পথ ও প্রবাসের গল্প: প্যারেড নগরী (৩)

আবু রায়হান

দ্বিতীয় দিন দুপুরে সেদিনের তিন নাম্বার প্যানেলে আজাদের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়। সে বিশজনের ভিড়ে মিশে কোট সিকিউরিটিকে অনুসরণ করে একটি রুমে এসে ঢোকে। তারপর সবাই জুরীদের জন্য নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসে পড়ে। আজাদের বুক দুরু দুরু করে কাপতে থাকে। জীবনে এই প্রথম কোনো কোর্টরুমের ভিতরে ঢোকা। সে কৌতূহলী দৃষ্টিতে সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।
শুরুতেই সিকিউরিটি সবাইকে মোবাইল ফোন অফ করতে বলেন। কারো মাথায় টুপি বা ক্যাপ থাকলে তা নামিয়ে ফেলতে হবে। এটাই বিচারালয়ের রেওয়াজ। পিনপতন স্তব্দতার মাঝে মাননীয় আদালত তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি প্রথমে জুরীদের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন।
জুরী ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কি?
‘যখন বাদী ও বিবাদী পক্ষ কোন ধরনের ঐক্যমতে পৌছুতে ব্যর্থ হন, তখন জুরীর রায়ের প্রয়োজন হয়। আটজন জুরীর সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে ঐ কেসে চূড়ান্ত রায় হিসাবে বিবেচিত হয়। জুরী প্যানেলের প্রতিটি সদস্যকে রায়ের ব্যাপারে একমত পোষণ করতে হবে- হয় দোষী, নতুবা নির্দোষ। যদি একজন সদস্যও দ্বিমত করে তা হলে সেটাকে রায় বলা যাবে না। জুরীদের বর্তমান প্যানেল যদি দুই সপ্তাহ (দশদিন) সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বর্তমান প্যানেল ভেঙ্গে দিয়ে আবার নতুন জুরীদের দল গঠন করা হবে।’
‘যে ঘটনা নিয়ে বিচার চলছে, সেই একই ধরনের ঘটনা যদি কারো ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে থাকে, অর্থাৎ কেউ যদি বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের মত বিব্রতবোধ করেন, তাহলে তিনি চাইলে ঐ মামলায় জড়িত না-ও হতে পারেন।’
মাননীয় আদালত তোতাপাখির বুলির মত নিয়ম কানুন বলে যেতে থাকেন। সন্দেহ নেই, তিনি এসব কথা ইতোমধ্যে বহুবার আউড়েছেন। তার বসার ভঙ্গিতে খুব আয়েশী ভাব আছে।
‘তাতো থাকবেই’ সে মনে মনে ভাবে। ‘যদি তিনি আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতেন, তাহলে বুঝতেন কত ধানে কত চাল। আজাদ পরমুহূর্তে তার ভুল বুঝতে পারে। এদেশের মানুষ তো ভাত খায় না। তারা খায় গম আর ভুট্টার তৈরি খাবার। তাই সে তৎক্ষনাৎ নিজেকে সংশোধন করে, ‘তাহলে জজসাহেব বুঝতেন কতখানি গমে কখানা পাউরুটি হয়।’
দুই পক্ষের উকিল এবং জজ সাহেবের বক্তব্য শুনতে শুনতে আজাদের মনের মেঘ কেটে যায়। এতক্ষন তার ভিতর চাপা অস্বস্তি ও ভয় কাজ করছিল। এবারে সেটা হাল্কা হতে শুরু করে। সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে জুরী ডিউটি পালন করবে না। এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরে একজন বাংলাদেশী হিসেবে তার খুব গর্ববোধ হয়।
এই রুমে উপস্থিত আর সব দেশ-জাতির ইমিগ্র্যান্ট নাগরিকেরা এতরড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কিনা, আজাদের জানা নেই। কিন্তু বাংলাদেশীদের সেই ক্ষমতা আছে। এই ঘোর বিদেশেও তারা অসাধ্য সাধনে সিদ্ধহস্ত। তাদের কেউ কেউ সামান্য কিছু কথ্য ইংরেজি নিয়ে এদেশে খুব ভালোভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন। বেশিরভাগ সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত পদ্ধতি আছে। অনেক ক্ষেত্রে এই সব পদ্ধতি ভালো কাজও দেয়। সেই ধরনের একজন বাংলাদেশী আমেরিকান নাগরিকের পরামর্শ এই মুহূর্তে খুব ভরসা যোগায়। সে যখন তার জুরী ডিউটি সমস্যা নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবছিল তখন এই ভদ্রলোকের সাথে দেখা হয়। আজাদের ভাবনার কথা শুনে তিনি তাকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেন।
‘জুরী ডিউটিতে যাবেন, সেটা নিয়ে এত চিন্তার কি আছে ? কোর্ট রুমে যাবেন, কাঠের চেয়ারে বইস্যা মন দিয়া হ্যাগো কথা শুনবেন। মাঝে মাঝে মাথা নাড়বেন, য্যান সব কথা বুঝছেন। দুই একবার ইয়েস-নো বলবেন, তারপর… বেশিরভাগ যেদিকে ভোট দ্যায়, আপনেও সেখানে দেবেন। ব্যাস! দায়িত্ব খতম। আর যদি মামলার মধ্যে জড়াইতে না চানÑজড়াইবেন না। সে কৌশলও শিখাইয়া দিমু।’
আজাদের কন্ঠ থেকে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ঝড়ে পরে, ‘সে কৌশলও জানা আছে নাকি!’
