থাকেন। আজাদের ধারনা তার সামনের ডেস্কটি ঘন ঘন বদল করতে হয়।
এক আধটু ক্ষ্যাপাটে জাজ সে এর আগেও দেখেছে। যারা বিবাদীকে দোষী বানিয়ে খুশী হন, তৃপ্তি সহকারে বগল বাজান। এই শহরে ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের সুবাদে তাকে প্রায়ই সমন (টিকেট) পেতে হয়। রেড লাইট উপেক্ষা করে গাড়ী চালানো, নিষেধ থাকা সত্বেও মোড় নেয়া, ইত্যাদি। এই সমনগুলো মোকাবেলা করার জন্য তাকে আদালতে যেতে হয়, লইয়ার ভাড়া করতে হয়। একেক দিন শুনানির জন্য কোর্টে গিয়ে দেখে তার লইয়ার বিরস মুখে বসে আছে।
‘আজাদ, খারাপ সংবাদ আছে।’
‘কি খারাপ ?’
‘শী ইজ ব্যাড। ভেরী ব্যাড।’
‘কিসের কথা বলছো ?’
যে রুমে তোমার শুনানি পড়েছে, সেই রুমের জাজ। খুব খারাপ। ও তোমাকে নির্ঘাত দোষী বানিয়ে ছাড়বে।’
‘কি করা যায় বলো।’
‘আমরা শুনানির তারিখ পিছিয়ে নেবো। আশা করা যায়, সেদিন ভাগ্যে একজন ভালো জাজ পড়বে। তুমি ফেয়ার ট্রায়াল পাবে।’
ফিরে আসার সময় আজাদের খুব কৌতুহল হয়। একজন খারাপ বিচারককে দেখতে ইচ্ছে করে। সে কোর্টরুমে ঢুকে পিছনের বেঞ্চে বসে বিচারকার্য পরিচালনা দেখে। এরা বিবাদির প্রতি কি এক ধরনের বিদ্বেষ পোষন করেন? কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ব্যক্তিকে তিল পরিমান সম্মান দেখান না। তবে বাদী, মানে, পুলিশের প্রতি এরা যথেষ্ট সহনশীল । প্রশয়ের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকান, পক্ষপাতিত্ব করেন।
জাজ জুডি এই খারাপ জাজদের চেয়েও এক কাঠি সরেস। তিনি বাদী-বিবাদী কাউকেই খাতির করেন না। পারলে দুই পক্ষকেই দোষী সাব্যস্ত করেন। বোধহয় সে ধরনের কোনো আইন না থাকায় বাধ্য হয়েই এক পক্ষকে খালাস দেন। তবে তিনি যে খুশী হয়ে এ কাজটি করেন তা বলা যাবে না। জাজ জুডির আদালতের একটি ঘটনা এখনো আজাদের খুব মনে পড়ে।
মার্থা নামের একজন যুবতী এসেছে প্রাক্তন প্রেমিক ও রুমমেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। তারা দু’জন মিলে এক বছরের চুক্তিতে একটা বাসা ভাড়া নিয়েছিল। দু’জনেই লিজ পেপারে সই করেছে। লিজের চুক্তি অনুযায়ী দু’জনে অর্ধেক করে বাসা ভাড়া শেয়ার করবে। কিন্তু প্রেমিক প্রবর আট মাসের মাথায় অন্য এক সুন্দরীর হাত ধরে তার বাসায় গিয়ে উঠেছে। পরবর্তীতে টাকা পয়সা দেয়নি। বাকী চারমাস মার্থা একাই ভাড়া পরিশোধ করেছে। আদালতের কাছে তার দাবী, প্রেম না দিক আফসোস্ নাই, কিন্তু পাওনা পাঁচ হাজার ডলার দিতে হবে। মার্থার প্রেমিক তার নতুন প্রেমিকার হাত ধরে এজলাসে দাড়িয়ে আছে। তাদের দু’জনের চোখে ঘোর লাগা দৃষ্টি। ভালবাসার আবেগ এখনো কাটে নি। এমনি অবস্থায় মাননীয় আদালত তার স্বভাব সুলভ চাচাছোলা কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,
‘তোমার আগের প্রেমিকা আর বর্তমান প্রেমিকার মধ্যে কে বেশী সুন্দরী ?’
প্রেমিক পুরুষটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এ ধরনের প্রশ্নের জন্য সে তৈরী ছিল না। জাজ জুডি তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার শুরু করেন,
‘তোমার দু’জন প্রেমিকাই খুব সুন্দর। মেয়ে পছন্দ করার ব্যাপারে তোমার রুচি খুব ভালো, কিন্তু তোমার মন এত নোংরা কেন ? রুম শেয়ার করে ভাড়া না দিয়ে যাও কিভাবে ? সুন্দরী মেয়েদের সাথে থাকবা আর পয়সা খরচ করবা নাÑএই যদি মনোবৃত্তি হয়, তাহলে এই মেয়েও একদিন তোমাকে ঘৃনা করবে। এবারে সুন্দর মাকাল ফল, মন দিয়ে শোনো ! আগামী পনের দিনের মধ্যে মার্থার পাওনা পাঁচ হাজার ডলার পরিশোধ করবে। এখন আমার চোখের সামনে থেকে দুর হয়ে যাও। ডিস্মিস্।’
নতুন প্রেমিকার সামনে অপদস্থ প্রেমিকপুরষ মুখ কালো করে কক্ষ ত্যাগ করে। এবারে মাননীয় আদালত বিজয়ী মার্থার দিকে ফিরে অগ্নিবান বর্ষন করেন,
‘হ্যালো! ইউ! মাথামোটা সুন্দরী! কার সাথে প্রেম করতে হয় আর কার সাথে রুম শেয়ার করতে হয়, এই বয়সেও সেটা শেখোনি ? শরীরের যতœ তো বেশ ভালোই নাও দেখছি, এবারে একটু মাথারও যতœ নিও, নইলে বাকী জীবন তোমাকে অন্যের রুম ভাড়া যোগান দিয়ে যেতে হবে। আউট!’
