বিশ্ব যদি একটি গ্লোবাল নাট্যমঞ্চ হয়ে থাকে, যত দেশের যত রাজনৈতিক দল, নাট্যগোষ্ঠী বা নাট্যদল এবং সেসব দলের নেতাকর্মীরা যদি নাটকের বিভিন্ন চরিত্র এবং কলাকুশলী হন, তবে পাবলিক নিশ্চয় দর্শক। গ্লোবাল রঙ্গমঞ্চে কত রকম যে নাটক মঞ্চস্থ হয়ে চলেছে। বিচ্ছেদ, মিলন, আনন্দ, বিষাদ, আবিষ্কার, ধ্বংস।
যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনীতির নাটক। বাংলাদেশে নির্বাচনী নাটক। করোনায় মানুষ দেখল বিরহ-বিচ্ছেদ। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন মঞ্চস্থ করছে ধ্বংসের নাটক। গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার নিউইয়র্কবাসী দেখল ট্রাম্পের এক অভূতপূর্ব নাটক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হওয়ার পর থেকেই মানুষকে নাটক দেখিয়ে আসছেন। নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন যেমন, তার পর থেকে তিনি একটার পর একটা নাটক প্রদর্শন করে চলেছেন। এমন সব নাটক যে, তাতে তিনি আমেরিকার ইতিহাস-ঐতিহ্যই পাল্টে দিতে চাচ্ছেন। ২০২০-এর নির্বাচনে তিনি এমনই নাটক দেখালেন, যে নাটক আমেরিকার ইতিহাসে তার আগে আর কেউ দেখাতে পারেনি।
২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার মানুষ ভোট দিয়ে সুস্পষ্ট ব্যবধানে ট্রাম্পকে পরাজিত করলেন। দুনিয়ার মানুষও দেখল তিনি পরাজিত হয়েছেন। এ দেশের আইন-আদালতের রায়ও আসতে থাকল ট্রাম্পের পরাজয়কে বহাল রেখে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে একের পর এক রায় এলেও আমেরিকার সব ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রাম্প নাটক দেখাতে লাগলেন। আমেরিকার নির্বাচনী ইতিহাস অস্বীকার করে নিজেকে নিজেই বিজয়ী ভাবতে শুরু করে দিলেন এবং ৬ জানুয়ারি ইলেক্টোরাল ভোটসহ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার দিন ট্রাম্প তার কট্টর সমর্থকদের দিয়ে ক্যাপিটল হিলে রীতিমতো দাঙ্গা ঘটিয়ে দিলেন। যার মাধ্যমে তিনি আমেরিকার সব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পদদলিত করে এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের জন্ম দিলেন।
গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার তিনি আমেরিকার জনগণসহ বিশ্ববাসীকে আরেকটি নাটক দেখালেন। গত নির্বাচনে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ করতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি আদালতে হাজির হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে যে বিচারক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন, তাকে ‘একজন দলবাজ’ বলে উল্লেখ করেন। আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। অবশ্য ওইদিনই তিনি জামিন নিয়ে আদালত ত্যাগ করেন। ট্রাম্প সামনে আরো কত নাটকের জন্ম দেন, কে জানে!
এদিকে বাংলাদেশে একটার পর একটা নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ হয়ে চলেছে। দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে যেন কোনো রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিকদের কোনোই মাথাব্যথা নেই। অথচ সবাই রাজনীতি করেন, নির্বাচন করেন, সরকার চালান-সবই জনগণের কল্যাণের কথা বলে। কিন্তু তাদের কর্মে, ভাবনায় জনকল্যাণের কোনো ছাপ লক্ষ করা যায় না। সাধারণ মানুষ কেবলই যেন সবার সব ধরনের নাটকের দর্শক মাত্র।
তাদের জীবন দিয়ে অন্যের দায় মেটানোই যেন একমাত্র দায়। তারা নাটক করবে, ফল ভোগ করবে সাধারণ মানুষ। তারা যুদ্ধ বাধাবে, জীবন দিয়ে তার মূল্য শোধ করতে হবে সাধারণ মানুষকে। মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের মুনাফার মূল্য চুকাবে সাধারণ মানুষ। আন্দোলনে, সংগ্রামে, সরকার পরিবর্তনে জীবন দেবে, না খেয়ে মরবে সাধারণ মানুষ। ফল ভোগ করবে অন্যরা। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই দেওয়া রাজনীতিবিদদের আশু কর্তব্য।