নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশের মানুষ যেখানে ইলিশ চোখেও দেখতে পাচ্ছে না, সেখানে ভারতে পাঠানো হচ্ছে টন টন ইলিশ। গত বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের জন্য ১০০ মেট্রিক টন ইলিশ উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। কলকাতা শহরসহ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এতে আনন্দিত হয়েছিল। এবারও পূজা সামনে রেখে ১২ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নয়াদিল্লিতে, বাংলাদেশ থেকে তখন ইলিশের প্রথম চালান পাঠানো হলো। সামনের আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা। মোট ১০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানো হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে উপহার হিসেবে বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় মাছ ইলিশ দেওয়ায় অসন্তুষ্ট হয় বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ যেখানে ইলিশ খেতে এমনকি চোখেও দেখতে পায় না, সেখানে প্রতিবেশীর প্রতি এতটা সৌজন্য দেখানোয় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে গত বছর পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের বেশি হয়েছে বলে সরকারিভাবে দাবি করা হয়। উৎপাদন বাড়লেও গত বছর দেশের মানুষের কাছে ইলিশ ছিল নাগালের বাইরে। এবারের অবস্থাও ভয়াবহ। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। দেড় কেজির ইলিশের কেজি ১৭০০ থেকে ১৮০০ এবং ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়।
একদিকে মুনাফালোভী আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে ভারতে ইলিশ পাচার করছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ পাঠাচ্ছে। মূলত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের মন জয়ের জন্য সরকারের এই অতি সৌজন্য প্রদর্শন। কিন্তু তাতেও বাংলাদেশের প্রতি মমতাহীন মমতা। বাংলাদেশকে তিস্তার পানি থেকে বঞ্চিত রাখতে মমতা বরাবরের মতো এবারও বৈরী মনোভাব দেখিয়েছেন। তিস্তাপারের দুই কোটি মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিবেচনায়ই নিচ্ছে না। তাই গত বছর কোনো মহল থেকেও ইলিশ নিয়ে আপত্তি না উঠলেও এবার ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন সাধারণ মানুষও অসন্তুষ্ট হন। বাংলাদেশ তার কৃতজ্ঞতা ও মহানুভবতা অব্যাহতভাবে দেখিয়ে এলেও মমতার তৃণমূল সরকার ন্যূনতম সহানুভূতিও দেখাচ্ছে না। তাই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মমতাহীন এই মমতার জন্য কেন প্রতিবছর পাঠানো হচ্ছে টনে টন ইলিশ!