‘শো’য়ে উপস্থিত পুরুষ দর্শকরা এবারে গলা ফাটিয়ে হেসে উঠে। মার্থা মাথা নত করে আদালত ত্যাগ করে।
এদেশের বাস, ট্রেন, সাবওয়েতে ‘জাজ জুডি শো’র বিজ্ঞাপন শোভা পায়। সেই বিজ্ঞাপনে তার হাসোজ্ঝল মুখ চোখে পড়ে। কিন্তু যারা নিয়মিত এই শো দেখেন, তারা জানেন, এই হাসি শুধু বিজ্ঞাপনের জন্যই দেয়া হয়।
বলাই বাহুল্য, এই টিভি শো গুলিতে বেশীর ভাগই ডমোষ্টিক ভায়োলেন্সের সুরাহা করা হয়। এইসব দাম্পত্য কলহ শুনতে শুনতে আজাদের কান পচে গেছে তাছাড়া, প্রবাসের এই জীবনে, তার নিজের যে সমাজ-সে সমাজের অবস্থাও খুব একটা সুবিধাজনক নয়। অশান্ত পরিবারের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। তুচ্ছ কারনে দম্পতিদের একজন আরেকজনকে পুলিশের হুমকি দেয়। সময়ে অসময়ে বাসায় পুলিশ এসে হাজির হয়। অতি উন্নত সমাজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় একটা বিশেষ শ্রেনীর মানুষ ক্রমেই তাদের নিজস্ব মূল্যবোধ ও বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে। তাই আজাদ আজকাল এ ব্যাপারে উৎসাহ বোধ করে না। দুভার্গক্রমে আদালতে গিয়েও যদি তাকে স্বামী-স্ত্রীর জুরী হতে হয়, তাহলে সেটা তার জন্য খুব দুঃখজনক হবে।

এবারে প্রথম দিনের দ্বিতীয় প্যানেলেই আজাদের নাম উঠে। সে বিশজনের দলে মিশে গিয়ে কোর্টরুমের দিকে রওয়ানা দেয়। তার বুকের ভিতর ঢিব্ঢিব্ করতে থাকে, তবে এবারে সে আগেরবারের তুলনায় বেশী আত্মবিশ্বাসী। মাননীয় আদালত সমবেত হবু জুরীদের উদ্দেশ্যে ভাষন দেন। কোর্টের অমুক নাম্বার রুমে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে। পুলিশ দুই যুবককে হেরোইনসহ গ্রেফতার করে এনেছে। দীর্ঘদিন ধরে সেই মামলা চলছে। দুই পক্ষের যুক্তি, তর্ক, প্রমান এত কাছাকাছি যে মাননীয় আদালত সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। তাই জুরী বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
‘মিঃ আজাদ, তুমি কি মনে কর যে একজন জুরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে?’
‘ইয়েস, ইউর অনার।’
সরকারী উকিল কিছু জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু আসামী পক্ষের উকিল তাকে একটি প্রশ্ন করে।
‘মিঃ আজাদ, এই কেসে সংশি¬ষ্ট হতে তোমার বিব্রতবোধ করার কোন কারন আছে কি?’
‘না, সে রকম কিছু নেই।’
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে বিশজনের এই প্যানেল থেকে জুরী হিসেবে তিনজন নির্বাচিত হয়। তাদের মধ্যে বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট আজাদ রহমান একজন। নির্বাচিত জুরীদেরকে সেদিনের মত বাসায় চলে যেতে বলা হয়। আগামীকাল সকাল দশটায় এসে আট নাম¡ার রুমে রিপোর্ট করতে হবে।
পরদিন সকাল দশটায় এসে আজাদ বিভিন্ন বয়সী আটজন মানুষকে দেখতে পায়। তিনজন নারী, পাঁচজন পুরুষ। এদের ধর্ম আলাদা, বর্ণ আলাদা, পেশা আলাদা। এরা সবাই ভিন্ন আদর্শের অনুসারী। একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য এদেরকে এক সুতোয় গেঁথে দেয়া হয়েছে।
কোর্টের ক্লার্ক এসে জুরীদেরকে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে সনাক্ত করেন। দলের সব চেয়ে বয়স্ক নিগ্রো সদস্য ‘জুরী নাম্বার ওয়ান’ নির্বাচিত হন। এক নম্বর জুরীর দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে সামান্য বেশী। তিনি একই সাথে জুরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং জুরীদের মুখপাত্র হিসেবে কোর্টের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
জুরী সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষে তারা ক্লার্ককে অনুসরন করে বিচার কক্ষে গিয়ে ঢোকে। তারপর ক্রমিক নাম্বার অনুযায়ী নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসে পড়ে।
সারা কক্ষে সুন্সান নীরবতা বিরাজমান। আজাদ খুটিয়ে খুটিয়ে সবকিছু লক্ষ্য করে। কোর্টের মাঝামাঝি স্থানে টাইপ রাইটারের মত একটা যন্ত্র সামনে নিয়ে এক ভদ্র মহিলা বসে আছেন। তার দৃষ্টি ঘরের ছাদের দিকে। ডানদিকের কাঠের বেঞ্চে দো-আঁশলা দুই যুবক বসে আছে। বয়স পঁচিশ থেকে ত্রিশের কোঠায়। দু’জনেরই চোখে মুখে উৎকন্ঠার দৃষ্টি। এরা সম্ভাবত আসামী। ঘরের ভিতর সিকিউরিটির লোক ছাড়াও আরো কয়েকজন আছে। এদের কার কি পদবী ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কেউ একজন বুঝিয়ে দিলে ভালো হত। আরাম করে বিচারকার্য পরিচালনা করা যেতো।