‘আরে মিয়া, কয় কি! আমি এদেশের সিটিজেন হইছি না! পারছে ঠেকাইতে? প্রথম বার অবশ্য সিটিজেন পরীক্ষায় ফেল করায়া দিছিলো। বেডি (আজাদ অনুমান করে, ইমিগ্রেশনের ফিমেল অফিসারের কথা বলছে) কয়, আমার ইংলিশ নাকি ভালো না। ভালো কইরা ইংরেজি শিইখ্যা তারপর যাইতে কইছিল। অ্যারপর আমি কি ইংরেজির ক্লাসে গেছি নাকি ? খালি মাথা খাডাইছি। মাথা খাডাইয়া বুদ্ধি বাইর করছি। পরের বার পরীক্ষা দিতে গেছি- পাস। তিনবারেও আইএ পাস করতে পারি নাই! মাত্র দুই চান্সেই সিটিজেনশীপের পরীক্ষায় পাস ! বাঙ্গালী বুদ্ধিকে ডিফিট্ দিবো এত বুদ্ধি কি আমেরিকানদের আছে ?’
‘আপনি ইংরেজির ব্যাপারে বুদ্ধি খাটিয়ে কি আবিষ্কার করলেন ?’
‘ধরেন আপনের তিয়াস লাগছে। পানি খাইবেন। কোন খাবারের দোকানে গিয়া কইবেন, মে আই হ্যাভ এ গ্লাস অব ওয়াটার প্লিজ, এই তো! একদিন একটা দোকানে গিয়া এই কথা কয়া দ্যাহেন না! এরা আপনের গ্লাস বুজবো তো ওয়াটার বুজবো না। ওয়াটার বুজবো তো পিলিজ বুজবো না। আপনের মুখের জবান যত দীর্ঘ হবে, ঝামেলা তত দীর্ঘতর হবে। তারচেয়ে শর্টকার্ট রাস্তা খোঁজেন। দোকানে ঢুইক্যা দেইখ্যা লন পানির ফিল্টার কোথায় রাখছে। তারপর সেদিকে হাত ইশারা কইরা বলেন, ‘ওয়াটার’। ব্যাস! পানি আইসা যাইবো। এতসব সাবজেক্ট, অবজেক্ট, ক্রিয়াপদের ঝামেলায় যাবার দরকার কি ?’
আজাদ এই ভদ্রলোকের কথা বিশ্বাস করে। সে অনেকেকে এভাবে কথা বলতে দেখেছে। এতদিন এর রহস্য বুঝতে পারেনি। আজ সব জরবৎ তরলং লাগছে। এবার সে ইংরেজি বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করে, ‘জুরী ডিউটি পালনে ফাঁকি দেয়া যায় কিভাবে ? এ ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা আছে ?’
‘দুইবার কোর্ট রুমের ভিতরে গেছি। জুরী সিলেকশন প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষ প্রশ্নে জজ জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এই দায়িত্ব পালন করতে পারবে ? তখন বলেছি, না স্যার। আমি ইংরেজি জানি না। নো ইংলিশ… খেল খতম। এরপর যদি আরও কিছু জিজ্ঞেস করে, বুদ্ধি খাডায়া উত্তর দেবেন। আপনের মাথায় বাঙ্গালি বুদ্ধি আছে না ?’
