পাপ-সাগরে বিশ্বের তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়

মুহম্মদ শামসুল হক :

ক. বসন্তের কোকিল প্রবন্ধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন : ‘তুমি বসন্তের কোকিল, শীত-বর্ষার কেউ নও। যখন প্রবল বর্ষার অবিশ্রান্ত বর্ষণে আমার চালাঘরে পানি ঝরে, চিল-কাক ভিজে একাকার; তখন তুমি কোথায় থাক বাপু, তোমার কালো কালো রূপশ্রীর দেখতে পাওয়া যায়না। রাগ করোনা বাপু, তোমার মত মানুষ কোকিলে আমাদের সমাজও ঠাসা। নশী বাবুর যখন তালুকের খাজনা আসে তখন মানুষ কোকিলে তাঁর বৈঠকখানা গিজ গিজ করে। কেউ খায়, কেউ গায়, কেউ হাসে, কেউ কাশে, কেউ মাত্রা পোড়ায়, কেউ টেবিলের নিচে গড়ায়। হেটো ইংরেজি, মেঠো ইংরেজি, ছেঁড়া ইংরেজিতে বৈঠকখানা পারাবত কাকরীসঙ্কর গৃহসৌধ বত বিকৃত করে তোলে। আর যে রাতে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি ঝরছিল এবং নশীবাবুর নাতিটা অকালে মারা গেল, তিনি কাউকে কাছে পেলেন না। কেউ সারারাত অনিদ্রায় কাটিয়েছেন, তাই শয্যা ত্যাগে অনেক বিলম্ব হবে। কারও একটি নাতি হয়েছে তাই আনন্দের আতিশয্যে আসতে পারলেন না। সোজাকথা সেদিন বর্ষা, বসন্ত নয়, তাই বসন্তের কোকিল আসবেই বা কেন?’ [প্রবন্ধটি ১৯৬০ এর দশকে পড়েছিলাম। তাই উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে স্মৃতিভ্রমজনিত অসংগতি মার্জনার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।]

খ. অপ্রতিদ্বন্দ্বী কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কালোত্তীর্ণ সৃষ্টি ‘মহেশ’ গল্পের অন্যতম আকর্ষণীয় চরিত্র গো-প্রেমে বিগলিত ব্রাহ্মণ তর্করত্ন। অগ্নিঝরা রোদের মাঝে একটা পুরাতন বাবলা গাছের ডালের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দারিদ্র্যক্লিষ্ট বর্গাচাষী গফুরের মহেশ নামক ষাঁড়টিকে বাঁধা দেখে তর্করত্নের দরদ উথলে উঠল। জ্বরে কম্পমান অসহায় গফুরকে হাঁক-ডাক দিয়ে বলল, ওটা কী হচ্ছে শুনি? এ হিন্দুর গ্রাম, ব্রাহ্মণ জমিদার, সে খেয়াল আছে? গো-হত্যা হলে কর্তা তোকে জ্যান্ত কবর দিবে। তর্করত্নের পায়ের কাছে ধপ করে বসে পড়ে গফুর নিজের অসহায়ত্ব বর্ণনাকালে বলল, মহেশটার দিকে একটিবার তাকিয়ে দেখুন, পাঁজরা গোনা যাচ্ছে। ঠাকুরমশাই কাহন দুই খড় ধার দিন, গরুটাকে দুদিন পেটপুরে খেতে দিই। অমনিতেই তর্করত্নের দরদ কর্পূরের মত হাওয়ায় উবে গেল। তীরবত দু পা পিছিয়ে গিয়ে বললেন, আ মর, ছুঁয়ে ফেলবি নাকি? গফুর বলল, না বাবাঠাকুর, ছোঁব কেন, ছোঁব না। কিন্তু দাও এবার আমাকে কাহনÑদুই খড়। আমরা বাপ-বেটি না খেয়ে মরি ক্ষতি নেই, কিন্তু আমার অবলা জীব কথা বলতে পারে না, শুধু চেয়ে থাকে, আর চোখ দিয়ে জল পড়ে। তাচ্ছিল্যের সাথে গফুরের অনুনয়-বিনয় উপেক্ষা করে, তর্করত্ন পাশ কাটিয়ে হন হন করে চলে গেলেন।