আজাদ মনে মনে বাংলাভাষার শব্দ ভান্ডার ঘেটে আইন আদালত সংক্রান্ত পদ-পদবী মনে করার চেষ্টা করে। জর্জ, ব্যারিষ্টার, উকিল, মুহুরী, পেশকার, চাপরাশী, মোক্তার, হাকিম…। এদের মধ্যে চাপরাশী শব্দটি বোধহয় বিচার বিভাগ অন্য কোনো ডিপার্টমেন্ট থেকে ধার করে এনেছে। কারন এর আগে অন্য কোথাও সে এই পদবীর ব্যবহার দেখেছে। আজাদ যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে এই রুমে কার কি অবস্থান সেটা নির্নয়ের চেষ্টা করে।
সবচেয়ে আরাম দায়ক চেয়ারে যিনি বসবেন-তিনিই হবেন জাজ।
টাইপের কি-তে হাত রেখে যে ভদ্র মহিলা ছাদের দিকে তাকিয়ে আছেন তাকে সম্ভবত মহাকাশ গবেষনা কেন্দ্র থেকে ধার করে আনা হয়েছে।
যাদের চোখে মুখে উৎকন্ঠার ভাব লক্ষ্য করা যায়-তারা নির্ঘাত আসামী।
যাদের সর্বাঙ্গ থেকে চাতুর্থ আর বিচক্ষনতার আভাষ মেলে-তারা অবশ্যই উকিল।
উকিল সম্প্রদায়কে নিয়ে মার্কিন মুলুকে অনেক কৌতুক প্রচলিত আছে। তার একটি মনে পড়তেই আজাদের মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।
এক আসামীকে কাঠগড়ায় শপথ বাক্য পড়ানো হচ্ছে ঃ
বলো, যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্যি বই মিথ্যা বলিব না।
আসামী ঃ অবশ্যই সত্যি বলব। মিথ্যা যা বলার, আমার উকিল বলবে।
তার মুখের হাসি মিলিয়ে যাবার আগেই এক কোর্ট ব্যক্তিত্ব মৃদু কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে।
‘ভদ্র মহোদয়গন, কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের আদালতের কাজ শুরু হবে। বেলা এগারোটায় মাননীয় আদালত আসন গ্রহন করবেন। তার নাম শার্লি এলিজাবেথ। প্রথম জীবনে তিনি একজন নান ছিলেন। তারপর কেরিয়ার চেঞ্জ করে আইনের পেশায় নিয়োজিত হন। এই কোর্টে তিনি চৌদ্দ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কক্ষে এসে ঢুকলে সবাই দাড়িয়ে সম্মান জানাবেন।’
মাননীয় আদালত আসন গ্রহন না করা পর্যন্ত সবাই দাড়িয়ে থাকে। তিনি রাজকীয় আসনে বসে অন্যদেরকেও বসতে বলেন।
‘সু-প্রভাত। যে মামলার রায় দেবার জন্য আপনারা এখানে এসেছেন সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব। মাদক বহনের দায়ে পুলিশ তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে এনেছে। এই তিনজনের একজন ইতিমধ্যে দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। বাকী দু’জন বলছে তারা নির্দোষ। এদের মধ্যে গাড়ীর মালিকও আছে। সে বলেছে তার অজান্তে গাড়ীতে হেরোইন রাখা হয়েছে। সে কিছুই জানেনা। কিন্তু কারো গাড়ীতে অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে সে জানুক বা না জানুক আইনের চোখে অপরাধী হবে।
সম্মানিত জুরীবৃন্দ, আজ সারাদিন আপনারা বাদী, বিবাদী ও সাক্ষীদের বক্তব্য শুনবেন। উকিলদের ক্রস-একজামিনেশন দেখবেন। আগামীকাল থেকে আপনাদের সিদ্ধান্ত নেবার পালা। দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে রায় ঘোষনা করতে হবে। আর একটা গুরুত্বপূর্ন কথা, এই মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ যদি আপনাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে, যদি আকার ইঙ্গিতেও মামলার রায়কে প্রভাবিত করতে চায়-আপনারা তৎক্ষনাত সেটা কোর্ট কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করবেন। ধন্যবাদ।
সরকারী উকিল তার স্বাক্ষী হিসেবে প্রথমে পুলিশকে ডাকেন। এই পুলিশ অফিসার এদেরকে গ্রেফতার করে এনেছেন। উকিল তাকে সেদিনের ঘটনা জুরীদের কাছে খুলে বলতে অনুরোধ করে।
অফিসার তার পার্টনারকে সাথে নিয়ে গাড়ীতে করে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছিল। জ্যামাইকার একটি শপিং মলে এসে দেখে, নো ষ্ট্যান্ডিং এলাকায় একটি গাড়ী দাড়িয়ে আছে। গাড়ির আরোহী তিন যুবকের গতিবিধি রহস্যজনক। তারা এসে গাড়ী ঘিরে ফেলে। ড্রাইভার সিটের পাশের আরোহী তখন মারিজুয়ানা সেবন করছিল। সর্ব সাধারনের জন্য উন্মুক্ত স্থানে বসে মাদকের ব্যবহার বে-আইনি। তাই ঐ যুবককে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তারা গাড়ীতে তল্লাশি চালিয়ে পিছনের সিটে একটি প্যাকেটে খুঁজে পায়। সেই প্যাকেটে একশ পুরিয়া হেরোইন ছিল। ফলে তিনজনকেই গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আসামী পক্ষের উকিল অফিসারকে ক্রস-একজামিনেশন করেন।
‘আপনি যখন গাড়ী তল্লাশী করেন, তখন আমার এই দুই মক্কেলের কেউ কি তল্লাশিতে আপত্তি করেছিল ?’
‘না, আপত্তি করে নাই।’
‘আপনি যখন গ্রেফতার করেন, তারা কি গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করেছিল?’
