পারিবারিক পরিবেশে মীরসরাই সমিতির বৈশাখী উৎসব

ঠিকানা রিপোর্ট : প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন মীরসরাই সমিতির বৈশাখী উৎসব অনেকটা পরিবারিক পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানে মীরসরাই সমিতি প্রমাণ করেছে তারা অন্যান্যদের তুলনায় ভিন্ন। কারণ তাদের অনুষ্ঠানে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিলো- সমিতির কর্মকর্তা, তাদের স্ত্রী এবং সন্তানরাই এ অনুষ্ঠানকে সফল এবং স্বার্থক করেছেন। কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, স্ত্রীরা পিঠাসহ খাবার রান্না করে এনেছেন এবং সন্তানরা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। স্বামী- স্ত্রী এবং সন্তানদের অংশগ্রহণে পুরো আয়োজনটি যেনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। শুধু কী তাই- অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ দেখে মনে হয়েছে মীরসরাই সমিতিই যেনো একটি বড় পরিবার। পরিবারের উন্নতিতে পরিবারের সদস্যরা যেভাবে সহযোগিতা করেন, ঠিক সেইভাবে অনুষ্ঠানে তারা সহযোগিতা করেছেন যা প্রবাসের অন্য কোন অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা যায় না।
সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মীরসরাই
’র বৈশাখী উৎসবটি সত্যিকারের উৎসবে পরিণত হয়। সেই সাথে তারা প্রমাণ করেছেন তারা একটি পরিবার এবং সৃষ্টি করেছেন অনন্য উদাহরণ।
চমৎকার এ অনুষ্ঠান গত ২১ এপ্রিল বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের পিএস-৬৯ স্কুলের অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন সংগঠনের সভাপতি ও কম্যুনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ কাজী নয়ন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ভূঁইয়া, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান জাহাঙ্গীর, ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ার হোসেন, সাবেক সভাপতি মনির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ডা. এএসএম করিম, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মাহতাব উদ্দিন মিথু, সদস্য সচিব মেসবাহউল আলম, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, মিল্টন ভূঁইয়া, প্রফেসর ইকবাল, আসিফুর রহমান, আরিফ হাসান আরিফ, কায়ছার চৌধুরী, বেলাল আহমেদ, মোর্শেদ রিজভী, মাসুদ কামাল, আশরাফুল লিটন, নাসির উদ্দিন, এসএম মোর্শেদ প্রমুখ।


সভাপতির বক্তব্যে কাজী নয়ন সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং প্রবাসে জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা যদি আমাদের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলো নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে না পারি, তাহলে আমাদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। কেননা, একটি জাতির সবচেয়ে বড় পরিচয় বহন করে তার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য।
সাধারণ সম্পাদক ডা. এএসএম করিম সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, প্রতি বছরই বৈশাখ আমাদের মাঝে আসে। আমরা এ দিবসটিকে পালন করি। আমাদের আজকের অনুষ্ঠান সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ভূঁইয়া নতুনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যারা বা যেসব গৃহিণী খাবার রান্না করে এনেছেন, তাদের ধন্যবাদ। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের আরো বেশি করে অনুষ্ঠানে আনার আহ্বান জানান তিনি।
মীরসরাই সমিতির বৈশাখী উৎসবটি ছিলো ভিন্নতর। কারণ অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই বাঙালি সাজে অনুষ্ঠানে এসেছেন এবং নিজেরাই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানে বৈশাখ নিয়ে প্রবাসে জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্মের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। বিচারক ছিলেন কর্মকর্তা এবং তাদের স্ত্রীরা। আরো ছিলো যেমন খুশি তেমন সাজো। নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা বাঙালি সাজে বাঙালি বাবু এবং বাঙালি রমণী সেজে আসে।

আকর্ষণীয় পর্বে ছিলো প্রায় ৩০ জন মহিলার অংশগ্রহণে পিঠা প্রতিযোগিতা। এতে সংগঠনের কর্মকর্তাদের স্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। এ প্রতিযোগিতায় যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারা হলেন- মিনা (প্রথম), মিসেস মেসবাহউল (দ্বিতীয়) এবং মিসেস নীলি (তৃতীয়)।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে সিতাতুন তুসি, দ্বিতীয় সানজিদা এবং তৃতীয় নাবিহা। যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতায় প্রথম তাইবা, দ্বিতীয় তাসলিমা এবং তৃতীয় আলিশা রহমান। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন সংগঠনের উপদেষ্টা, কর্মকর্তা এবং বিচারকমন্ডলীর সদস্যরা।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে যারা বিভিন্ন আইটেম রান্না করে এনেছেন, তাদের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। সেই সাথে সবাকেই সান্তনা পুরস্কার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী শাহ মাহবুবসহ অন্যান্য শিল্পীরা। আকষর্ণীয় র‌্যাফেল ড্রর বিজয়ী ভাগ্যবানদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।