
পঞ্চগড় : তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাহুক, সাঁও ও করতোয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট এবং সীমান্তবর্তী কিছু সমতল এলাকায় রাতের আঁধারে প্রায় ৪০০ নিষিদ্ধ বোমা মেশিন চালিয়ে পাথর তুলছে একটি চক্র। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধভাবে পাথর তুলে যাচ্ছে তারা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় যারা ড্রেজারের শ্রমিক ছিলেন তারাই এখন ড্রেজার মেশিনের মালিক। তাদের পেছনে মূল ইন্ধনদাতা ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা ভজনপুর ইউনিয়নের ডিমাগছ এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে আবু বক্কর, গণাগছ এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে এসারুল ও শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ এলাকার চান মিয়ার ছেলে শেখ ফরিদ।
স্থানীয় লোকজন আরো জানায়, এই তিন হোতার প্রত্যেকেই এখন কোটিপতি। ‘লাইনম্যান’ হিসেবে পরিচিত এই তিনজন মিলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে প্রতি রাতে মেশিনপ্রতি আট হাজার টাকা নেন। সে হিসাবে কয়েক শ মেশিনে তাদের মাধ্যমে এক রাতেই ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় বক্কর নিজেই ছিলেন পাথর শ্রমিক। এখন তিনি ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার মালিক। তার রয়েছে আলিশান বাড়ি। এ ছাড়া পাঁচটি ট্রাক্টর ও নিজস্ব ওয়ার্কশপ রয়েছে তার। ১০০টিরও বেশি ড্রেজারে তার শেয়ার রয়েছে।
আরেক ‘লাইনম্যান’ এসারুল একসময় দিনমজুরের কাজ করতেন। তিনি বক্করের বিশ্বস্ত বন্ধু। বর্তমানে দুটি ট্রাক্টরসহ প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি।
শেখ ফরিদও আগে শ্রমিক ছিলেন। এখন ২০ একর জমি নিয়ে তার একটি চা বাগান ও তিনটি ট্রাক রয়েছে। সব মিলিয়ে তিনি প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক এখন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, তেঁতুলিয়ার শালবাহান ও মাঝিপাড়া এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন শেখ ফরিদ। আর ভজনপুর ও তার পাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন বক্কর ও এসারুল। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন ভজনপুর এলাকার আশরাফুল ইসলাম, সালাম, রুবেল, ঢিপা ও মেহের আলী।
এ ছাড়া উপজেলার গোলাব্দিগছ ঘাটে সুমন, কালাম ও মোমিন; দক্ষিণ গণাগছে রুবেল ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহিদ হোসেন; ঘগারখালে জলিল, আরিফ ও মোতালেব মাস্টার; কুকুরমুহায় জাহাঙ্গীর, আব্দুর রহিম ও মশিবুল; ধানশুকা ঘাটে নাজিম; ঝালেঙ্গিগছে রেজাউল, মশারুল ও ইউনুস; কালিয়ামনিতে সালেক; পীরের ডাঙ্গায় নাসিরুল; শিবচণ্ডী ঈদগায় শেবা; জয়গুণজোতে আবুর নেতৃত্বে চলে ড্রেজার।
স্থানীয় লোজনের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে, শুকানি দোমুখায় খোকা ও আলম; আঠারোখাড়িতে কলিম উদ্দিন; পাথরঘাটায় জাহিদুল মেম্বার; শিয়ালখাওয়ায় আবু বক্কর ও এনতা; সিপাইপাড়া চায়না বাগানে এশিয়ার ও আবু বক্কর; সিপাইপাড়া লিচুবাগানে কালাম ও রহিম; ভদ্রেশ্বর শিবমন্দিরে আলম; ভদ্রেশ্বর ঈদগায় হামিদ; ফকিরহাট দোমুখায় হামিদ ও সুভাষ এবং ভুসমারী এলাকায় কাজলের নেতৃত্বে ড্রেজার চালানো হয়। আর কীর্তনপাড়া, শান্তিনগর, ভাঙ্গিপাড়া ও বাঁশবাড়ী এলাকায় ড্রেজারের নেতৃত্ব দেয় ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদ আলীর স্বজনরা। এ ব্যাপারে আবু বক্করের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অন্য দিকে শেখ ফরিদ পরে কথা হবে বলে কল কেটে দিয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে রাখেন।
পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘ড্রেজার মেশিনের মামলাগুলো তেমন শক্তিশালী নয়। এ কারণে আসামিরা সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে।’ পরিবেশ বিপর্যয় থেকে এ এলাকাকে রক্ষা করতে হলে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার বিকল্প নেই মনে করেন তিনি।