‘গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করে নাই।’
‘অসংখ্য ধন্যবাদ, অফিসার।’
সরকার পক্ষের পরের স্বাক্ষী, নিউইয়র্ক সিটির নারকোটিক ডিভিশনের একজন ইন্সপেক্টর। তিনি জব্দ করা আলামত সাথে নিয়ে এসেছেন। সেগুলি বের করে কোর্টের সামনে প্রদর্শন করেন। সরকারী উকিল তাকে প্রশ্ন করে এই তথ্য বের করে আনে, জব্দ করা হেরোইন এমনভাবে প্যাকেট করা হয়েছে যে, এগুলি নিঃসন্দেহে বিক্রির উদ্দেশ্যে গাড়ীতে রাখা হয়েছিল।
আসামী পক্ষের উকিল তাকে কোনো জেরা করে না। এরপর আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পালা।
গাড়ীর মালিক এক নাম্বার আসামী । তার মারিজুয়ানা-খোর বন্ধু দুই নাম্বার আসামী। তারা দু’জনে গাড়ী চালিয়ে শপিং মলে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তারা তৃতীয় বন্ধুর ফোন পায়। সে-ও শপিং মলে যাবে। তাকে লিফট দিতে হবে।
তারা শপিং মলে পৌঁছিলে তৃতীয় বন্ধু দরকারী কাজে এক দোকানে ঢুকে পড়ে। বাকী দু’জন গাড়ীতে বসে থাকে। তৃতীয় বন্ধু ফিরে এসে গাড়ীতে ঢোকামাত্র পুলিশ তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে। তারপর গ্রেফতার করে নিয়ে আসে।
আসামী পক্ষের উকিল শুরুতেই একটি দোষ স্বীকার করে নেনÑউন্মুক্ত পাবলিক পে¬সে বসে মারিজুয়ানা সেবন। এছাড়া অন্য দুটি অভিযোগের দায় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে, তার মক্কেল খুব সাধারণ একটি কাজ করেছে, যা আমরা সবাই করে থাকি। তারা তাদের বন্ধুকে লিফট দিয়েছে। এই কাজ যদি আইনের চোখে অন্যায় হয়, তাহলে তাদেরকে সাজা দেয়া যেতে পারে।
‘ইওর অনার, এই কাজটি আমি নিজেও সব সময় করি। আমি শিওর, এখানে উপস্থিত সবাইও কমবেশী করেন। গাড়ীতে করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে এখানে সেখানে ড্রপ করে দেই। তাদের কেউ যদি সাথে অবৈধ কিছু নিয়ে গাড়ীতে উঠে, সেজন্য কি আমি দায়ী হবো?’
এই পর্যায়ে সরকারী উকিল তড়াক করে লাফিয়ে উঠেন। বিপক্ষ এত ভালো যুক্তি দেবে আর তিনি চুপচাপ হজম করবেন, তাই কি হয়!
‘কিন্তু ইউর অনার, হেরোইনের প্যাকেট পাওয়া গিয়েছে গাড়ীর পিছনের সিটের উপর। তৃতীয় ব্যক্তির শরীর থেকে নয়। তাই গাড়ীতে উপস্থিত কেউ-ই এর দায় অস্বীকার করতে পারে না।’
মাননীয় আদালত এ প্রসঙ্গে পুলিশের দেয়া বক্তব্য স্মরন করতে পারেন না। হেরোইনের প্যাকেট কি তৃতীয় ব্যক্তিকে সার্চ করে পাওয়া গেছে, নাকি গাড়ীর সিটের উপর থেকে! তাই তিনি বাধ্য হয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকা কোর্ট রিপোর্টারের স্মরনাপন্ন হন। এই ভদ্রমহিলা কিছু না দেখে, শুধু দুই হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে কোর্টের সব কথাবার্তা টাইপ করছেন। তার সামনের ষ্টেনোগ্রাফিক মেশিন থেকে মাইলের পর মাইল কাগজ বেড়িয়ে আসছে। সেই কাগজের কোথাও একবিন্দু কালির আচর নেই। কালিবিহীন লেখা। কোর্টের কথাবার্তা থেমে গেলে তিনি বেরিয়ে আসা কাগজ গোল পাকিয়ে রাখছেন। জাজের হুকুম পেয়ে তিনি আঙ্গুলের সাহায্যে কাগজের বুকে পুলিশের বক্তব্য খুঁজে বেড়ান। তাকে অনেকখানি পেছনের দিকে যেতে হয়। তারপর একসময় খুঁজে পান ।
‘ইয়েস ইওর অনার, পুলিশ বলছে তারা হেরোইনের প্যাকেট গাড়ীর পেছনের সিটের উপর পেয়েছে।’
আবার পূর্নোদমে কোর্টের কাজ শুরু হয়। আসামী পক্ষের উকিল দূর্বল কিছু সাক্ষ্য প্রমান উপস্থাপন করে। তারপর কোর্টের শেষ আওয়ারে তিনি হাতের তুরুপের তাস মেলে ধরেন। তিন নম্বর আসামী সাক্ষী দিতে হাজির হয়, যে ইতিমধ্যে দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। হালকা পাতলা গড়নের শ্বেতাঙ্গ এই যুবক কাঠ গড়ায় দাঁড়িয়ে সত্য বলার অঙ্গীকার করে।
‘ইওর অনার, হেরোইনের প্যাকেট আমার। আমি সেটা সাথে নিয়ে গাড়ীতে উঠেছিলাম। ওদের দু’জনকে জানতে দেইনি। আমি ইতিমধ্যে দোষ স্বীকার করেছি, এবং আমার সাজাও হয়েছে। আসামীর কাঠগড়ায় বসে থাকা দু’জন নিরপরাধ।
সরকারী উকিল তড়িঘড়ি তাকে বাধা দিতে এগিয়ে আসেন। ‘কিন্তু হেরোইন তো তোমার কাছে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে গাড়ীর সিটের উপর।’
‘পুলিশ গাড়ী ঘিরে ফেলার পর সাহস হারিয়ে ফেলেছিলাম। পকেট থেকে প্যাকেট বের করে সিটের উপর রেখেছি। ভেবেছি, আমার কাছে হেরোইন না পেলে আমাকে দোষী বানাতে পারবে না। পরে বুঝেছি, ভুল করেছি। আমার অপরাধের জন্য অন্যরা কেন সাজা পাবে ?’