গ. আবুল মনসুর আহমদ সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। প্রথিতযশা সাংবাদিক-রাজনীতিক-সাহিত্যিক প্রয়াত আবুল মনসুর আহমদ ব্যঙ্গবিদ্রƒপাত্মক রচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনের দুর্নীতি ও অনাচারের নিপুণ ভাষাচিত্র অঙ্কন করে সর্বমহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। সামাজিক অসংগতি থেকে উদ্ভূত কপটাচার তাঁর ব্যঙ্গের চাবুক থেকে রেহাই পায়নি। আবুল মনসুর আহমদের সাড়াজাগানো ‘ফুড কনফারেন্স’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘রিলিফ ওয়ার্ক’ রম্যগল্পের বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘সারাদেশ বন্যায় ভেসে যাওয়ায় বন্যা-বিতাড়িত পল্লীবাসীর সাথে পশু, গরু, মহিষ, ভেড়া এমনকি বিষধর সাপও গা ঘেঁষাঘেঁষি করে উঁচু রেলসড়কে আশ্রয় নিয়ে নৈসর্গিক বিপদের সাম্য সাধন ক্ষমতা ঘোষণা করছে। আর দেশহিতৈষী পরহিতব্রতী নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীগণ ত্রাণ সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নেতৃবৃন্দ দিকে দিকে রিলিফ কমিটি স্থাপন করে ও রসিদ বই ছাপিয়ে চাঁদা সংগ্রহে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি রিলিফ কমিটির কর্মীরা গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে দলে দলে মর্মান্তিক গান গেয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে উঠেছে। ছাপোষা কেরাণী হামিদ এই প্রথমবারের মত নৈসর্গিক বিপদের ভয়াবহতা স্বচক্ষে অবলোকন করার পর সর্বস্বহারাদের দুর্দশায় মুষড়ে পড়ে। চাঁদা সংগ্রহকারীদের হাতে ৩ খানা ১০ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে আকাশফাটা জয়ধ্বনি পায় এবং একটি কেন্দ্র পরিদর্শকের দায়িত্ব মিলল তার কপালে। জীবনে এই প্রথম দফা আর্তমানবতার সেবাকার্যের সুযোগ পেয়ে হামিদ পল্লী অঞ্চলের বন্যাপীড়িত ও দুর্ভিক্ষকবলিত দেশবাসীর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সেবাকার্যকে কষ্টকর এবং স্বর্গীয় মনে করে আর্ত জনসেবায় অনভ্যস্ত হামিদ বিপুল উৎসাহে সেবাকার্যে জড়ালেও প্রথম দিনেই তার আজন্মের বিশ্বাস বালির বাঁধের মত হাওয়ায় মিশে গেল। মোটরলঞ্চযোগে ভাসমান ভেলায় বাস করা অভুক্ত কঙ্কালসার কৃষকগণের মধ্যে দু-চার সের চাল বিলি শেষে রিলিফ কর্মীদের রাত্রিকালে তাম্বুর মাঝে রাশি রাশি কম্বল-বিছানো খাটিয়ার ওপর শয়ন করে অঘোরে নিদ্রা যেতে দেখে হামিদ বিস্ময়াভিভূত হল। এহেন অমানবিক আচরণে হামিদ চরমভাবে ক্ষুব্ধ হল। কিন্তু প্রতিবাদ করার সামর্থ্য না থাকায় হামিদ ভেতরে ভেতরে গুমরে কাঁদতে লাগল। হামিদ দেখল রিলিফ ফান্ডের টাকার ৮৬% ই কর্মীদের ভরণ-পোষণে ব্যয় হচ্ছে এবং বাকি ১৪% সেবাকার্যে ব্যয় হচ্ছে। সে মনে মনে ভাবলÑএমন না হলে হয়ত বা সেবাকার্যই চলে না।