ভূমিকা বক্তব্য শেষ হবার পর মাননীয় আদালত আয়েশী ভঙ্গি ঝেড়ে ফেলেন। টান টান হয়ে বসে কোর্ট রুমের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। ‘জুরী মহোদয়গন, সেন্ট্রাল জুরী রুমে আপনাদের হাতে একটা ফরম দেয়া হয়েছিল। এই ফরমে দশটা প্রশ্ন আছে। সবাইকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে ফরম পূরণ করেন নাই, তারা ঝটপট সেরে ফেলুন।’
মাননীয় আদালত একটু বিরতি নেন। কিন্তু কারো মধ্যে নড়াচড়া লক্ষ্য করা যায় না। সবাই ইতোমধ্যে ফরম পূরণ করেছেন ।
‘এই ফরমে কি কি প্রশ্ন আছে তা আমি জানি। কাজেই আপনাদের প্রশ্নগুলো পড়তে হবে না। শুধু নাম্বার উল্লেখ করবেন এবং উত্তর বলবেন। সামনের সারির ডানপাশে যিনি বসে আছেন তিনি নাম্বার ওয়ান ব্যক্তি। প্রথমে আপনি শুরু করুন।’
চতুর্থ সারিতে বসা পনের নাম্বার ব্যক্তি আজাদ রহমান। তার দেয়া উলে¬খযোগ্য প্রশ্নোত্তরগুলি ছিল:
নাম ঃ মোহা¤মদ আজাদ রহমান,
জম্মের স্থান ঃ বাংলাদেশ,
পেশা ঃ ট্রাক্সি ড্রাইভিং,
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিবাহিত সময় ঃ পনের বছর।
তুমি কি কখনো যুক্তরাষ্ট্রের আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছো ঃ না
জুরী ডিউটি পালনে সক্ষম কিনা ঃ না ।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কেউ শেষ প্রশ্নের উত্তরে না বলে নি। আজাদই প্রথম। জজসাহেব নড়েচড়ে বসেন। সারা কোর্টের সবাই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। এতগুলো চোখের দৃষ্টি তার দিকে অনুভব করে সে সঙ্কুচিত বোধ করে। কেন মিছেমিছি না বলতে গেল? কিন্তু ইতোমধ্যে তীর ছোড়া হয়ে গেছে। মাননীয় আদালতের পরবর্তী প্রশ্ন তার মর্মযাতনা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
‘মিঃ আজাদ, তুমি বললে যে জুরী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না, কেন?’
‘আমার ইংরেজি খুব একটা ভালো না, ইওর অনার। নো ই…’ সেই ইংরেজী বিশেষজ্ঞের কথামত নো ইংলিশ বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। তার ইংরেজি উচ্চারণ এদেশীয়দের থেকে ভিন্ন। তবুও তো সে ইংরেজিতেই কথা বলছে। এই অবস্থায় নো ইংলিশ কথাটা নিশ্চয়ই হাস্যকর শোনাবে।
‘মিঃ আজাদ তোমার পেশার কথা বললে, ট্যাক্সি ড্রাইভিং। ইংরেজি ভালো না বুঝলে বা কথা বলতে না পারলে তুমি ট্যাক্সি চালাও কিভাবে ?’
‘ইওর অনার, আইন আদালতের ভাষা ট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ের ভাষার চেয়ে ভিন্ন, জটিল। সেজন্য আমি ভীত যে, জুরীর দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারবো না।’
‘ধন্যবাদ, মিঃ আজাদ। সিট ডাউন, প্লিজ।’
বিশজনের এই দল থেকে জুরী হিসাবে চারজন নির্বাচিত হয়। তাদেরকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্বাচিত না হওয়া বাকীদের সাথে আজাদ সেন্ট্রাল জুরী রুমে ফিরে আসে। সেদিনের আর কোন জুরী প্যানেলে তাকে অন্তর্র্ভুক্ত করা হয় না। বিকেল সারে চারটা বাজতেই সেদিনের মত দায়িত্ব শেষ হয়।