এই কেসের সাক্ষ্য প্রমান এখানেই শেষ। ততক্ষনে বিকেল চারটা বেজে গেছে। মাননীয় আদালত জুরীদেরকে পরদিন সকাল নয়টায় আসতে বলেন। এই কক্ষের সাথে লাগানো আলাদা জুরীরুম আছে। জুরীরা সেখানে বসে আলোচনা করবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন। তারপর তিনি সে দিনের জন্য আদালত মুলতুবী ঘোষনা করেন।
পরদিন যথাসময়ে একে একে সব জুরীরা এসে হাজির হয়। সিকিউরিটি সবাইকে নিয়ে পাশের জুরীরুমে বসিয়ে দেয়। সেখানে একটি ডিম-টেবিল আছে। টেবিলের মাথার দিকে একা একটা চেয়ার, সেখানে বসবেন জুরী নাম্বার ওয়ান। তিনিই এই অধিবেশনের সভাপতি।
শুরুতেই সভাপতি প্রস্তাব করেন, ‘আসুন, মামলা নিয়ে কথা বলার আগে আমারা পরস্পরের সাথে পরিচিত হই। আমি মাইকেল আব্রাহাম। যোগাযোগ ডিপার্টমেণ্টে চাকুরী করি। প্রতিদিন সকালে যেসব ট্রেনে চড়ে আপনারা কর্মস্থলে যান সেগুলির একটি আমি চালাই।’
দুই নম্বর জুরী একজন সুদর্শন শ্বেতাঙ্গ। ম্যানহাটনের থিয়েটার ডিষ্ট্রিকে অভিনয় করেন। তার নতুন নাটকের রিহার্সেল চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জুরীর এই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে চান।
তিন নম্বর জুরী একজন কালো মহিলা। তিনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রন দপ্তরে চাকুরী করেন। চার নম্বর জুরী শ্বেতাঙ্গ পুরুষ-আমেরিকার নাক উচু সমাজের প্রতিনিধি। তার হাবভাবে মনে হয় এই পরিবেশে তিনি মোটেও খুশী নন। নিজের সম্পর্কে বেশী জানাতে চান না। আজাদের কাছে তাকে একজন বর্ণবিদ্বেষী মানুষ মনে হয়।
পাঁচ নাম্বারে আছেন দক্ষিন আমেরিকান বংশোদ্ভুত পুরুষ-সম্ভবত পর্টুরিকোর অধিবাসী। এরা নিজেদের দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বলে মনে করে।শহরের রাস্তায় গাড়ীর জানালা খুলে ফুল ভল্যুমে স্প্যানিশ রক এন্ড রোল বাজায়। শুধু সে দেশের সংসদে আইন পাশ হয়না বলে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য আরো একটি বাড়ছে না। তিনি কর্মচারীর হাতে দোকান ছেড়ে দিয়ে জুরী ডিউটিতে এসেছেন। দোকানে কি পরিমান চুরি হবে ভেবে চিন্তিত আছেন। তার বক্তব্য খুব স্পষ্ট।
‘এই দুই যুবক অপরাধী না। এরা দু’জন স্ট্রীট স্মার্ট। স্মার্টগিরি বেশী দেখাতে গিয়ে গুবলেট করে ফেলেছে। আপনারা রাজী হলে এদেরকে আজই নির্দোষ রায় দিয়ে কাল থেকে দোকানে ফিরে যেতে পারি।’
তার বক্তব্য শুনে ছয় নম্বর জুরী মৃদু হাসেন। বর্তমান দলে ইনি সবার চেয়ে তরল মেজাজে আছেন। ওয়ালষ্ট্রীটে চাকুরী করেন বলেই হয়তো সময়টা চুটিয়ে উপভোগ করছেন। এই মামলার আসামীদের মত তিনিও একজন দো-আঁশলা-সাদা কালোর সংমিশ্রন। তার কালো পিতা সাদা স্প্যানিশ যুবতীর সাথে মিলিত হয়েছিল, নাকি স্প্যানিশ পিতা কালো যুবতীর সাথে মিলিত হয়েছিল- আজাদ তা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়।
সাত নম্বর জুরী কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অংকের ছাত্রী। চায়নিজ ইমিগ্র্যান্ট। দলের সর্বকণিষ্ঠ এই যুবতী সাথে করে বই, খাতা, কলম এনেছেন। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে অংক করেন। জুরী ডিউটি শেষে কোর্ট থেকে সোজা ইউনিভার্সিটিতে যান। বাসায় ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। পরদিন সকালে অ্যালার্মের শব্দে জেগে আবার কোর্টে আসেন। খুব অসুবিধায় আছেন।
আজাদ রহমানের অসুবিধা আরো জটিল। সে মুখ ফুটে কাউকে এ কথা বলতে চায় না। জানা কথা, লাভ হবে না। গত এক বছরে বহু মানুষকে তার সমস্যার কথা খুলে বলেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দিয়েছে-কোনো লাভ হয়নি।
তারা পাঁচজন মিলে এক বাসায় থাকতো। সবার নামের প্রথমে মোহাম্মদ এবং শেষে রহমান আছে। নামগুলি একসাথে লিখলে একটি ছোট খাট বাংলা কবিতা হয়ে যায়। যার শব্দ বিন্যাস ও ছন্দে মিল আছে।
মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান
মোহাম্মদ মফিজুর রহমান
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
মোহাম্মদ জাবেদ রহমান
মোহাম্মদ আজাদ রহমান।
এ দেশে নামের মধ্যম অংশের গুরুত্ব নেই। সেটি লেখা হয় একটি মাত্র অক্ষর দিয়ে। মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান হয়ে যায় মোহাম্মদ এইচ. রহমান। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সে কষ্টটুকুও স্বীকার করে না, তারা মধ্যম অংশের ব্যবহার পুরোপুরি বাদ দেয়। তাদের বাসায় পাঁচজনের নামে সপ্তাহে গড়ে বিশটি চিঠি আসে। সবগুলি চিঠির প্রাপকের একই নাম-মোহাম্মদ রহমান। যতদিন তারা একসাথে ছিল, খুব একটা অসুবিধা হয়নি। হাফিজের একাউন্ট সিটি ব্যাংকে, মফিজের একাউন্ট চেজ ব্যাংকে। মিজানের আছে ডিসকভার ক্রেডিট কার্ড, জাভেদের-অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড। বিপত্তি শুরু হয় দেশ থেকে সবার পরিবার আসার পর। সবাই আলাদা বাসা নিয়ে চলে যায়। যাবার আগে নিয়ম মাফিক পোষ্ট অফিসে গিয়ে ঠিকানা বদলের ফরম সই করে। পরের মাস থেকে ভানুমতির খেল্ শুরু হয়। জাভেদের বউ তখনো বাংলাদেশে, তার প্রেমের চিঠি আসে হাফিজের কাছে। আজাদের বাপের লেখা চিঠি চলে যায় এতিম মিজানের কাছে। গত চার মাস ধরে আজাদ ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট পায় না। গ্যাস, কারেন্ট বিলের চিঠি আসে অনিয়মিত। দেরীতে বিল পরিশোধের কারনে জরিমানা দিতে হয়।
সে নিয়মিত গ্যাস কোম্পানীতে ফোন করে। তার ছুটির দিন কাটে ব্যাংকের কাষ্টোমার সার্ভিসের লাইনে দাঁড়িয়ে।
‘তোমাদের চিঠি আমার বাসায় আসেনা কেন?’