আবার রিলিফ কমিটির তাম্বুর সামনে সামান্য ত্রাণসামগ্রীর জন্য অর্ধনগ্ন স্ত্রী-পুরুষ-ছেলে-বুড়ো-বালক-বালিকাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। তারপর রেজিস্টার দেখে নাম ডাকা হয় এবং টিকিটে লাল-নীল পেন্সিলের দাগ দেওয়া হয় এবং পিছু পিছু তাদের মধ্যে পেট বুঝে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম চাল কাপড়ের পাতা আঁচলে ভিক্ষে হিসেবে দেয়া হয়। প্রতিবাদ করতে গেলে রিলিফ কর্মীদের অর্ধচন্দ্র ছাড়া বাড়তি কিছু মিলে নাÑএ সবও হামিদের চরম অসহ্য হল। একদা টিকিটের পেন্সিলের দাগ মুছে দুবার চাল নিতে যাওয়ায় এবং কর্মীদের হাতে ধরা পড়ায় তিন-চারটা ন্যাংটা ছেলেমেয়েসহ এক বুড়ো লোক ও মধ্যবয়সী স্ত্রী লোককে টেনে-হিঁচড়ে কেন্দ্রে নেয়া হয়। হামিদ দেখল, কর্মীরা বুড়োটিকে দু-চার ঘা চড়-থাপ্পড় মারল এবং কেন্দ্রকর্তা মেঘগর্জনে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ পরের দু-দিনের সাহায্য বাতিল করলেন। পর পর দু দিন অকৃতকার্য হওয়ার পর দণ্ডিত দম্পতি তৃতীয় দিবসেও কাতারের মধ্যে লুকিয়ে পড়ার পর কর্মীদের হাতে ধরা পড়ল। এতে অনাহূত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা চাল বিলি বন্ধের আদেশ দিলেন। হামিদের অনুরোধ এবং ত্রাণপ্রার্থীদের শত অনুনয়-বিনয়েও কেন্দ্র কর্মকর্তার মন গলল না। সে রাত্রে ১০/১৫ জন অর্ধনগ্ন, অভুক্ত ও ক্ষুধিত লোক রিলিফ কেন্দ্র থেকে এক এক বস্তা চাল মাথায় নিয়ে যথাশক্তি দ্রুতগতিতে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রিলিফ টাকায় কেনা টর্চে লাইটের আলোতে কর্মীরা চোরদের অনায়াসে দেখতে পায় ও ধরে ফেলে। খবর পেয়ে একপাল পুলিশসহ দারোগা অকুস্থলে হাজির হয় এবং অপরাধীদের সাপমারা করে আদালতে সোপর্দ করে। রিলিফ কার্যের মত পবিত্র ধর্ম-কর্মে বাধা দেয়ার অপরাধে মধুপুরের শতাধিক লোককে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়। হাকিমের রায় শোনামাত্রই রিলিফ কমিটির সকল মাতব্বর ও শতাধিক ভলান্টিয়ার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে রিলিফ কমিটির জয়ধ্বনি দেয়। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে হামিদ সে দিনই কেন্দ্র পরিদর্শকের দায়িত্বে ইস্তফা দিয়ে অফিসের কাজে যোগদান করে।

ঙ. কলঙ্কিত ১৫ আগস্ট পঁচাত্তর : সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বশেষ নৈশভোজের একক সঙ্গী ছিলেন ইতিহাসধিক্কৃত বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক। আরও জানা যায় যে মোশতাকই বঙ্গবন্ধুর একক সঙ্গী হিসেবে হেলিকপ্টারে সর্বশেষ ভ্রমণ করেছিলেন। অনেকের বর্ণনানুসারে, মোশতাক নিজস্ব পুকুরের কৈ ও মাগুর মাছ দিয়ে সেদিন নৈশ খাবারের আয়োজন করেছিলেন এবং জাতির জনকের সাথে একত্রে নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। অথচ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিজনে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ফণী ভূষণ মজুমদার প্রমুখের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা অবান্তর বিধায় ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করা হলো।

চ. জিনের বাদশা বনাম স্টক মার্কেট : বাংলাদেশের স্টক মার্কেটের কোটি কোটি টাকা রাতারাতি উধাও হয়ে যাওয়ার সাথে বহুল কথিত জিনের বাদশার কারসাজির বিষয়টি দেশবাসীর অজানা নয়। অঘটনঘটনপটিয়সী বাদশার ঐন্দ্রজালিক শক্তিতে অসংখ্য নিরীহ বিনিয়োগকারী যথাসর্বস্ব হারিয়ে পথের ভিখেরি হয়েছেন। আর সর্বস্বহারাদের কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছেন বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। অথচ অলৌকিক শক্তিধর বাদশাচক্র ধরাছোঁয়া এবং আইনের ঊর্ধ্বেই রয়ে গেছেন। আবার বিশেষ ক্যারিশমা-গুণে প্রভাব-প্রতিপত্তির শীর্ষেও অবস্থান করছেন।

