পারিবারিক সহিংসতার মূল কারণ অসহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের অভাব

ঠিকানা রিপোর্ট : মানুষের ধৈর্য দিন দিন কমছে। এ কারণে মানুষ অল্পতেই রেগে যাচ্ছে। একে অপরকে সম্মান করছে না। অসহিষ্ণু আচরণ করছে। এসব থেকে দ্বন্দ্ব ও বিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের পরিণতি হচ্ছে খুবই খারাপ। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব। ভাঙনও হচ্ছে। পারিবারিক সহিংসতার কারণে অনেকে পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে পুলিশের হাতে তুলে দিতেও দ্বিধাবোধ করছে না।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে পুলিশে কল দেন। পুলিশ এসে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। পরে স্ত্রী বুঝতে পারেন, কাজটি তার ঠিক হয়নি। এরপর অনেক চেষ্টা করেন স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে। স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলাও তুলে নিতে চেষ্টা করেন। স্বামীকে ছাড়াতে তাকে অনেক বেগ পোহাতে হয়। নষ্ট হয় সময় আর অপচয় হয় অর্থের।
সূত্র জানায়, কেবল যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে এমন নয়, অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যেও বিবাদ হচ্ছে। এর জের ধরে পুলিশকে কল করার নজিরও রয়েছে।
এ ব্যাপারে কমিউনিটির নেতা মাজেদা উদ্দিন বলেন, দিন যত যাচ্ছে পারিবারিক সহিংসতা তত বাড়ছে। এর কারণ মানুষের ধৈর্য কমছে। মানুষের মধ্যে নানা রকম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে পারিবারিক সহিংসতা অনেক বেড়েছে। ফলে অনেক পরিবারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমার জানামতে এমন অনেক পরিবার আছে, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার জের ধরে দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। একপর্যায়ে স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সন্তানদের নিয়ে দূরে চলে যান। এভাবে সামান্য ভুল-বোঝাবুঝি কিংবা অভিমানের কারণে অনেক সংসারই ভেঙে যাচ্ছে। এতে সন্তানেরা বঞ্চিত হচ্ছে বাবা কিংবা মায়ের সান্নিধ্য থেকে। স্বামী-স্ত্রী যদি অভিমানটুকু ভুলতে পারতেন, তাহলে এমনটা হতো না।
মাজেদা উদ্দিন আরো বলেন, পারিবারিক সহিংসতা কমানোর জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে। পারিবারিক সহিংসতা কমানোর জন্য সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। সম্মান বজায় রাখা জরুরি। পরিবারকে সময় দেওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কমিউনিটির নেতা মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, পারিবারিক সহিংসতা এখন সবচেয়ে প্রধান ও বড় সমস্যা। কারণ পারিবারিক সহিংসতার পরিণতি খুবই খারাপ। অনেকেই রাগে-ক্ষোভে প্রতিশোধ নেন। সবাইকে মনে রাখতে হবে, সাময়িক রাগ প্রশমন করতে পারলে সবার জন্যই মঙ্গল। পারিবারিক সহিংসতা নিরসনের জন্য কমিটমেন্ট, কমিউনিকেশন, কেয়ার অ্যান্ড কম্প্রোমাইজÑএই চারটি বিষয় থাকতে হবে। তালে পারিবারিক সহিংসতা রোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, সকল বয়সীরাই পারিবারিক সহিংসতা করছে বা শিকার হচ্ছে। যেমন আমার কাছে ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আসেন ডিভোর্সের জন্য। আমি তাকে বললাম, আর কত দিনই-বা বাঁচবেন, এখন কেন ডিভোর্স করবেন। বরং মিলেমিশে থাকুন। কিন্তু কেউই ছাড় দিতে নারাজ। দেখা গেছে, তাদের পরিবারের সমস্যা এত বেশি যে তারা বিষয়টি আর মেনে নিতে পারছেন না। এই পরিবারের সন্তানেরাই তাদের ডিভোর্সের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, পরিবারের ক্ষেত্রে সমঝোতার মানসিকতা থাকতে হবে। ধৈর্য বড় জিনিস। সহিষ্ণুতা থাকতে হবে। পুলিশকে কল করা মানেই একটি লিগ্যাল সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে পড়া। তাই পারিবারিক বিষয়ে পুলিশকে কল না করাই উত্তম। পারিবারিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা মিলেই এর সমাধান করা উচিত।