আমরা তো নিয়মিত চিঠি মেইল করছি। দাড়াও, কম্পিউটার চেক করি। তোমার নাম ঠিক আছে। ঠিকানা ঠিক আছে। তুমি বরং পোষ্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ করো।’
পোষ্ট অফিসের কেরানীকে বোঝানো সহজ হয় না। সে কিছুটা বোঝে, কিছুটা বোঝে না। শেষে একটা ফরম ফিলাপ করতে বলে। আজাদ ফরম পুরন করে এসেছে দুইমাস আগে, ব্যাংকের চিঠি আজো আসেনি। কোন্ মোহাম্মদ রহমানের কাছে যে গেল! তারা আজ কে কোথায় আছে, কে জানে ! জুরী টেবিলে বসে আজাদের বুক থেকে দীর্ঘ নিঃস্বাস বেরিয়ে আসে।
তিন নম্বর জুরী বলেন, ‘যে দোষী সেতো নিজের দোষ স্বীকার করেছে। এই নিরপরাধ ছেলে দুটিকে নিয়ে এত টানা হেচড়া করার মানে কি ? এই শহরে পুলিশের ক্ষমতা দিনে দিনে বাড়ানো হচ্ছে-এটা হচ্ছে সেই ক্ষমতার অপব্যবহার।’
দুই নম্বর জুরী শ্রাগ করেন, ‘পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো না হলে এই শহরে ভদ্রলোকেরা বাস করতে পারবে না। আপনিও যে কোনো সময় দূর্ঘটনার স্বীকার হবেন।’
সাত নম্বর জুরী, মানে, অংক ছাত্রীর মাথা খেলে চমৎকার। তার বক্তব্য, ‘এক বন্ধু শপিং মলে বসে মারিজুয়ানা খায়, আর একজন হেরোইনের ব্যবসা করে। এরা সবাই সবার হাড়ির খবর জানে। সুতরাং, এরা সবাই দোষী।’
সভাপতি প্রস্তাব করেন, ‘আরো বিস্তারিত আলাপ আলোচনার আগে আসুন আমরা বিষয়টা নিয়ে ভোটাভুটি করি। দেখি আমাদের কতজন মনে করে এরা দোষী, আর কতজন মনে করে নির্দোষ।’
কাগজে গিল্টি আর নট গিল্টি লিখে সভাপতির হাতে দেয়া হয়। তিনি ফলাফল প্রকাশ করেনÑচারজন রায় দিয়েছে দোষী, বাকী চারজন নির্দোষ। প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম জুরী নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে।
চার নম্বর জুরী! আজাদ চমকে উঠে। অথচ সে তাকে বর্ণবিদ্বেষী বলে ধরে নিয়েছে। একজন অভিজাত অ্যামেরিকান মনে করেছে এই শংকর ছেলে দু’টি কোন দোষ করেনি। সে নিজে তৃতীয় বিশ্বের প্রতিনিধি। তার গায়ের রঙ আর ওদের রঙ প্রায় একই ! অথচ সে ওদেরকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। সভাপতি সবাইকে নিজ নিজ সিদ্ধান্তের পক্ষে কারন দেখানোর আহবান জানান ।
‘মিঃ আজাদ তুমি কেনো ভাবো ওরা দোষী ?’
