পাবনা সমিতি আমেরিকার মনোমুগ্ধকর পিকনিক

ঠিকানা রিপোর্ট : বাংলার প্রবাদ বলে, ‘সকাল থেকেই আভাস মেলে দিনটা কেমন যাবে’। সকালটা শুরুই হয় চমৎকার এক আবহাওয়ায়। ঝকঝকে রোদ। কিন্তু দুগ্ধ হওয়ার মতো তাপ নয়। ফুরফুরে আরামদায়ক। বাইরে বের হতে মনটা চঞ্চল হওয়ার মতো। এমন দিনেই যেন পিকনিকের আমেজটা পূর্ণতা পায়।
সেই পূর্ণতা নিয়েই গত ৮ জুলাই বনভোজন সম্পন্ন করে পাবনা সমিতি আমেরিকা ইনক। বেলমন্ট লেক স্টেট পার্কের ওক প্যাভেলিয়ন। মার্সিডিস বেঞ্জ এর দুটি বিশাল লাক্সারি বাস পিকনিকের আনন্দ প্রত্যাশী নিউইয়র্কের প্রায় ২শ প্রবাসী পাবনাবাসীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। সঙ্গে আরও প্রায় ৩০/৪০টি ব্যক্তিগত গাড়ি। শুধু নিউইয়র্ক প্রবাসী বললে ভুলই বলা হবে। ওয়াশিংটন ডিসি, পেনসিলভেনিয়া, নিউজার্সি, মেরিল্যান্ড, কানেকটিকাট থেকেও অনেক পাবনাবাসী ছুটে আসেন স্বজনদের সঙ্গে বনভোজনের আনন্দে মিলিত হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে। অন্যান্য অঞ্চলেরও অনেকে যোগ দেন আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে বন্ধুত্ব কিংবা আত্মীয়তার বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে।


যারা বাসে যান তাদের নাস্তা পর্ব বাসেই সম্পন্ন হয়। গাড়িতে যাওয়া মানুষেরা পিকনিক স্পটেই সকালের নাস্তার কাজটা সেরে নেন। শুরু হয় গল্প-আড্ডা, কুশল বিনিময়। ২শ-আড়াইশ মানুষকে মনে হচ্ছিল এক পরিবারের সবাই। সবাই সবার আত্মীয়। ভালোবাসার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। মনে হচ্ছিল সকলের হৃদয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা-ইছামতির কল ধ্বনি। মনে হচ্ছিল পাবনার একটি সম্মিলিত রূপ। বেলমন্ট লেক স্টেট পার্ককে আর অচেনা কোনো জায়গা ভাবার উপায় ছিল না। হয়ে উঠেছিল একখ- মিনি পাবনা। বারবার উঠে আসছিল পাকশি ব্রিজ, ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন, এডওয়ার্ড কলেজ, জজকোর্ট, জোড়বাংলা, বনমালী ইনস্টিটিউটের কথা, রাজনীতি, সংস্কৃতির কথা, পাবনার ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা।
এই আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয় জাতীয় সংসদের পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুর উপস্থিতি। এরকম একটি পিকনিকে জাতীয় সংসদের একজন সম্মানিত সদস্যের যোগদানে উপস্থিত সবাই গর্বিত হন, সম্মানিত বোধ করেন। তিনি সকলের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে দেন। তাঁকে আর আলাদা করে অতিথি ভাবা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল তিনি আমাদের মাঝেই থাকেন। তিনি আমাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ- বেদনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী।


এরকম আনন্দ-কোলাহলের পাশাপাশি চলে শিশু-কিশোরদের দৌড়। ৫ থেকে ৮ বছরের বালকদের দৌড়ে প্রথম হয় ইহাম, দ্বিতীয় জিহাদ, তৃতীয় মাহিন। ৯ থেকে ১২ বছর বয়সের বালকদের দৌড়ে প্রথম নাঈম, দ্বিতীয় শাবিব এবং তৃতীয় লাবিব ও রোহান। বালিকাদের ৫ থেকে ৮ বছরের দৌড়ে প্রথম সামায়রা, দ্বিতীয় নাতিয়া এবং তৃতীয় বিথি ও তানহা। ৯ থেকে ১২ বছরের মেয়েদের দৌড়ে প্রথম হয় আলিজা, দ্বিতীয় নিসা হাসান এবং তৃতীয় আমরিন।
এসবের পাশাপাশি চলতে থাকে তরমুজ খাওয়ার ধুম। যতখুশি তত চিপস আর জুস। কোনো কিছুতেই যেন মানা নেই। শাসন নেই। মন খারাপ নেই। সকলের অলক্ষ্যেই সূর্য ঢলতে থাকে পশ্চিমে। পরিবেশন করা হয় সপ্ত ব্যঞ্জনে বনভোজনের আসল ভোজন। ডেজার্টে দেয়া হয় দই আর রসগোল্লা। পাবনার আদি ঐতিহ্য। মনে হচ্ছিল বহু দিনের হারানো মানুষকে খুঁজে পেয়ে পরম আদরে আপ্যায়ন করা হচ্ছে।
খাওয়ার পর খেলাধুলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব বালিশ পাচার শুরু হয়। অংশ নেন প্রায় শতাধিক মহিলা। সঙ্গে কয়েক জন কিশোরীও। অবশেষে সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ও চতুর্থ হন দিনা, শাম্মি, মুক্তা ও তানিয়া। অনুষ্ঠিত হয় র‌্যাফেল ড্র। ১০টি পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ছিল ডায়মন্ডের রিং, ৩২ ইঞ্চি টিভি, স্মার্ট ফোন।


খুব অল্প কথায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু এবং ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান। বিজয়ীদের হাতে অন্যদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন এমপি আরজু, ফজলুর রহমান, মোরশেদা হক, অধ্যাপিকা হুসনে আরা, জাহাঙ্গীর মিয়া, পাবনা সমিতি আমেরিকার প্রধান উপদেষ্টা হাজী আব্দুল আওয়াল, সভাপতি আবদুল হাদী রানা, সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান লিটন, এটিএম ফিরোজ আলম, জাহাঙ্গীর আলম, জেমস হুসাইন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবদুল হাদি রানা এবং সঞ্চালনা করেন ওহিদুজ্জামান লিটন।
কয়েকজনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ না করলে এই প্রতিবেদন সম্পূর্ণ হবে না। কেননা তাদের ব্যতিত এমন একটি সফল পিকনিকের কথা ভাবাই যেত না। আদরে, আপ্যায়নে, অভ্যর্থনায়, শৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের চাহিদা পূরণে তারা ছিলেন সদা তৎপর। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা যেন দশ হাত আর সামনে- পেছনে সবদিকে চোখ নিয়ে কাজ করে পিকনিককে সকলের মনোগ্রাহী করে তোলেন। তদের নেতৃত্বের গুণাবলী সবাইকে খুব মুগ্ধ করেছে। তারা হলেন- হাজী আবদুল আওয়াল, আব্দুল হাদি রানা, ওহিদুজ্জামান লিটন, এটিএম ফিরোজ আলম, জাহাঙ্গীর আলম। পরিশেষে সভাপতি রানার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও সবাইকে ধন্যবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে পিকনিকের সমাপ্তি টানা হয় এবং সবাই উদাস মন আর একটি বছর পর আবারও এমন পিকনিকের প্রত্যাশা নিয়ে ঘরে ফিরে যান।