ছ. পি কে হালদার গং : পি কে হালদার, ওয়াসার এমডি প্রমুখ সরকারি কর্মকর্তা এবং দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি তহবিলের রাশি রাশি অর্থ নয়-ছয় করে কানাডা-সুইজারল্যান্ড-আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই কোটি কোটি টাকা মূল্যের একাধিক গগনচুম্বী হর্ম খরিদ করেছেন। সাবেক পাকিস্তানি আমলের ২০ জন কোটিপতির স্থলে বর্তমানে ২ সহস্রাধিক কোটিপতির তথ্যবিবরণী পত্র-পত্রিকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর কৃষিঋণের অনাদায়ী ১/২ হাজার টাকার জন্য প্রান্তিক চাষির কোমরে দড়ি পড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অনেকে বসতবাটি খুইয়ে ছিন্নমূলের তালিকায় নাম লেখাচ্ছে। বড় অঙ্কের লুটেরারা আইনের ঊর্ধ্বে রয়ে যাচ্ছে, আর নিঃস্বরা জেলের ঘানি টানছে। আইনের শাসনকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
জ. ঋণখেলাপি : সংসদে প্রদত্ত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৯ সহস্রাধিক কোটি টাকা। এ সকল প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বর্তমানে বাড়তি ঋণের জন্য তদবির চালাচ্ছেন। হয়তো-বা ভাগ্যগুণে পেয়েও যাবেন। সত্যিই বড্ড অদ্ভুত দেশ, সেলুকাস।

আমরা হরহামেশা দেখে থাকি, হাঁটু পরিমাণ কাদা-জলে দাঁড়িয়ে সাদা বক মাছ শিকার করে। অথচ বকের পায়ে ও গায়ে কাদা লাগে না। মূলত বিচিত্র এই বিশ্বচরাচর এবং তার চেয়েও বিচিত্র আশরাফুল মাখলুকাত নামক মানব সম্প্রদায়। আর্তমানবতার সেবার জন্য বিশ্ববিধাতা মানুষকে ধরাধামে পাঠালেও মনুষ্যত্ব এবং বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ববোধ স্বার্থের যূপকাষ্ঠে আত্মাহুতি দিয়েছে। ফলে যুগে যুগে নশীবাবুর মানুষ-কোকিল, মহেশ গল্পের গো-ব্রাহ্মণ তর্করত্ন, রিলিফ ওয়ার্ক রম্যগল্পের দেশহিতৈষী পরহিতব্রতী নেতৃবৃন্দ ও রিলিফ কর্মী, শেষ নৈশভোজের একক সঙ্গী মোশতাক, জিনের বাদশা, পি কে হালাদার গং, কোটি কোটি ঋণখেলাপি প্রমুখ ভদ্রবেশী নরকের কীটগুলো সমাজে আধিপত্য বিস্তার করেছে। নাম-যুগ এবং কার্যকালে ব্যবধান থাকলেও মূলত এরা সকলেই একই ক্ষুরে মাথা মোড়ানো এবং অপরাধের সাগরে পুরোপুরি নিমজ্জিত থেকেও সর্বদা দেশের প্রচলিত আইন-কানুনের ঊর্ধ্বে রয়ে যায়। রাশি রাশি অপরাধের পাহাড় মাথায় নিয়ে প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় তারাই গফুরের মতো নিয়তিলাঞ্ছিত জনগোষ্ঠীর দণ্ডমুণ্ডের ভাগ্যবিধাতা এবং আকাশ আড়াল করা স্তুতিবাদের অধীশ্বর। সর্বাধিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সুবাদে গ্রহাণুপুঞ্জের অস্তিত্ব বিশ্ববাসী স্বচক্ষে অবলোকনের সুযোগ পাচ্ছে। অথচ মনুষ্যত্ববোধ ও নৈতিকতার মানদণ্ড নির্ধারণের যথোপযুক্ত প্রযুক্তির অভাবে এ সকল নরপশুর প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন সম্ভব হচ্ছে না। কিছুসংখ্যক নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক জীবনঝুঁকি নিয়ে প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় নামী-দামি অপরাধী চক্রের স্বরূপ আংশিক উন্মোচন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অপরাধীরা সর্বদাই পার পেয়ে যায়। তাই উপসংহারে বলতে হয়, বর্তমানের অপরাধপ্রবণতা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে দিগন্তবিস্তারী পাপ-সাগরে গোটা বিশ্বের তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক। ৩১ জানুয়ারি ২০২৩