‘মাদক সমস্যা বর্তমান পৃথিবীর খারাপ সমস্যাগুলির একটি। এর সংগে সংশি¬ষ্ট সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
সবার মতামত দেয়া নেয়া চলতে থাকে। এসময় দরজায় নক করে সিকিউরিটির এক লোক ভেতরে ঢোকে।
‘সম্মানিত জুরী মন্ডলী। আলোচনায় আঘাত ঘটানোর জন্য দুঃখিত। আমি জানাতে এসেছি, আজকের লাঞ্চ ব্রেকে আপনারা কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। এখানে বসে লাঞ্চ সারতে হবে। কিছুক্ষন পর একজন বেয়াড়া এসে আপনাদের খাবার ও পানীয়ের অর্ডার নিয়ে যাবে। সমস্ত খাবারের বিল কোর্ট থেকে পরিশোধ করা হবে।’
আজাদ টুনা ফিস্ স্যান্ডইউচ আর জিনজার য়েলের অর্ডার দেয়। খেতে খেতে আলোচনা এগিয়ে চলে। কিন্তু খুব একটা অগ্রগতি হয়না। সবাই যার যার যুক্তিতে অনড়। এমতাবস্থায় সেদিনের মতো কোর্ট বন্ধ হয়ে যায়।
পরদিন যথারীতি সবাই আসে। এদিন ছিল শুক্রবার। শনি, রবি দু’দিন কোর্ট বন্ধ থাকে। সপ্তাহের শেষদিকে এসে আমেরিকানরা ক্লান্ত হয়ে যায়। বোধহয় সে কারনে অনেকে নাস্তা সেরে আসতে পারেনি। সাথে করে হালকা খাবার নিয়ে এসেছে। চার নম্বর জুরী, অর্থাৎ, আজাদ শুরুতে যাকে বর্ণবিদ্বেষী বলে ধরে নিয়েছিল, তিনি রসিয়ে রসিয়ে একটি প্রমান সাইজের আপেল শেষ করেন। আপেল শেষে কাগজের ব্যাগ থেকে কলা বের করে হাতে নেন। ঠিক সচেতনভাবে নয়, আজাদ এমনিতেই তার হাতের দিকে তাকিয়েছিল, তিনি যখন পুরো কলাটি ছিলে ফেলেন তখন তার সম্বিত ফেরে। কি আশ্চর্য! এই ভদ্রলোক পুরো ছেলা কলা কিভাবে খাবেন? তিনি হাতের পুরো মুঠি দিয়ে কলার মাঝখানে চেপে ধরেন, যাতে কলা ছিট্কে চলে যেতে না পারে। তারপর, আজাদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে একবার ডানে, একবার বামে কামড় দিয়ে কলার আকৃতি ছোট করে আনেন।
মাথা থেকে ছেলা কলার চিন্তা দুর করার জন্য আজাদ অন্য চিন্তা শুরু করে। সে মুখোমুখি বসা পাঁচ নম্বর জুরীকে জিজ্ঞেস করে,
‘দোষী প্রমানিত হলে এদের সাজা কি হবে ?’
পর্টুরিকান হতাশায় মাথা নাড়ে, ‘কমপক্ষে পনের বছরের জেল। ভেরি আনফেয়ার! ’
ধরা যাক, এদের উভয়ের বয়স এখন পঁচিশ বছর। দোষী সাব্যস্ত হলে সাজা খেটে মুক্ত পৃথিবীতে ফিরে আসতে এদের বয়স হবে চল্লিশ। যৌবনের সোনালী সময় পার হয়ে যাবে। তারমানে, এখানে উপস্থিত জুরীরা দোষী সাব্যস্ত করলে এরা আর কখনো বাইরের আলো বাতাসের মুখ দেখবে না। তাদের সময় কাটবে প্রিজন ভ্যান আর জেলের বন্ধ কামরার ভিতর। কি ভয়ানক ভাবনা!
আজাদের একমুখী চিন্তা এই পর্যায়ে এসে হোচট খায়। সে শুরু থেকেই ভাবছে এরা দু’জন প্রতক্ষ্যভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে দোষী। কিন্তু তাই বলে পনের বছরের জেল ? আইন আদালত সম্পর্কে পড়া একটি চমৎকার আপ্তবাক্য তার মনে পড়ে, ‘অসংখ্য দোষী ব্যক্তি ছাড়া পেয়ে যাক, কিন্তু একজন নির্দোষ ব্যক্তিও যেন সাজা না পায়।’
সবাই দোষী হিসেবে রায় দিলে তারও দোষী বলতে আপত্তি নেই। কিন্তু এখানে উপস্থিত জুরীদের অর্ধেক এদেরকে নির্দোষ বলে ভাবছে। তাহলে সে কেন অনুমানের উপর ভিত্তি করে শাস্তির রায় দেবে?
সেদিন লাঞ্চের আগে ভোটাভুটিতে আজাদ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। ভোট শেষে সভাপতি ফলাফল প্রকাশ করেনÑনির্দোষের পক্ষে পাঁচ, দোষীর পক্ষে তিন।
ব্রডওয়ে অভিনেতা আজাদকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কেন সিদ্ধান্ত বদল করলে?’
‘পনের বছরের জেল সহজ কথা নয়। এত কঠিন শাস্তির কথা শুনে ভয় লাগছে।’
‘তোমার দায়িত্ব জুরী হিসেবে রায় দেয়া। শাস্তি কি হবে না হবে সেটা দেখা তোমার বিষয় নয়।’
‘অবশ্যই আমার বিষয়। আমি একটা কাজ করব আর ফলাফল ভেবে দেখবো না ? তুমি কি ভালোমন্দ বিবেচনা না করে জীবনের সব সিদ্ধান্ত নাও?’
চায়নিজ ছাত্রী অংক খাতা থেকে চোখ তুলে জিজ্ঞেস করে, ‘মিঃ আজাদ, তোমার কি মনে হয় না এরা দোষী ?’
‘অবশ্যই মনে হয়। কিন্তু আমার মনে হওয়াই যথেষ্ট নয়। কাউকে দোষী প্রমানিত করতে হলে আরও নিরেট প্রমান দরকার। একজন ইতিমধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে বলেছে এরা দু’জন নির্দোষ। আমাদের অর্ধেক জুরী মনে করে এরা নির্দোষ। তা হলে বাকীরা কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছি যে এরা দোষী ?’
এরপর আজাদ সবার উদ্দেশ্যে বলে, ‘দেখুন, এরা যদি আসলেই অপরাধী হয়, যদি এবারে এদের শিক্ষা না হয়, তাহলে এরা আবার পুলিশে ধরা পড়বে। তারপর একদিন কোনো একদল জুরী দোষী রায় দিয়ে এদেরকে বাকী জীবনের জন্য জেলে পাঠিয়ে দেবে। অপরাধীরা কি কখনো আইনের হাত থেকে পুরোপুরি ছাড়া পায়?’
