পাঠক প্রিয়তায় সেরা ঠিকানা

আহবাব চৌধুরী খোকন :

বহির্বিশ্বের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিকী ঠিকানার ৩৩ বছর পূর্তিতে আমি এই সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে জনাব এম এম শাহীনের সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করে প্রবাসের এই জনপ্রিয় পত্রিকা। তার পর থেকে সমান গুণগত মান ও বস্তুনিষ্ঠতা অটুট রেখে একেক করে তেত্রিশটি বছর এই সংবাদপত্র কমিউনিটির সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জনাব এম এম শাহীন সত্যিকার অর্থে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
নিউইয়র্কে বহু প্রশংসনীয় কাজ শুরু করেছেন তিনি। বলতে দ্বিধা নেই, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি এখন তাঁর দেখানো পথ ধরে হাঁটছে। সিলেটবাসীর প্রাণের সংগঠন ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন যুক্তরাষ্ট্রে পথচলা শুরু করেছিল তাঁর নেতৃত্বে। মূলধারার সংগঠন বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার স্ধ্াারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। নিউইয়র্কে অমর একুশে উপলক্ষে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের প্রচলন তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম শুরু হয়েছিল। আবার এই নিউইয়র্কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরী থেকে নিয়মিত বাংলা সংবাদপত্র বের করার সাহসী উদ্যোগ তিনি প্রথম নিয়েছিলেন।

যতটুকু মনে পড়ে, সাপ্তাহিক ঠিকানা আমার প্রথম নজর কাড়ে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে। আমি তখনো নিউইয়র্কে আসিনি। নিউইয়র্কে এসেছি তারও প্রায় ১০ বছর পরে ২০০১ সালে। আমার নিউইয়র্ক প্রবাসী ভাই হুমায়ুন চৌধুরী ডালিম দেশে যাওয়ার সময় আমার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন ঠিকানার বেশ কয়েকটি সংখ্যা। আমি তখন দৈনিক দিনকাল ও সিলেট বাণী পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতাম। প্রথম দর্শনে ঠিকানার আকার, গেটআপ ও মেকআপ দেখে মনে হয়েছিল, পত্রিকাটিতে প্রচুর নতুনত্ব রয়েছে। এই সাইজের (ট্যাবলয়েড সাইজ) পত্রিকা খুব কম দেখেছি। যদিও পরবর্তী সময়ে ট্যাবলয়েড সাইজে ঢাকা থেকে জনাব মতিউর রহমান চৌধুরী দৈনিক মানবজমিন নামে একটি দৈনিক পত্রিকা বের করেন এবং তা এখনো নিয়মিত বের হচ্ছে। প্রথম দিনই ঠিকানা পত্রিকাটি দেখে ও পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছিল। কারণ তাতে ছিল যেমন দেশ ও প্রবাসের অনেক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ, তেমনি বরেণ্য ব্যক্তিত্বের তথ্যবহুল লেখা কলাম ও ফিচার।

এ কথা অনস্বীকার্য যে সাপ্তাহিক ঠিকানা যে সময়টাতে যাত্রা শুরু করেছে, সে সময় একটি সংবাদপত্র নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। তখন প্রযুক্তি এখনকার মতো যেমন উন্নত ছিল না, তেমনি ছিল না উন্মুক্ত আকাশ। এখন মুক্ত সংস্কৃতির প্রভাবে গোটা পৃথিবী চলে এসেছে একই ছাদের নিচে। ফলে মুহূর্তেই সবকিছু চলে আসে মানুষের দৃষ্টি সীমানায়। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টিউটার সমান্তরালে কাজ করেছে গণমাধ্যম হিসেবে।

কিন্তু ঠিকানা যে সময় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, তখন হাতের নাগালে ইন্টারনেটের এতটা অবারিত সুযোগ ছিল না। ফলে দেশের খবরাখবর জানার জন্য প্রবাসীরা পুরো সপ্তাহ ঠিকানার অপেক্ষায় বসে থাকতেন। আবার ঠিকানা পত্রিকাকেও এই সব নিউজ সরবরাহে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। এই সময় শুধু নিউইয়র্ক নয়; টরন্টো, মন্টিয়লসহ পুরো উত্তর আমেরিকার প্রবাসীরা ঠিকানার ওপর এতটা নির্ভরশীল ছিলেন যে, শুনেছি বুধবার দুপুর হলেই লোকজন একটি ঠিকানার জন্য বাংলাদেশি গ্রোসারিগুলোতে হুমড়ি খেয়ে ভিড় জমাতেন।

নিউইয়র্ক থেকে এখন বহু পত্রিকা বের হলেও মানসম্পন্ন পত্রিকার সংখ্যা খুব বেশি নয়। সব কটি পত্রিকার মধ্যে বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতায় ঠিকানা এখনো পাঠক ও গ্রাহকদের নিকট এক নম্বর পত্রিকা হিসেবে বিবেচিত হয়। একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ ও চৌকস সংবাদকর্মী হচ্ছেন এই পত্রিকার প্রাণ; যারা সততা, আস্থা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সদা জাগ্রত। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন কমিউনিটির সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জনাব এম এম শাহীন। আছেন প্রধান সম্পাদক জনাব ফজলুর রহমান, যিনি পেশায় একজন প্রবীণ সাংবাদিক। নির্বাহী সম্পাদক জাবেদ খসরু ও সহযোগী সম্পাদক হিসেবে আছন শামসুল হক। বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন কমিউনিটির প্রিয়মুখ তরুণ সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম। তাদের প্রত্যেকেই পেশাগতভাবে প্রতিশ্রুতিশীল ও দায়িত্বশীল। আবার নতুন করে এখন ঠিকানায় যুক্ত হয়েছেন সম্পাদক-কন্যা মুশরাত শাহীন। কমিউনিটির বহুল জনপ্রিয় ও পাঠকনন্দিত সাপ্তাহিকী ঠিকানার ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি এর অব্যাহত প্রকাশনা ও উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।

লেখক : কলাম লেখক ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, নিউইয়র্ক।