সেদিন বাসায় ফিরে আজাদ খুব মন মরা থাকে। কোর্ট রুমের ভিতরে অন্যদের সকৌতুক দৃষ্টির কথা মনে পড়লে ভিতরে খচখচ করে উঠে। কি দরকার ছিল আগ বাড়িয়ে ভাষার দৈন্যতা প্রকাশ করার ? অথচ এই ইংরেজি শেখার জন্য সারাজীবন কত পরিশ্রম করতে হয়েছে। একটা বিদেশী ভাষার সাথে পরিচয় হওয়াÑপড়তে শেখা, লিখতে শেখা। বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর। লিখার অক্ষর, ছাপার অক্ষর। ছাত্রজীবনের অন্যতম আতঙ্ক ছিল ইংরেজি রচনা মুখস্থ করে ব্রেনের কোষে জমা রাখা। একটি দুটি নয়-অনেকগুলি। কোন্টি কমন পড়ে কে জানে। মাঝে মাঝে সেগুলি আবার পড়ে ঝালাই করে নিতে হয়। নইলে সব এলোমেলো হয়ে তালগোল পাকিয়ে যায়।
প্রথম যেদিন ক্লাসের স্যার তাদেরকে বললেন যে, ইংরেজিতে গরুর রচনা মুখস্থ করতে হবে, সেদিন প্রথমে স্যারের কথা বিশ্বাস করতে পারেনি। দেড়পাতা ইংরেজির পুরোটা মুখস্থ করতে হবে ? এ-ও কি সম্ভব ! তারপর স্যার সু-হৃদের পরিচয় দিয়ে বললেন পুরোটা নয়-প্রথমে একটা প্যারা। সন্ধেয় ঘরে ফিরে বাঁশের চাটাইয়ে বসে সে বিপুল বিক্রমে ‘এছে’ মুখস্ত করতে লেগে যায়। ‘দি কাউ ইজ এ ডামোষ্টিক এনিমেল। দি কাউ ইজ এ ডামোষ্টিক…।’ বড় ভাই পিছন থেকে খেকিয়ে উঠেন,
‘ডামোষ্টিক না, ডমেষ্টিক… এ না, ও এর উচ্চারণ কর।’
‘ডমেষ্টিক… ডমেষ্টিক… ডমেষ্টিক… ডমেষ্টিক……।
‘হয়েছে। এবারে পুরা বাক্যটা পড়।’
‘দি কাউ ইজ এ ডমেষ্টিক এ্যানিমেল… দি কাউ ইজ এ… ।’
গলার রগ ফুলিয়ে তারস্বরে চিৎকার করে পড়া-পড়তেই থাকা। অবাধ্য ও অবোধ্য কিছু শব্দমালাকে মগজের মধ্যে পৌঁছে দেবার চেষ্টা। কতবার পড়া হয় সে হিসাব থাকে না। ফের সন্বিত ফেরে বড় ভাইয়ের ধমকে।
‘কি রে! সারারাত ধরে কি ঐ একটি বাক্যই পড়বি ? পরের বাক্যে যা।’
সেবারে পুরো তিনমাস লেগে যায় বেয়াড়া ‘গরু’ কে আয়ত্বে আনতে । তারপরও গরুর চেহারা-সুরুত অবিকৃত রাখতে পরের দুই বছর নিয়মিত রিভাইজ দিতে হয়। নতুবা ষাড় ও গাভীর পার্থক্য মনে থাকে তো একপাটি দাঁতের রহস্যের কথা মনে পড়ে না। লেজের চুলের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে পড়ে তো গোবরের উপকারিতার কথা খেয়াল থাকে না।
তারা আর একটু উপরের ক্লাসে গেলে স্যার তাদেরকে শব্দ গঠন (Word Building) খেলা শিখিয়ে দেন। প্রতিপক্ষের চোখে ফাঁকি দিয়ে যে যত বেশি শব্দ গঠন করতে পারবে-সে তত বেশি নাম্বার পাবে। খেলায় জেতার জন্য ডিক্শনারী থেকে নতুন আর কঠিন শব্দ শেখার সেই দিনগুলি! নবম শ্রেণীতে উঠার পর ইংরেজি নিয়ে প্যাচ লাগায় জোনাথন সুইফ্টের ‘গালিভার’। গালিভার স্যার প্রতিদিন ক্লাসে বেত নিয়ে ঢুকতেন। তিনি নিশ্চিত থাকতেন যে, ক্লাসের কাউকে না কাউকে ঠিক পেটাতে পারবেন। সেই মারের কথা মনে হলে এখনও শরীরের বিভিন্ন স্থান টনটন করে উঠে।
ইংরেজি শেখা নিয়ে কত ঘটনা, কত স্মৃতি! কি অসম্ভব প্রচেষ্টা ! আর সে কিনা বলে এলো ইংরেজীর কারনে জুরী ডিউটি করতে পারবে না।
পরদিন বিকেল নাগাদ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জুরী যোগাড় হয়ে যাওয়ায় বাকী সাবাইকে ডিসচার্জ করে দেয়া হয়। আজাদ বিষন্ন মনে বাসায় ফেরে। তিন সপ্তাহ পর তার ঠিকানায় ট্রেজারী ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি চিঠি এসে হাজির হয়। একজন সুনাগরিক হিসেবে সে সাফল্যের সাথে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছে। এজন্য নিউইয়র্ক ষ্টেট তার তিন দিনের মজুরী একশ’ বিশ ডলারের চেক পাঠিয়ে দিয়েছে। সে খুশী মনে চেক সই করে ব্যাংকে জমা দেয়।