পর্টুরিকান বৈশিষ্ট্যমন্ডিত পাঁচ নম্বর জুরী মতামতের জন্য আজাদকে ধন্যবাদ জানান। সেদিন কোর্ট বন্ধ হবার আগে অভিনেতা আবার ভোটাভুটির অনুরোধ করে। সে ভোটে তিনি সিদ্ধান্ত বদলান। ছয়-দুই ভোটের ফলাফল নিয়ে দু’দিনের জন্য কোর্ট বন্ধ হয়ে যায়।
পরের সোমবার দুপুরে লাঞ্চের আগে অংকের ছাত্রী নমনীয় হয়।
‘গত দু’দিন এই নিয়ে অনেক ভেবেছি। আমি কন্ফিউজ। আমি এখনো জানি না-এরা দোষী, নাকি নির্দোষ। কিন্তু অন্য ছয়জন যেহেতু এদেরকে নির্দোষ বলে মত দিয়েছে, সেজন্য তাদের মতকে সমর্থন করছি।’
আজাদ ভেবেছিল সেদিনই এই ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বাধ সাধেন অবশিষ্ট অন্য জুরী-দো-আঁশলা। তিনি একের পর এক তূনীর থেকে তীর বের করে আক্রমন শানাতে থাকেন। মঙ্গলবারে তার কথাবার্তা শুনে এবং ভাবভঙ্গি দেখে আজাদের ধারনা হয়, সাতজনের বিরুদ্ধে একজনÑএই ব্যাপারটা ভদ্রমহিলা উপভোগ করছেন। এছাড়া তিনি ওয়াল ষ্ট্রীটের নামকরা কোম্পানীতে চাকুরী করেন। যতদিন জুরী ডিউটি করতে হোক না কেন, তার কোম্পানী বেতন দিতে বাধ্য। কোর্টের খরচে ভালোমন্দ লাঞ্চ খাওয়া চলছে। কোর্ট রক্ষীদের দেয়া ভি আই পি অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন-এবারে শেষ হলে আগামী পাঁচ বছরে আর কপালে জুটবে না। তাই খেলা শেষ করতে মন চায় না। বুধবার সকালে জুরী রুমে এসে বিশালদেহী পটুরিকান ঘোষনা দেন, আজ রায়ের ব্যাপারে একমত হওয়া না গেলে তিনি অপ্রীতিকর ভাষা ব্যবহার করবেন। কেউ তাকে দোষারোপ করতে পারবে না। বোধহয়, তার হুমকির কারনেই ভদ্রমহিলা লাঞ্চের আগে মত পরিবর্তন করেন। প্রধান জুরী শেষবারের মত ভোটের আয়োজন করে। আটজন জুরীর প্রত্যেকে আসামীদের নির্দোষ বলে রায় দেয়। প্রধান জুরী ভিতরের কোর্টরুমে সংকেত পাঠান।
‘আমরা রায় প্রকাশের জন্য তৈরী।’
আবার সেই কোর্টরুম। আসামীদের উৎকন্ঠিত চেহারা, সুচতুর উকিলদের সপ্র্রতিভ চলাফেরা, কী বোর্ডের উপর দু’হাত রেখে কোর্ট রিপোর্টারের ছাদের দিকে চেয়ে থাকা…। মাননীয় আদালত হাতুড়ির শব্দ করে সবার মনোযোগ আকৃষ্ট করেন।
‘সম্মানিত জুরীবৃন্দ, আপনারা সবাই কি রায়ের ব্যাপারে একমত হতে পেরেছেন?’
জুরীরা সবাই হাত তুলে সমস্বরে জবাব দেয়, ‘ইয়েস, ইওর অনার।’
‘জুরী নাম্বার ওয়ান এখন রায় পড়ে শোনাবেন। তিনি যা বলবেন তার প্রতি কি আপনাদের সবার সমর্থন আছে?’
‘ইয়েস, ইওর অনার।’
প্রধান জুরী হাতে ধরা কাগজ চোখের সামনে তুলে ধরে।
এক নম্বর আসামী-রেমন্ড গার্সিয়া। তিনি গাড়ীর মালিক এবং ঘটনার সময় গাড়ীটি তিনিই চালাচ্ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দুইটি –
(১) অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজের অধিকারে রাখা- নট গিল্টি।
(২) অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রির চেষ্টা করা -নট গিল্টি।
রায় শুনে সে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দুই হাত মাথার উপর তুলে ধরে। অদৃশ্য নিয়ন্ত্রন কর্তার উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বুকে ক্রশ চিহ্ন আঁকে, তারপর দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফোপাতে শুরু করে। দ্বিতীয় আসামী ভাবলেশহীন মুখে তার পাশে বসে থাকে।
দি¦তীয় আসামির নাম মার্ক জুলিয়াস। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তিনটি,
(১) অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রীর উদ্দেশ্যে নিজের অধিকারে রাখা- নট গিল্টি।
(২) অবৈধ মাদক দ্রব্য বিক্রির চেষ্টা করা – নট গিল্টি।
(৩) প্রকাশ্য জনসম্মুখে মারিজুয়ানা সেবন করা – গিল্টি।
মাননীয় আদালত কর্তব্য পালনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে জুরীদেরকে বিদায় করেন। আজাদ সেদিন কোর্ট বন্ধ হবার অনেক আগেই বাসায় চলে যায়।
এই আটদিন জুরী ডিউটি পালন করে তার বেশ আর্থিক ক্ষতি হয়। সে প্রতিদিন ট্যাক্সি চালিয়ে এক দেড়শ ডলার রোজগার করে। কোর্ট থেকে প্রতিদিনের জন্য দেয় মাত্র চলি¬শ ডলার। কিন্তু নাগরিকেরা দায়িত্ব পালন না করলে একটা রাষ্ট্র সু-শৃঙ্খলভাবে চলে কিভাবে? এছাড়া পরের বার যখন সে জুরী ডিউটি পালন করতে যাবে, তখন জজ সাহেব জিজ্ঞেস করবেন,
‘তুমি কি ইতিপূর্বে কোনো মামলায় রায় দিতে পেরেছো?’
সে বলবে, ‘ইয়েস, ইওর অনার।’
তখন অন্যান্য জুরীরা তাকে সমীহের চোখে দেখবে। উকিল সাহেবেরা বিশেষভাবে তার কথা মনে রাখবে। ভাসমান ইমিগ্রান্টদের এই দেশে সেটাও একেবারে কম পাওয়া নয়।