পররাষ্ট্র দপ্তর কি ভাঙছেন টিলারসন

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন যেভাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একের পর এক ছাঁটাই করছেন, তাতে এই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্রেটিক সদস্যরা এক চিঠিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে শতাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই দপ্তর ছেড়ে চলে গেছেন। এই ঢালাও কর্মচ্যুতির ফলে পররাষ্ট্র দপ্তর তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে বলে মন্তব্য ডেমোক্র্যাট সদস্যদের।

টিলারসনকে লেখা এক ভিন্ন চিঠিতে রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন ও ডেমোক্রেটিক সিনেটর জিন শাহিন তাঁর ‘অনভিজ্ঞ নেতৃত্বের’ সমালোচনা করে বলেছেন, বিশ্ব যখন বিভিন্ন জটিল সংকটের মুখে, ঠিক সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ক্ষমতার হ্রাস দুর্ভাগ্যজনক। এই দপ্তরের কর্মকর্তাদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে এই অবস্থার জন্য রেক্স টিলারসনের ‘বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা’কেই দায়ী করেছেন তাঁরা।
একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কূটনীতিকদের সংগঠন ফরেন সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন। তারা জানিয়েছে, টিলারসনের অধীনে রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ বহু পদে এখনো কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পররাষ্ট্র দপ্তরের হাল এতটাই উদ্বেগজনক যে নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয় বিভাগের এক নিবন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন বস্তুত মার্কিন কূটনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এই ক্রমবর্ধমান সমালোচনায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রবীণ সাবেক কূটনীতিক; নিকোলাস বার্নস ও রায়ান ক্রকার। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক যৌথ নিবন্ধে তাঁরা লিখছেন, কূটনীতির প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের অবজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদেরা এই পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস কার্যত গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে দক্ষতার বদলে রাজনৈতিক আনুগত্য কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, তার উদাহরণ হিসেবে তাঁরা সম্প্রতি স্বল্প অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সাবেক কূটনীতিককে কর্মসংস্থান অধ্যক্ষ (চিফ অব পেরসোন্যাল) হিসেবে নিয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন।

ফরেন সার্ভিসে কর্মরত ব্যক্তিদের সংখ্যা এত দ্রুত কমে যাওয়ার আপাত কারণ বাজেট প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। ক্ষমতা গ্রহণের পরপর ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন খাতে বড় রকমের পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করে। ফলে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। সেখানে বার্ষিক বাজেট ৩১ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। এই বাজেট হ্রাসের কারণ উল্লেখ করে টিলারসন নিজ দপ্তরের সদস্যসংখ্যা ৮ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
দুই দিন আগে ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারে এক ভাষণে টিলারসন বলেন, এর আগে তাঁর দপ্তরের বার্ষিক বাজেট ছিল ৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা অব্যাহত রাখা অসম্ভব। মার্কিন কূটনীতিকে দুর্বল করছেন অথবা পররাষ্ট্র দপ্তর ভেঙে দিচ্ছেন, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন টিলারসন।